পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনী প্রচারণায় গতকাল দেখা গেছে অন্যরকম দৃশ্য। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে জুমাবার হওয়ায় রাজধানী ঢাকায় জুমার নামাজের আগে ও পরে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা তৌহিদি জনতার হাতে হাতে নৌকা-ধানের শীষসহ বিভিন্ন প্রতীকের লিফলেট বিলি করছেন। মসজিদ চত্বরে হেঁটে হেঁটে গণসংযোগ করেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। দৃশ্য দেখা গেছে উৎসবমুখর। নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার লিফলেট নিচ্ছেন এবং পড়ছেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, হাইকোর্ট জামে মসজিদ, মহাখালীস্থ মসজিদে গাউসুল আযম, মিরপুর আকবর কমপ্লেক্স মসজিদ, গোলাপশাহ জামে মসজিদ, গুলশান জামে মসজিদসহ রাজধানীর মার্কেট-অলিগলি, পাড়ায়-মহল্লার হাজার হাজার মসজিদে দেখা গেছে এই চিত্র।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশালসহ বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজার ও গ্রামপর্যায়ের মসজিদগুলোর সামনে নির্বাচনী প্রচারণার দৃশ্য দেখা গেছে। ইনকিলাবের আঞ্চলিক, ব্যুরো ও জেলা অফিসে কর্মরত সাংবাদিক ও উপজেলা, পৌরসভা-পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা কর্মীবাহিনী নিয়ে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের মধ্যে নিজ নিজ প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। নামাজ পড়তে আসা টুপি মাথায় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত মুসল্লিরা সেগুলো আগ্রহভরে নিচ্ছেন। এ সময় তারা তৌহিদি জনতা, আলেম-ওলামা মুসল্লিদের সহযোগিতায় চাচ্ছেন। প্রার্থীরা এলাকার সমস্যা নিরসন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন, স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা-মক্তব উন্নয়নে ওয়াদা করছেন। অধিকাংশ প্রার্থী ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকান্ড যাতে না ঘটে, সে অঙ্গীকার করে ইসলামের আদর্শ, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। জেলা, উপজেলা-পর্যায়ে মসজিদ চত্বরে দেখা যায় প্রার্থীরা ভক্তিভরে মসজিদের ইমাম, পীর-মাশায়েখ, বুজুর্গানে দ্বীনদারদের কাছে দোয়া নিচ্ছেন। কেউ কেউ নামাজ শেষে নিজেদের বাবা-মায়ের কবর ও স্থানীয় কবর জিয়ারত করছেন।
রাজধানী ঢাকায় দেখা গেল, ঢাকা-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাস নামাজ শেষে মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগের সিআইডি গলিতে লিফলেট বিতরণ করছেন। মানুষ আগ্রহ নিয়ে সে সব নিচ্ছেন, কেউ কেউ আগ্রহ দেখিয়ে লিফলেট নিচ্ছেন। পুলিশ সদস্যদের অনেকেই দেখা গেল জুমার নামাজের পর ধানের শীষের লিফলেট নিচ্ছেন এবং দাঁড়িয়ে পড়ছেন। ইনকিলাব প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। আর নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামবে এ খবর প্রচার করছে। কথা বলে জানা যায়, সারাদেশের ভোটাররা মনে করছেন; সেনাবাহিনী নামলে পুলিশ পক্ষপাতিত্ব আচরণ করতে পারবে না। তখন সর্বস্তরের মানুষ প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়বে।
রাজধানীর মসজিদে মসজিদে স্বতঃস্ফূর্ত প্রচারণা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দলের প্রার্থীগণ মসজিদমুখী হচ্ছেন। গতকাল জুমার দিনে মসজিদে মসজিদে প্রার্থীদের দলীয় মার্কা সম্বলিত লিফলেট স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিতরণ করতে দেখা গেছে। প্রার্থীরা তাদের দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন আসনের অলি-গলিতে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করে দোয়া ও ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। জুমার নামাজের সময়ে প্রার্থীরা স্থানীয় বড় মসজিদের উপস্থিত হলে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করে দোয়া ও ভোট চান। প্রার্থীগণ নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মুসল্লিদের মন জয়ের লক্ষ্যে গতকাল জুমার সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা রাজধানীসহ অন্যান্য মসজিদ মসজিদে গিয়ে দলীয় মার্কার লিফলেট বিতরণ করেছেন। বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে মুসল্লিদের হাতে হাতে লাঙ্গল মার্কা প্রার্থীর লিফলেট বিতরণ করে দোয়া ও ভোট চাইতে দেখা যায়।
ঢাকা-১৪ আসনের মহাজোট প্রার্থী আসলামুল হকের সমর্থকরা বাদ জুমা মিরপুর আকবার মসজিদ (মাজার) এলাকায় মুসল্লিদের হাতে নৌকা মার্কার লিফলেট বিতরণ করে দোয়া চাইতে দেখা গেছে। ঢাকা-৮ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের লোকজন গতকাল জুমার নামাজের সময় শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাস মার্কেট মসজিদের মুসল্লিদের মাঝে নৌকা মার্কার লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। একই আসনের বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সমর্থকরা জুমার নামাজের সময়ে শান্তিনগর ও চামেলীবাগ মসজিদ এলাকায় মুসল্লিদের মধ্যে ধানের শীষের লিফলেট বিতরণ করছেন। ঢাকা-৭ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও পীর সাহেব চরমোনাইয়ের প্রার্থী আলহাজ আব্দুর রহমান ও তার দলীয় কর্মীরা গতকাল নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, বিডিআর গেট, ও শেখসাহেব বাজার বায়তুস সালাম জামে মসজিদের মুসল্লিদের কাছে হাতপাখা মার্কা লিফলেট বিতরণ করে দোয়া ও ভোট চান। মিরপুর-১৪ আসনের জাকের পার্টির প্রার্থীর গোলাপ ফুল মার্কা লিফলেট দলীয় কর্মীরা গতকাল মিরপুর ভাসানটেক টিনসেট কলোনি আমান মসজিদ এলাকায় মুসল্লিদের মধ্যে বিতরণ করেন।
চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে ইসলামী স্পিরিট
চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শফিউল আলম জানান, ভোটের আর মাত্র ৯ দিন হাতে থাকতে গতকাল পবিত্র জুমাবার বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে পুরোদমে ইসলামের স্পিরিট নিয়েই আলোকিত ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ভোট রাজনীতির ময়দান। অন্য দিনের তুলনায় ভয়ভীতি শঙ্কাহীন শান্তির আমেজে চারিদিকে আপামর জনগণ স্বস্তি প্রকাশ করেন। মহাজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা গ্রাম-পাড়া-মহল্লার প্রতিটি মসজিদ চত্বরে যান। তারা দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালান। হেঁটে হেঁটে গণসংযোগ করেছেন হাট-বাজার, পাড়ার ক্লাব-সমিতি এবং ভোটারদের বাড়িঘরে। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, ছাতা, হাতপাখা, আপেল মার্কার প্রার্থীরা যার যার আত্মীয়-স্বজন, কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ইসলামী বেশ-ভ‚ষায় সকালেই জুমার প্রস্তুতি সহকারে মসজিদে মসজিদে হাজির হন। টার্গেট অগণিত মুসল্লি ভোটারের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ। নামাজের আগে-পরে সালাম ও কুশল বিনিময়, কোলাকুলিতে ব্যস্ত থাকেন দিনভর। সর্বত্র মসজিদের ভেতরে-বাইরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। জুমার খুতবা ও মোনাজাতে খতিব-ইমামগণ ৩০ ডিসেম্বর দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন সম্পন্ন হয় এবং সন্ত্রাস, হানাহানি, রক্তপাত থেকে দেশ ও জাতির সুরক্ষার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে আকুল ফরিয়াদ করেন।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দ মসজিদের খতিব-ইমাম, ওলামা-মাশায়েখ, মুসল্লিদের কাছে গিয়ে দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। পথেঘাটে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী, সমর্থকদের সাথে দেখাদেখি হয়ে গেলে বৈরিতা ভুলে হাসিমুখে হাত মেলান। তারা আলেম-ওলামা মুসল্লিদের সহযোগিতায় এলাকাবাসীর সমস্যা নিরসন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন, স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা-মক্তব উন্নয়নে ওয়াদা করেন। জয়ী হলে তারা ইসলামের আদর্শ, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে সমাজে তার প্রচার-প্রসারের কথা দেন। ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকান্ড যাতে না ঘটে, এ ব্যাপারে সংসদে ও সমাজে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালনের অঙ্গীকার দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই ভক্তিভরে পীর-মাশায়েখ, বুজুর্গানে দ্বীনদারদের দরবারে গিয়ে দোয়া চেয়েছেন। বাদজুমা প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা তাদের মরহুম বাব-মা, আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করেন। হজরত শাহ আমানত (রহ.), বদরশাহ (রহ.), মোল্লা মিছকিন শাহর (রহ.) মাজারে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বারো আউলিয়ার পুণ্যভ‚মি এবং বা’বুল ইসলাম (ইসলামের প্রবেশদ্বার) বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম। সর্বত্র ইসলামী ভাবাদর্শ সমুন্নত রেখেই জুমার দিনে ছুটির সুবাদে আরো জোরদার হয় নির্বাচনী প্রচার-গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, মিছিল, মাইকিং। ইসলামের সুমহান চেতনায় উদ্ভাসিত হয় শহর-নগর-বন্দর, গ্রাম-জনপদ। বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা আলাপচারিতায় বলেছেন, এ দেশের শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের আদর্শ চিন্তা-চেতনার প্রতি ষোলোআনা সম্মান ও বিশ্বাস অটুট রেখেই রাজনীতি চলবে। নয়তো অচল রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখান করবে। তৌহিদি জনতার সমর্থন লাভের জন্য আওয়ামী লীগের মহাজোট আর বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দুই পক্ষই মাঠে সমানে তৎপর। এ দেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ। শুধু তাই নয়ম ধর্মীয় অধিকারের বিষয়েও অত্যন্ত সজাগ। ইসলামী ভাবাদর্শ-বিরোধী কেউ কোনো কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে তারা অচিরেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস তার সাক্ষী।
জুমার দিনটিতে ইসলামের পূর্ণ স্পিরিটে উজ্জীবিত হয়ে ভোটের প্রচার-গণসংযোগে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বন্দরনগরীর কোতোয়ালী-বাকলিয়া, ডবলমুরিং-হালিশহর, বন্দর-পতেঙ্গা, মহানগরী সংলগ্ন বোয়ালখালী-চান্দগাঁও, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই, ফটিকছড়ি, স›দ্বীপ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বাঁশখালী এবং তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি আসনের বিভিন্ন এলাকা। পার্বত্য জনপদের প্রতিটি মসজিদ চত্বর ভোটের প্রচার-গণসংযোগে সারাদিনই সরগরম থাকে। পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি-উপজাতি, ধর্ম-গোত্র-বর্ণের ভেদাভেদ ভোটের মাঠে আপাতদৃষ্টে মুছে গেছে। তৈরি হয়েছে অনুপম সম্প্রীতির আবহ।
রাজশাহীতে প্রার্থীদের আলেম-ওলামাদের দোয়া প্রার্থনা
রাজশাহী ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা রেজাউল করিম রাজু জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের ইমাম আলেম ওলামাদের কাছে আনাগোনা আর দোয়া নেয়ার তৎপরতা বেড়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি গণসংযোগ চলাকালে যেখানে যে ওয়াক্ত হচ্ছে সেখানকার মসজিদে প্রার্থীরা নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষ করে গেটে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের হাতে হাত মিলিয়ে দোয়া চাইছেন। ইমাম-খতিবদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করছেন তাদের জন্য দোয়া করার জন্য।
অনেক প্রার্থী তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন এলাকার পীর-মাশায়েখদের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। জুমার নামাজের দিনটা প্রচারণার রেশ ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছেন প্রার্থীরা। এদিন মসজিদে সব শ্রেণীর মানুষ নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হন। তাদের সাথে কুশল বিনিময় আর দোয়া চাওয়ার মাধ্যমে কৌশলী ভোট চেয়ে নেন। সঙ্গে কর্মীরা হাতে থাকা প্রচারপত্র হাতে ধরিয়ে দেন। অনেক প্রার্থী জুমার দিন দু’তিনটা মসজিদে ছুটে যাচ্ছেন। আজান হওয়ার পর এক মসজিদে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে আরেক মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রচার-প্রচারণায় সময়টা তারা ভালোভাবে কাজে লাগাতে চান।
নগরীর শাহ মখদুম দরগা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন রাজশাহীর সদর আসনের প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু। নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। খতিব সাহেবের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
কেউ কেউ আলাদাভাবে তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের মাধ্যমে ভোট চাইছেন। প্রচারণায় তুলে আনছেন কে কত মসজিদ মাদরাসার উন্নয়ন করেছেন। নিজেদের ইসলামবান্ধব হিসেবে তুলে ধরছেন। গত মেয়র নির্বাচনের সময় ইমাম-আলেম-ওলামাদের জন্য আলাদা আবাসিক এলাকা গড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। এবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারিভাবে ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের জন্য কুড়ি, পনের হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ইমাম-খতিবদের কাছে টানার জন্য নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ব্যবহার কার হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনকেও। মাদরাসার সুপারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
যশোরে মসজিদে মসজিদে ভোট প্রার্থনা
যশোর ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মিজানুর রহমান তোতা জানান, গতকাল জুমার দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩৬টি আসন এলাকার অধিকাংশেই নির্বাচনের প্রার্থী, ভোট কর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় বলে আমাদের জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের মাধ্যমে জানা গেছে। প্রায় সব মসজিদে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রার্থনা হয়। দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় দোয়া হয়। মসজিদকেন্দ্রিক ভোট রাজনীতি বেশ জমে উঠে গতকাল জুমাবারে। যে কোনো ভোটের অন্যতম নিয়ামক শক্তি মুসল্লি ও আলেম-ওলামার তার প্রমাণ মেলে। গতকাল জুমাবারে ভিন্ন এক আমেজের ভোট রাজনীতি দেখা গেছে।
যশোরের মসজিদে মসজিদে ছিল উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই প্রার্থীরা দড়াটানা মসজিদ, চৌরাস্তা মসজিদ, মার্কাস মসজিদ, নতুন খয়েরতলা জামে মসজিদ, হাসপাতাল মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসজিদে মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দেখা গেছে ভিন্ন এক পরিবেশে। জুমার নামাজের আজানের আগেই মসজিদে মসজিদে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। আবহাওয়াও ছিল খুব সুন্দর। মসজিদ কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণ ও আশেপাশের রাস্তায় পাটি বিছিয়ে মুসল্লিরা নামাজ আদায়ের জন্য বসে পড়েন। নামাজ শেষে ভিন্ন আমেজের নির্বাচনী পরিবেশ দেখা যায়। মসজিদ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে নির্বাচনী প্রচারণাস্থল। কোনো মসজিদে প্রার্থী, কোনো মসজিদে প্রচারপত্র হতে নিয়ে ভোটকর্মী ও সমর্থকরা। মুসল্লিদের জড়িয়ে ধরে তারা হাতে হাত দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন ও দোয়া চান। মুসল্লিদের দোয়া ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা আগেও ছিল, কিন্তু এখন বহুমাত্রায় বেড়ে গেছে। মসজিদভিত্তিক প্রচারণার রেওয়াজ বেড়েছে।
যশোর সদরের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কারবালা মসজিদে নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান। বলেন ‘আমার বাবা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম সারাজীবন আপনাদের সাথে ছিলেন, তাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া ও সমর্থন পেলে আমি নির্বাচিত হতে পারব। আপনাদের খেদমতের সুযোগ দিন। আপনাদের পাশে থাকব সবসময়।
বরিশালে মসজিদকেন্দ্রিক ভোট প্রচারণা
বরিশাল ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা নাছিম উল আলম জানান, নির্বাচনপূর্ব ভোটের রাজনীতিতে গতকাল দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার প্রার্থীরা বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে ভোটারসহ সবার দোয়া কামনা করেন। এ সময় ভোট প্রার্থীরা দেশ ও সমাজের খেদমতে নিজেদের উৎসর্গ করার কথা জানিয়ে একটিবার জনগণের খেদমত করার সুযোগ দেয়ারও আর্জি জানান। ভোট প্রার্থীদের সাথে গতকাল তাদের অনুসারী কর্মীরাও বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। ফলে গতকাল দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদগুলোতে ছিল ভিন্ন ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য। তবে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সব এলাকাতেই বিরোধী দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু হওয়ায় অনেককেই গতকাল প্রার্থীদের সাথে দেখা যায়নি। নির্বাচনপূর্ব দ্বিতীয় জুমায় বরিশাল সদর আসনের মহাজোট প্রার্থী জাহিদ ফারখ শামিম মহানগরীর জামে কসাই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। তিনি নামাজে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করে সবার দোয়া কামনা করেন। অপর দিকে, ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারোয়ার গতকাল নগরীর আলেকান্দা এলাকার নুরিয়া স্কুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে সমবেত মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান। তিনি দেশের স্বার্থে সকলকে ভোটকেন্দ্রে সমবেত হয়ে ভোট দেয়ারও আহ্বান জানান। তবে গতকাল তার সাথে কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
ভোটে জিততে হলে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময়সহ তাদের দোয়া প্রার্থনাকে একটি ইতিবাচক দিক বলেও মনে করছেন দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতা। এমনকি এতদিন কতিপয় কথিত প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ‘ধর্মের নামে রাজনীতি প্রতিরোধ’র যে তকমা দিয়ে আসছিলেন, তা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারছেন বলে খুশি সাধারণ মুসল্লিরা।
নোয়াখালীতে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময়
নোয়াখালী ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, গতকাল ছিল শুক্রবার। নোয়াখালীর প্রতিটি মসজিদে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা সুযোগটি লুফে নিতে ভুল করেননি। বিভিন্ন মসজিদে প্রার্থীরা জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সাথে মোলাকাত করেন। উদ্দেশ্য একটাই, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সহানুভ‚তি আদায়। প্রার্থীরা অনেকের পারিবারিক খোঁজখবর থেকে শুরু করে ব্যক্তি আলাপে মগ্ন ছিলেন। এককথায় জুমার দিন প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণাটুকু সেরেছেন।
নোয়াখালীর ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার বসুরহাট বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। পরে মন্ত্রী মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। একই আসনের প্রার্থী সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নরোত্তমপুর ইউনিয়নে প্রখ্যাত বুজুর্গানে দ্বীন হজরত মাওলানা আলামুর রহমান (ছনখোলা দরবেশ) সাহেবের মাজার জিয়ারত ও জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া নোয়াখালীর অপর পাঁচটি আসনে আ.লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে স্থানীয় মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর জেলার ছয়টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও বিএনপি প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হন। হামলা, মামলা, প্রচারগাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের আটকের ভয়ে এতদিন বিএনপি প্রার্থীরা কোণঠাসা থাকলেও এখন অনেকটা চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বুধবার রাতে নোয়াখালী ১৫ প্লাটুন বিজবি মোতায়েনের পর অনেকটা ভরসা রেখে বিএনপি প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী গণসংযোগ বৃদ্ধি করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, তৃণমূল সমন্বয়ক ও নোয়াখালী-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশের ভ‚মিকা দেখে প্রতীয়মান হচ্ছে, নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষ আ.লীগ নয়, পুলিশ বাহিনী। তিনি আরো বলেন, নোয়াখালীর ছয়টি আসনের আমাদের কর্মী-সমর্থকরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ পুলিশ রাতের বেলায় নিজ নিজ এলাকার নেতৃবৃন্দের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে।
জুমার নামাজের পর কয়েক মুসল্লির সাথে আলাপকালে তারা ইনকিলাবকে জানান, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে তারা এখনো শঙ্কিত। কেননা, এ যাবত সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন বিরোধীদলের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে চলছে। ফলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে অনেকে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে জানান, সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এতে করে শান্তিপ্রিয় ভোটারদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
বগুড়ায় জুমাবার ছিল প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
বগুড়া ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মহসিন রাজু জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আর মাত্র এক সপ্তাহ দূরত্বে দাঁড়িয়ে গতকালের জুমাবারটি সংসদ সদস্য প্রার্থীদের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্র্ণ। বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন জাতীয় পর্যায়ের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা প্রায় সবাই নিজ নিজ এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন।
জানতে চাইলে বগুড়া-৪ সংসদীয় আসনের মহাজোট প্রার্থী জাসদ (ইনু) নেতা ও এমপি রেজাউল করিম তানসেন বলেন, ভাই আমাদেরকে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের মূল্য দিতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। জুমা উপলক্ষে সবাইকে সাথে নিয়ে জুমার জামাত শামিল হয়ে নামাজ আদায় ও মুসল্লিদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে বেশ ভালোই লাগছে। তিনি আরো জানালেন, শুনছি প্রার্থীরা সবাই প্রচারণার সময় নামাজের ওয়াক্ত এসে গেলে তারা স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। এর ফলে অনেকেই কিন্তু নিয়মিত নামাজীতে পরিণত হবে বলে আশা করেন তিনি। এদিকে অনেক মসজিদেই কোথাও প্রার্থীরা নিজে আবার কোথাও সমর্থকরা নিজ দল ও প্রার্থীদের সাফল্য কামনায় বাদ জুমা দোয়াখায়ের বা মিলাদ মাহফিলের ও আয়োজন করা হয়।
দিনাজপুরে প্রার্থীদের মুসল্লিদের দোয়া কামনা
দিনাজপুর অফিস থেকে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজুল হক আনার জানান, পার্থিব জীবনের সকল কাজকর্ম ফেলে সপ্তাহের একদিন শুক্রবার মুসল্লিরা মসজিদে গিয়ে থাকেন জুমার নামাজ আদায়ের জন্য। নামাজের খুতবা শোনেন মনোযোগ দিয়ে। দোয়া চান অনেকেই। এদিন মুসল্লিরা বিরক্ত না হয়ে মন খুলে ইমামের পেছনে সকলের চাওয়া পূরণে আমিন বলে থাকেন।
আসন্ন ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকার মসজিদে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মুসল্লিদের দোয়া কামনা করেছেন। দিনাজপুর-৫ আসনের আ.লীগ প্রার্থী প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামাজ আদায় করেছেন ৪ নং পলাশবাড়ী প্রামাণিক পাড়া মসজিদে, বিএনপি প্রার্থী এ জেড এম রেজওয়ানুল হক নামাজ আদায় করেন ল²ণপাড়া জামে মসজিদে।
দিনাজপুর-২ আসনের নৌকা প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পারিবারিক মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। তবে মূলত প্রার্থীরা এলাকায় নিজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে দোয়া চেয়েছেন।
ময়মনসিংহে জুমার নামাজ শেষ করেই
প্রচারণায় নামলেন ময়মনসিংহের প্রার্থীরা
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মো. শামসুল আলম খান জানান, মাঠ চষে বেড়ানোর গতানুগতিক ধারা পাশাপশি গতকাল জুমাবার হওয়ায় নির্বাচনী জনসংযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের টার্গেট করে নিজের কর্মী-সমর্থক ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা।
আগেভাগেই মসজিদে গিয়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেছেন। নামাজ শেষে ভোটারদের বুকে টেনে নিয়েছেন। নিজেকে সৎ ও যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে বিনয়ের সাথে নিজের মার্কায় ভোট চাইছেন। সঙ্গে থাকা কর্মীরা ভোটারদের হাতে তুলে দিয়েছেন প্রতিশ্রুতির লিফলেট।
মর্যাদাপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ জুমার নামাজ আদায় করেন ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী মার্কাস মসজিদে। নামাজ শেষ করেই তিনি মুসল্লিদের মাঝে প্রচারণা শুরু করেন। তার কর্মী-সমর্থকরাও মসজিদে মসজিদে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন। ওয়াহাব আকন্দ নির্বাচনে বিজয়ী হলে ময়মনসিংহের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি শরীফ আহমেদ নামাজ পড়েছেন ময়মনসিংহ শহরের বাসায়। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার নিজের বাসার এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের মহাজোটের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা নুরুল আমিন মাদানী খাগাটি জামতলী মসজিদে ইমামতি করেন এবং নামাজ শেষে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন স্থানীয় মার্কাস মসজিদে নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ভোট প্রার্থনা করেন।
ফেনিতে তৌহিদি জনতার মাঝে প্রার্থীরা
ফেনীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার ফেনীর তিনটি আসনে প্রার্থীদের যার যার এলাকায় সামাজিক মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সাথে কৌশল বিনিময় করে ভোট চাইতে দেখা গেছে। সরেজমিন ফেনী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল আলম মজনুর বিষয়ে জানা যায়নি, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ তার নিজ এলাকা ফুলগাজী উপজেলার মুন্সির হাটে একটি জানাজায় অংশ নেন, তিনি সেখানে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং শত শত মুসল্লির সাথে দেখা হলে তিনি তাদের সাথে কৌশল বিনিময় করে আসন্ন নির্বাচনে আপেল মার্কায় ভোট চান। এদিকে ফেনী সদরের আ.লীগ প্রার্থী নিজাম হাজারী কোথাও কর্মসূচিতে অংশ নেননি বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ভিপিকে ফোন করা হলে তিনি এ ধরনের সামাজিক কর্মসূচি করার পদক্ষেপ নেননি বলে জানান। ফেনী-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেন তার দাগনভূঞা উপজেলার আলাইয়া পুরে গ্রামের বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন, কিন্তু তিনি কারো সাথে কৌশল বিনিময় কনেননি। এদিকে মহাজোট প্রার্থী লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তার এলাকা সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দিতে গণসংযোগ করেছেন। পরে তিনি সেখানে স্থানীয় একটি মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং সকলের সাথে কথা বলে লাঙ্গল মার্কায় ভোট চাইতে দেখা গেছে।
কক্সবাজারের ভোটে ইসলামী চেতনা
কক্সবাজার অফিস থেকে বিশেষ সংবাদদাতা শামসুল হক শারেক জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে এখন চলছে ভোট উন্মাদনা। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, আপেল ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও এক জায়গায় যেন সবাই একই কাতারে। আর তা হলো ইসলামী চেতনা। দেখা গেছে, সব দলমতের প্রার্থীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ উদ্যোগে আয়োজন করেছেন দোয়া মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ও করেছেন কুরআন খতমের আয়োজন।
এ ছাড়াও প্রার্থীরা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল, মাদরাসা-মসজিদের বার্ষিক মাহফিল ও জুমার নামাজে হাজির হয়ে দোয়া কামনা করে নির্বাচনী গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। এভাবেই যেন প্রার্থীরা জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে চেষ্টা করছেন। গতকাল কক্সবাজারের বড়-ছোট সব মসজিদই ছিল মুসল্লিতে ভরপুর। আর এরই মাঝে ভোট প্রার্থীদের ছিল সরব পদচারণা। তারা মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়ে নির্বাচনী জনসংযোগকে জমিয়ে তুলতে।
সিলেটে মসজিদে প্রার্থীদের প্রচারণা
সিলেট ব্যুরো থেকে স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আমিন জানান, ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ-অনুভ‚তির সাথে একাকার হয়ে নিজ নিজ পক্ষে সমর্থন আদায় ও নজর কাড়তে নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম একটি কৌশল। দল মনোনীত প্রার্থীরা ধর্মের অনুশীলনে নিয়মিত না হলেও নির্বাচনকালে নিজেরা ধর্মীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে দরদি মানসিকতার পরিচয় দেন। মসজিদ, মাদরাসা, তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগের মাত্রার লক্ষণীয় হয় উঠে। চলমান একাদশ নির্বাচনী প্রচারণায় মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে মহাজোট ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরাও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। গায়ে সুন্দর পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পরে মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন মুসল্লিদের কাতারে। আ.লীগ মনোনীত মহাজোট প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজ এলাকা নগরের নাইওরপুল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। এর আগে মসজিদে নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সাথে কুশল বিনিময় করে দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন। এ সময় মসজিদের মোতাওয়াল্লি আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আবদাল আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, আরমান আহমদ শিপলুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ওই আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির জুমার নামাজ আদায় করেন আল্লামা ফুলতলী (র.) প্রতিষ্ঠিত জামেয়া দারুস সুন্নাহ ইয়াকুবিয়া মাদরাসা মসজিদে। নামাজ শেষে কুশল বিনিময় করেন মুসল্লিদের সাথে। পরে জামেয়া দারুস সুন্নাহ ইয়াকুবিয়া মাদরাসা গেটে এক বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে দেশের আলেম-ওলামারা যথাযথ মূল্যায়ন পাননি। শাপলা চত্বরে লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষার্থীর ওপর বর্বর হামলার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই সরকারের আমলে আলেমসমাজ যথাযথ মূল্যায়ন পাননি। ইনশাআল্লাহ, বিএনপির নেতৃত্বে ভবিষ্যতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সরকার গঠিত হলে দেশের আলেমসমাজ ও দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এরপর শাহজালাল উপশহরে সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারপত্র ও লিফলেট বিতরণ করেন। এর আগে শুক্রবার সকালে নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানাধীন সিলেট মহানগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের বারাখলা, কায়স্থরাইল ও মোমিনখলায় গণসংযোগ ও মতবিনিময় করেন তিনি।
খুলনায় মসজিদ প্রাঙ্গণ ছিল মুখরিত
খুলনা ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার আবু হেনা মুক্তি জানান, দ্রæত পাল্টে যাচ্ছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ভোটের হাওয়া। গতকাল জুমার নামাজ শেষে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্মভীরু আমজনতা যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের নানা কলাকৌশলের নিপীড়ন ও চাপের মধ্যেও নিজ নিজ এলাকায় এসব সাধারণ মানুষও যেন বিদ্রোহী হয়ে উঠছে। জুম্মার নামায শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণ ছিল প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখরিত।
পক্ষ-প্রতিপক্ষের আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম সর্বত্র। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী এলাকায় এখন টানটান উত্তেজনা। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থী ও সমর্থকদের হৃৎস্পন্দন ততই বাড়ছে। ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, শুভেচ্ছা বিনিময় আর ভোট প্রার্থনার মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে প্রার্থীরা।
এদিকে জুমার নামাজে পুরুষ ভোটারদের টার্গেট করে খুলনাঞ্চলের প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল মসজিদে মসজিদে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজে খুলনাঞ্চলের প্রতিটি মসজিদের প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে নির্বাচনী প্রচারণায় মুখরিত। ধর্মভীরু ভোটারদের মন জয় করতে প্রতিটি মসজিদে চলে প্রার্থীদের গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, শুভেচ্ছা বিনিময়। নামাজে শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের হাতে প্রার্থীদের হ্যান্ডবিল বিলি করা হয় প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। প্রার্থীরা মসজিদে মসজিদে দোয়া চায় এবং নামাজ শেষে মুসল্লিদের সাথে কথা বলে। যেহেতু জুমার নামাজে একসাথে প্রচুর পুরুষ ভোটার পাওয়া যায় মসজিদে। তাই স্বল্পসময়ে অধিক প্রচারের জন্য প্রার্থীরা বেছে নেন মসজিদ প্রাঙ্গণ। সকালে খুলনা-২ আসনে আ.লীগ মনোনীত মহাজোট প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল নগরীর শিববাড়ি মোড়, কেডিএ এভিনিউ, গোবরচাকা, শেখপাড়া এলাকার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া প্রার্থনা, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
অপর দিকে, খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নগরীর গোবরচাকা, চেম্বার ভবন, খানজাহান আলী রোড, ফুল মার্কেট, রায়ের মহল এলাকার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া প্রার্থনা, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। খুলনা-৩ আসনের আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান দৌলতপুরের দেয়ানা দক্ষিণ, পূর্ব, উত্তর পাড়া, মোল্যা এলাকার গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।