Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের আচরণ নজিরবিহীন

সংবাদ সম্মেলনে ড.কামাল হোসেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড.কামাল হোসেন বলেছেন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের আচরণ ‘নজিরবিহীন’। আমার জীবনে কোন নির্বাচনে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। সরকার পরিকল্পিতভাবে পুলিশ দিয়ে বিরোধীদলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা করাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথকে রুদ্ধ করছে। এটা সুষ্পষ্ট সংবিধান পরিপন্থি। এটা অবিলম্বে বন্ধ করুন। আজ এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন। তা না হলে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিুক্ত হবেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছিল এবারও সরকার তাই করতে চাচ্ছে। আমরা বলবো এই প্রহসন বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, তা না হলে দেশে ভয়ংকর সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হবে।
আজ সন্ধ্যায় পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনে প্রচরনা উলক্ষে ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার প্রতিটি আসনে গণমিছিল ও জনসভা করা হবে। এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বেলা ২টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
ড. কামাল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো ভোট হয়নি। এটা একটা আয়োজন ছিল। তারা বলেছিলো, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এটা করতে হয়েছে। দ্রুত সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে, কিন্তু সেই দ্রুত সময় আর আসেনি।
তিনি বলেন, তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে দাবি করবেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এটা জনগণ মেনে নেবে না। জনগণের সাথে প্রতারণা করবেন না। দয়া করে মিথ্যাচারের এই খেলা বন্ধ করুন। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি। সরকারকে বলবো, এটা সম্পূর্ণ ভাওতাবাজি। যে কায়দায় অগ্রসর হচ্ছে তা সব স্বৈরাচারী শাসনকে হার মানিয়েছে। এটা বন্ধ করুন, জোর করে নির্বাচিত হবেন, দাবি করবেন বিজয়ী হয়েছেন, এটা অর্থহীন। দেশের মানুষ চায় অবাধ নির্বাচন। এদেশের মানুষ অনেক জীবনের বিনিময়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে অতীতে। কিন্তু ৪৭ বছর পরেও ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এটা আমার জন্য লজ্জাজনক, জাতির জন্যও লজ্জাজনক।
বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও হামলার বিষয়ে সরকারকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, মাথা ঠিক করেন, মাথা সুস্থ করেন, মাথা ঠান্ডা করেন। রাষ্ট্র ও সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণকে ভোটাধিকার থেকে সরিয়ে দেয়া মানে স্বাধীনতার উপর আঘাত করা। আপনারা এসব হামলা-মামলা বন্ধ করুন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, এই নির্বাচনের আগে যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি, তা গত ৫০ বছরে কখনও দেখিনি। পুলিশ এবং দলীয় কর্মীদের রাস্তায় নামিয়ে পেশিশক্তির ব্যবহার করে জনগণের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে সরকার। আমি ধরেই নিয়েছিলাম নির্বাচনের আগে কিছু তো হবেই, তবে এই অবস্থা দেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি। অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করা হোক। এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই বন্ধ করা হোক।
ড. কামাল বলেন, পাঁচ বছর পর নির্বাচন করছেন, এট প্রহসনে পরিণত করবেন না। আগামীকাল থেকে খবর নেবো, এই আচরণ বন্ধ হয়েছে কিনা। সংবিধানে লেখা আছে, পুলিশ কোন দলীয় বাহিনী হবে না। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ করবো, আপনারা পুলিশ ভাইয়েরা যা করছেন, ১৬ আনা নিরপেক্ষ পরিপন্থি। একটা দলের ক্যাডার বাহিনীর মতো কাজ করছেন। তা অবিলম্বে বন্ধ করুন। এটা করলে জনগণের মালিকানা থাকবে না, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে। শুধু এটা নিশ্চিত করুন, আমরা বলছি না, আমাদের ভোট দিতে হবে। জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দিবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ জন ধানের শীষের প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকালও যশোর-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী আবু সাঈদ মো: শাহাদাৎ হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভূতুরে মামলায় ২জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আফরোজা আব্বাস, রোমানা মাহমুদ টুকু, সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, কনক চাঁপাসহ ৫জন নারী প্রার্থীর উপর নগ্ন হামলা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৩টি নির্বাচনী এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীতা শুন্য হয়ে গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনের পূর্বেই কূটকৌশলে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে সরকার। যেসব আসনে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে সেসব আসনে পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। ইন্টারনেটের গতি কমানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। পোস্টার ছিনিয়ে নেওয়াসহ নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের উপর হামলা ও প্রচারণায় বাধাদানের চিত্র লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন। সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার ওসির নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ আওয়ামী লীগের কর্মীর ভূমিকায় নেমেছে। এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রত্যাহরের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির হোসেন, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মহমুদ স্বপন, গণদলের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমুখ।



 

Show all comments
  • mubarak ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:০০ এএম says : 0
    বাপ কা বেটা। d.r কামাল হোসেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ