পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এখন দেশে ভয়ের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জনগণকে সাহস যোগাতে হবে। জনগণ সাংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক। জনগণের এই সাংবিধানিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, ভয়ভীতি ও সহিংসতার পরিস্থিতি নিয়ে ‘নাগরিক সমাজের পক্ষে আমরা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাগরিকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন।
অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত আমলে দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে, তাতে সবগুলোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকারের দাবি, তাদের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। এটা এই সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে যেভাবে সরকারের ভূমিকা পালন করা উচিত তা সরকার করছে না, সরকার তার উল্টোটা করছে।
তিনি বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য দল বা জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছে না। গত কয়েক দিনের সংবাদে দেখা গেছে, সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া আর কোনো দল, জোট বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় যে প্রচার তা তারা চালাতে পারছে না। অনলাইনেও বিরোধী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নানাভাবে হামলার শিকার হচ্ছেন। একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার তৈরি হয়েছে। যে কোনো মানুষ গুম হতে পারে, ক্রসফায়ারে দেওয়া হতে পারে, হামলা-মামলা হতে পারে, নারী-শিশু-ধর্মীয়-নৃতাত্তি¡ক সংখ্যালঘু একের পর এক নির্যাতন যা হয়েছে, তাতে ভয়ের বাংলাদেশ হয়েছে, নিরাপত্তাহীনতার শাসন কায়েম হয়েছে। নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না করা হলে, একটা দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছদ্মবেশে রাজতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলে যাবে। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই না।
আনু মুহম্মদ বলেন, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম এই সকল মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া জারি আছে। নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই আইন পাশ হয়েছে। এই আইনের কারণে, পাশাপাশি বিধি-নিষেধ, মৌখিক নির্দেশ-আদেশ এবং হয়রানির কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো খুবই ভয়ভীতির মাঝে কাজ করছে তা আমরাও বুঝতে পারি।
আইনজীবী শাহদিন মালিক বলেন, আইনের শাসনের এবং নীতি নৈতিকতার প্রতি চরম অশ্রদ্ধা বোধ থেকেই বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলার মতো কাজ হচ্ছে। আমরা আহŸান জানাই এবং চাপ প্রয়োগ করি যাতে প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছুই নেই। আমরা কয়েক দিন ধরে জেনেছি, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে, সহিংসতা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ একটু দূরেই দাঁড়িয়ে দেখছে। অন্যদিকে এও দেখা যাচ্ছে, সরকারি সমর্থক প্রার্থীরা প্রচারে গেলে শত শত পুলিশ থাকছে, সরকারি গাড়িসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটা করা হচ্ছে। এ রকম একটা অশ্রদ্ধা যদি না থাকত, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতো। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ইসি কেন এগুলো দেখে না?
ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। অথচ জবাবদিহিমূলক স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে যে বিদেশি বিনিয়োগের পয়সা- বা সমর্থন আশা করে এই সরকার এগোতে চাচ্ছে, সেটা ব্যর্থ হবে। সরকার উন্নয়নের কথা বলছে, তবে এই উন্নয়নের ফল কোথায় নেবে-তা জানি না। জবাবদিহি না থাকলে একদিন না একদিন তরুণ-তরুণীদের মুখোমুখি জবাবদিহি দিতে হবে।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, দেশের সংবিধান আমাকে যে অধিকার দেয় তা আদায় করে নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। তার সঙ্গে আরেকটি জিনিস সেটা হচ্ছে, সাহস জোগানো। এখন দেশে ভয়ের পরিস্থিতি রয়েছে। এটা আমরা সবাই জানি। এই পরিস্থিতিতে আমরা জনগণ যে একা না, তা সবাইকে বোঝানোর প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকেই মনে করছে কী হয়, কী হবে, প্রশাসন তাদের হাতে। এত রকমের ক্ষমতা যেখানে সেখানে তারা যা খুশি করতে পারে। তবে জনগণের হাতে যে সবচেয়ে বড় ক্ষমতা তা বোঝানোর দরকার। জবাবদিহি যে একটি প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেকোনো সরকারই থাকুক না কেন সে জানবে, তার ওপর খবরদারি, নজর আছে এবং যা খুশি করে পার পেয়ে যাবে না। এবার ভোট দানের মাধ্যমে জনগণকে তাদের সেই ক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।
নির্বাচনের সময়ে সাংবাদিকদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে শহীদুল আলম বলেন, আপনারা জানেন আমাদের ছবি তোলা, রিপোর্টিংয়ের ব্যাপারে অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞা আছে, সরকারের যদি ভয়ই না থাকে তাহলে নিষেধাজ্ঞা দেবে কেন। সুষ্ঠুভাবে, অবাধভাবে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সকলে রিপোর্ট করবে, ছবি তুলবে। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভয়টি ইঙ্গিত করে। আমাদের জোরালোভাবে দাবি তোলা দরকার সাংবাদিক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি এবং জনগণকে জানানোর সুযোগ থেকে আমি যেন বঞ্চিত না হই।
ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, শিল্পী, শিক্ষকসহ নাগরিক সমাজের ২৯জন প্রতিনিধির পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, স্বাধীনভাবে দেশি এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের যথাযথ ভূমিকা পালন করার ব্যবস্থা, হামলা, মামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা বন্ধ করা, নির্বাচনের সময় ধর্মীয়-সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সকল প্রকার যোগাযোগে বাধা দেওয়ার বদলে উন্মুক্ত করা। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।