Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ স্বৈরশাসনের অবসান চায়

পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দরের পথসভায় মির্জা ফকরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ এখন স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি চায়, মানুষ অধিকার চায়, কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য চায়, শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরী চায়, মানুষ এখন স্বৈরশাসনের অবসান চায়। তাই দেশকে স্বৈরশাসন থেকে রক্ষা করতে তিনি আগামী ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষ মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানান। প্রশাসনের লোকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কোন দল বা ব্যক্তির কর্মচারী নন। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন না। নিরপেক্ষ থাকুন, আপনারা এদেশের নাগরিক, বাঙালী মায়ের সন্তান। একইসাথে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কোন উস্কানি বা সংঘর্ষে না জড়িয়ে ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করুন। ভোট প্রদান ও গণনা শেষে ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাখুন। কেন্দ্র ভিত্তিক ভোটের ফলাফল শিট বুঝে নিবেন।
গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) নির্বাচনী এলাকা পার্বতীপুর পৌর শহরের বাস টার্মিনালে নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনী পথসভায় পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর-৫ আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহবায়ক এজেডএম রেজওয়ানুর হক, দিনাজপুর-৪ আসনের মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান, রংপুর-৫ আসনের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরদার, সাবেক সংসদ সদস্য রেজিনা ইসলাম, ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল খুরশিদ আলম মতি, উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন, বিএনপি নেতা জাকারিয়া বাচ্চু ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরপর তিনি দিনাজপুর-৪ আসনের ঘুঘুরাতলী এলাকায় বক্তব্য রাখেন।
এর আগে তিনি সৈয়দপুর বিমান বন্দরে নেমে পার্বতীপুর বাস টার্মিনালের পথসভায় উপস্থিত হন। মির্জা ফখরুলের আগমনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পার্বতীপুরসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ সমাবেশস্থলে সমবেত হতে থাকেন। নির্ধারিত সময় দুপুর সাড়ে ১২টার আগেই টার্মিনাল এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। পথসভা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সময় স্বল্পতায় তিনি মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ৫ মিনিটের বক্তব্যেই মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। গগনবিদারী সেøাগানে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এখান থেকে তিনি চিরিরবন্দরের ঘুঘুরাতলী’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
জনস্রোত ঠেলে মির্জা ফখরুল যখন ঘুঘুরাতলী এলাকায় আসেন তখন মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার দেখে তিনি নিজেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এই জনস্রোত কেবল শ্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তিনি সাধারণ জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের এই ঔৎফুল্ল আমাকে নিশ্চিত করেছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বতর্মান জালিম সরকারের পতন অনিবার্য। তিনি সাবধান করে বলেন, সরকার বুঝে গেছে এদেশের মানুষ কী চায়। তাইতো শত ষড়যন্ত্রের পর এখন ব্যালট পেপার ছাপানো ও মুজিব কোট পরে ভোট কারচুপির কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। মুজিব কোট পরে নয় বরং মুজিব কোটধারীদের হাত থেকে নিজেদের অধিকার রক্ষায় জনগণ সোচ্চার হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১০ বছর থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেননি। তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, কী অপরাধ করেছিল সেই মা, যার সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে, গত ৫ বছর থেকে সেই সন্তানের কোন খোঁজ নেই। কী অপরাধ করেছে সেই বোন, যার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ নেই। কী অপরাধ করেছে সেই সন্তান যার পিতার কোন খোঁজ নেই। এখানেই শেষ নয়, বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে নির্যাতন করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন মানুষ এই খুন, গুম, নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি চায়। আমাদের মা-বোন নিরাপত্তা চায়, বেকারেরা চাকুরী চায়, কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য চায়, শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরী চায়, আমরা নাগরিকরা শান্তিতে বাস করতে চাই। এই খুন-গুম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে, নাগরিককে শান্তি দিতে হবে, এই স্বৈরাচারী শাসন বন্ধ করতে হবে। এই জন্য আগামী ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিতে হবে।
তিনি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের কোন পরিবেশ তৈরী হয়নি। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে একটি ঠুটো জগন্নাথ করে রেখেছে, সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে এবং ধানের শীষ মার্কার মিছিল-মিটিংয়ে হামলা করছে। তিনি আইন-শৃংখলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা কোন বিশেষ দলের কর্মকর্তা-কর্মচারী নন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনারা জনগণের দায়িত্ব পালন করবেন, কোন বিশেষ দলের নয়। বক্তব্য শেষে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এজেডএম রেজওয়ানুল হক, আক্তারুজ্জামান মিয়া ও মোহাম্মদ আলী সরদারকে হাত তুলে পরিচয় করে দেন।
এদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আগমন ও নির্বাচনী পথসভাটিকে সফল করতে সকাল থেকে পার্বতীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পথসভাটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। দলের মহাসচিব যখন সভাস্থলে উপস্থিত হন সেই সময় সভাস্থলটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং মুহুর্মুহূ সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নির্বাচনী জনসভাটি। সভা শেষে তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
ভোট দিয়ে ভোট পাহারাও দিতে হবে
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোট চুরি করতে আওয়ামী লীগ ওস্তাদ। এই কাজে অনেক দক্ষতা তাদের। ভোটের আগের রাতেই নাকি ব্যালট বাক্স ভরে রাখবে তারা। আগের রাত থেকেই পাহারা দিতে হবে কেন্দ্র। শুধু ভোট দেয়া নয়, ভোট দিয়ে ভোট পাহারাও দিতে হবে, আর ভোট চোরদের প্রতিহত করতে হবে। গতকাল শনিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৯ মাইল নামক স্থানে নির্বাচনী গণসংযোগকালে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ভোটের দিন ক্ষমতাসীনদের ‘কারচুপি’ ঠেকাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ‘পাহারা’ বসানোর আহŸান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সারা দেশে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ইসি এখনও সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। শুধু একটি দল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। ভোটের মাঠে কী হচ্ছে তারা কি দেখতে পাচ্ছেন না? তবে যত কিছুই করুক তারা ভোটের দিন কোনো বাধা মানবেন না। ভোট দিয়ে গণনা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ‘বিজয় নিয়ে’ তারপর ভোটকেন্দ্র ছাড়বেন।
ইসিকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলি, কোমর সোজা করে দাঁড়ান। সংবিধান ও রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব আপনি পালন করুন। নিরপেক্ষভাবে যেন নির্বাচন হয়, জনগণ যাতে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় পদত্যাগ করুন, না পারলে চলে যান। এদেশের মানুষ এ নির্বাচনে কোনো অন্যায় মেনে নেবে না।
দুর্নীতি মামলার সাজা নিয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ভোট চেয়ে ফখরুল বলেন, আপনার একটা ভোটে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। এটা মনে করে বাড়ির সবাইকে, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর সকালে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। আমাদের লড়াই ভোটের লড়াই। আমাদের লড়াই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের।
ফখরুল আরো বলেন, ভোট দেওয়াটা আমার হক, আমার অধিকার। ভোট আমি দেব এখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। আজকে এখানে এসেছি আমরা অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে। এই বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমাদেরকে বিজয়ী করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের, এটা মনে রাখতে হবে।
এসময় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিজিবি ভাইদেরকে, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর ভাইদেরকে বলতে চাই, আপনারা নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন। আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ যে আপনারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। এটাই জাতি আশা করে, এটাই আশা করে আপনারা জনগণের স্বার্থে থাকবেন, জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে মাত্র ছয় দিন। এই ছয় দিনে মানুষকে সংগঠিত করুন। মায়ের জন্য, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে বুক সোজা করে দাঁড়ান। আমার দাবি আমি আদায় করে নেব। এসময় অন্যান্যের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, মামুনুর রশিদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ