Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটাধিকার প্রয়োগে মানুষ উন্মুখ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

গণতন্ত্রকামী মানুষ সংশয়াচ্ছন্ন অবস্থাতেও জাতীয় নির্বাচনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আর একদিন পরই ভোটের মাঠের দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যাবার কথা বলেছেন ভোটপন্ডিত ও বিশ্লেষকগণ। সারাদেশেই কমবেশি যে শঙ্কা, ভয় ও ভোটের পরিবেশ প্রতিক‚লে মনে হচ্ছে দেশপ্রেমিক ও শান্তির প্রতীক সেনাবাহিনী নামার পর সবকিছু ছাপিয়ে ভোটে মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত যোগদান হবে। মানুষের তীব্র অনুভূতি রয়েছে ভোট নিয়ে। মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। বিশেষ করে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ভোটকেন্দ্রে ছুটবেন নতুন তরুণ ভোটার ও মহিলারা। তারা মুখিয়ে রয়েছেন ভেতরের খবরটি এরকমই।
ভোটারদের ভাবনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, যা কিছুই হোক না কেন, সেনাবাহিনী নামার পর এবারের নির্বাচনে অন্তত ভোটকেন্দ্র দখল হবে না। তাদের বিশ্বাস, ভোটাররা নির্ভয়ে নিবিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে তেমন পরিস্কার আভাস পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকদের কথা, ভোট রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও সৌহার্দ্যপুর্ণ পরিবেশ অনুপস্থিতি রাজনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষকে দারুণভাবে পীড়া দিয়েছে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশী তাকে দেবো’-এক্ষেত্রে বাধা দেওয়া কারো অধিবার নেই। রাজনীতি সচেতন মানুষের ভাবনায় জোরশোরে উচ্চারণ হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে রাজনীতির সংস্কৃতি নেই, নেই সৌহার্দ্যতা। তারপরেও বলতে হয়, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাই পারে সাধারণ মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে। এই বিশ্বাস নিয়ে জনগণ তাদের পছন্দসই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার ব্যাপারে ন্যুনতম ছাড় দিতে রাজি নয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জনকল্যাণে দায়দায়িত্ব থাকে না। জননসাধারণের প্রতি কর্তব্য পালনে হয় না যতœবান। তাই তো ভোটের ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহ জনগণের।
দেশের ভোট রাজনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা ও বিচার-বিশেষণ চলছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সবখানে সমানতালে। তৃণমূলপর্যায়েও ভোট রাজনীতির উত্তপ্ত হাওয়া বইছে অত্যন্ত জোরালোভাবে। প্রতিটি শহর, বন্দর, গ্রাম, মাঠ-ঘাট, অলিতে গলিতে এমনকি ঘরের কোণে চলছে একই আলোচনা, সেটি হচ্ছে ভোট। ভোট নিয়ে রীতিমতো উম্মাদনা শুরু হয়েছে। জয় পরাজয়ের হিসাব মাথায় রেখে প্রধান দুই নির্বাচনী জোট মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের কাছে রাজনীতির সরল পাটিগণিত এখন অনেকটাই গরল। দলমত নির্বিশেষে সবার কথা, নির্বাচন আর কোনোভাবেই যেন অনিশ্চয়তার দোলাচলে আবদ্ধ না হয়। ভোট হতে হবে এবং শান্তিপুর্ণখাবেই।
বর্তমান মাঠচিত্র হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল অনেক বেড়ে গেছে। ক’দিন আগেও হামলা মামলা প্রশাসনিক হয়রানী, জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে অনেক এলাকার অনেক নেতা যারা চলতেন পিঠ বাচিয়ে, অনেকটা তারা যেন পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেয়েছেন। আবার সরকারী দল ও বিরোধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা কর্মী নানা ক্ষোভ, কোন্দল ও অবমূল্যায়নে চুপচাপ, তারা সবাই নতুন উদ্যোমে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। রাজনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না গ্রাম শহরের সহজ সরল শান্তিপ্রিয় মানুষের কথা, ‘আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের স্বার্থে আসলে রাজনীতি হয় না। যারাই এমপি হন, তাদের অনেকেই এলাকার স্বার্থের চেয়ে নিজের আখের গোছানোর দিকেই নজর থাকে বেশী। জনকল্যাণের রাজনীতি আসলে নেই বললেই চলে। তবুও অন্তত অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট হলে ভোটাররা তাদের ভোট দিয়ে যাকে নির্বাচিত করতে পারেন, তার কাছে সুখ দুঃখের কথা বলার সুযোগ থাকে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমাদের চট্ট্রগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, নোয়াখালী, বগুড়া, সিলেট, দিনাজপুর, খুলনা, কক্সবাজার, ফেনীসহ দেশের ভিন্ন অঞ্চলের রিপোর্ট পর্যােেলাচনা করে দেখা গেছে, সবার কাছ থেকেই জনসাধারণের একটা মনোভাব পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ভোটাররা উন্মুখ হয়ে আছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। আসলেই ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে মানুষের ঢল নামবে বলে সুস্পস্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাদের কথা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্ব›দ্বীপূর্ণ। দুই নির্বাচনী জোটই অস্তিত্বের লড়াই হিসেবেই দেখছে। সেই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখেই তারা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। কোন আসনে কার কার সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে এটি মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে।



 

Show all comments
  • রুবেল ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৪ পিএম says : 0
    দেশে এখনোও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান নয়!২৪ তারিখ সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরেও যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হয় তাহলে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কারণ আওয়ামীলীগ বলেছে কেন্দ্র রক্ষা করবে আর বিএনপি বলেছে পাহারা দিবে আর তাতে সংঘাত অনিবার্য!সাধারণ জনগণ শান্তিপ্রিয় এরা চায়না সংঘাত, চায়না রক্তপাত তারা চায় শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। এখন সেনাবাহিনী তাদের শেষ ভরসা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ