Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পুলিশি অভিযান আতঙ্ক

দিনে বিএনপির প্রচারণা থেকে ছবি-ভিডিও ধারণ, রাতে অভিযান গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র সাত দিন বাকী। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান ও গ্রেফতার ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট কোন অপরাধ ছাড়াই গায়েবী মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার পরিচালিত হচ্ছে। বিনা উস্কানিতে পুলিশের এমন অভিযান ও গ্রেফতারে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন প্রার্থী ও সাধারণ নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশ বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বিএনপির দাবি, তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তফসিলের পর একটি দিনও বাদ যায়নি যেদিন বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়নি। নেতা-কর্মীদের দাবি, পুলিশের এমন বেপরোয়া অভিযান ও গ্রেফতারে প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যার কারণে মাঠে গণসংযোগ ও কর্মী-সমর্থকদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে পারছেন না প্রার্থীরা। এছাড়া এখন পর্যন্ত ডিবি পরিচয়ে অনেককে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের বেশিরভাগের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদিও কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের দাবি, দিনের বেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রচার প্রচারণায় পুলিশ সদস্যরা সোর্সদের সাথে নিয়ে সাদা পোষাকে এসে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে এসব ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে রাতে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সংগঠনটির অভিযোগ, প্রতীক বরাদ্দের পর অভিযান ও গ্রেফতার বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে যাদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা, তাদেরই মূলত বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একইভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সাধারণ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ, আজিমপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, আদাবর, তেজগাঁও, রামপুরা, সবুজবাগ, পল্টন, শাহজাহানপুর, ভাষানটেক, কাফরুল, বনানী, তুরাগ, উত্তরা, রমনা এলাকাসহ স্থানীয় বাসীন্দা ও নেতাকর্মীরা বলেন, দিনের বেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রচার-প্রচারণায় সাদা পোষাকে পুলিশ এসে সোর্সদের সহায়তায় কর্মী সমর্থকদের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারসহ বিভিন্ন উপায়ে এসব ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। নেতাকর্মীরা বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই ৩০ থেকে ৫০ জনের একটি টিম নিয়ে এসে পুলিশ অভিযান চালায়। যার কারণে গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের সবাইকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনে রাজধানী থেকে প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে।
বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে আসছে। তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা, এলাকা ছাড়ার হুমকি, এমনকি হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে আহত ও গ্রেফতারসহ নানামূখী সন্ত্রাসী কর্মকাÐে লিপ্ত হয়েছে। দলটির অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নিপীড়ণ-নির্যাতন ও অত্যাচারে সারাদেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বলতে কিছু নেই।
বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৯০ হাজার মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ। এর মধ্যে প্রায় পৌনে ১ লাখ নেতা-কর্মী জেল হাজতে রয়েছে। এছাড়া এই ১০ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ বিএনপির প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ দলটির। এর আগে গত সোমবার প্রায় ১৯শ’ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে একটি তালিকাও দিয়েছে তারা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, পুলিশ সরকারের নির্দেশে কারণ ছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করছে।
এদিকে এএফপির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হুমকি ও গ্রেফতার আতঙ্কে বেশিরভাগ নেতাকর্মী বাড়ি-ঘর ছেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় হত্যা ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। যার কারণে ভোটারদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে রাজপথে প্রচারণা চালানো এখন ভীষণ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী নামে এক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিরোধী দলের ৩০০ আসনের প্রার্থীর মধ্যে ১৫২ জনের ওপর হামলা এবং ১৪ জন প্রার্থীসহ কমপক্ষে ৮ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গত মাসে আটক করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, প্রধান বিরোধী দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, এমন কি গুম করা হয়েছে। এতে আতঙ্ক ও নিপীড়নের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এবিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার বাহিনী। তারা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছে। তিনি বলেন, মামলা দায়ের, আসামি গ্রেফতার পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। পুলিশ কোন ব্যক্তি কিংবা কারো পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করছে না। রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। যাদের নামে থানায় মামলা রয়েছে এবং যারা ফৌজদারি মামলার আসামি তাদেরই কেবল গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়া অতীতে যারা নাশকতা চালিয়েছে এবং আগামীতে চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ