Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার ভোট চুরিতে ওস্তাদ

না.গঞ্জে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্প, বিদ্যুৎ চুরি, ব্যাংক-শেয়ারবাজার লুটপাট করতে করতে ভোট চুরিতেও ওস্তাদ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভোটের আগেই তারা (আওয়ামী লীগ) ব্যালট বাক্স ভরে রাখবে। তাই তাদের ভোট চুরি ঠেকাতে হবে। আগের রাত থেকেই কেন্দ্রে পাহারা বসাতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা স্কুল মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনকে ঠুটো জগন্নাথ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের কিচ্ছু করার নেই। আপনারা যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে চলে যান। নারায়ণগঞ্জবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মানুষ একবার মরে, দুইবার মরে না। তাই জেগে উঠুন নারায়ণগঞ্জবাসী। নারায়ণগঞ্জের মানুষ অনেক প্রতিক‚লতা পেরিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
এরআগে সমাবেশস্থলে যাবার পথে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গাড়িবহর কাঁচপুর এলাকায় আটকে দিতে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় কিছু লোকজন। পরে বন্দরের মদনপুরে রাস্তার উপর বাঁশ ও কাঠ ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে পাহারা দিয়ে সমাবেশস্থলে নিয়ে যায়।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কারাগারে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তার মুখে আমি কোন মলিনতা দেখিনি। তিনি আমাকে বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমাকে মুক্ত করো। তাই ধানের শীষের প্রার্থীদের জয় মানেই খালেদা জিয়ার মুক্তি। তার মুক্তির জন্য আপনারা ধানের শীষে ভোট দিবেন।
পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আছেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষতার সাথে এ দায়িত্ব পালনে আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আপনারা নিরপেক্ষ থাকবেন। আপনারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবেন, জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’
নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে প্রার্থীদের জয়ী করার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ পাঁচ প্রার্থী হলেন খালেদা জিয়ার প্রার্থী। তাদের জয়েই মুক্ত হবেন খালেদা জিয়া। এ সরকার কিন্তু চুরির মাস্টার। তারা ভোট কেন্দ্রেও চুরি করতে পারে। তাই ভোটের ফলাফল নিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। তাই এবার জেগে উঠুন।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নারায়ণগঞ্জে এবার খেলা হবে। তাদের জনগণের কল্যাণে কোন চিন্তা নেই। শীতল²্যা নদী পচে নষ্ট হয়ে গেছে, শ্রমিকদের মৃত্যু হচ্ছে। তাতে কারো কোন চিন্তা নেই। ত্বকী হত্যার কোন বিচার হয়নি। তাতেও কারো চিন্তা নেই। চিন্তা করবেই বা কীভাবে? কারণ জনগণের তো কথা বলারই অধিকার নেই।
তিনি আরো বলেন, এখানে মঞ্চ করার কথা ছিল, মঞ্চ করতে দিল না। আমাদের ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। এতো কিছু করেও কি কথা শোনানো বন্ধ করা গিয়েছে? বন্ধ করা যায়নি। ওরা মনে করে রাতের বেলা ২ জন লোক গ্রেফতার করলে, ভয় দেখালে, মানুষ নিয়ে মিছিল করলে জয়যুক্ত হবে। কিন্তু তারা মোটেও জয় পাবে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্ল­াহ চৌধুরী বলেন, ‘এবারের নির্বাচন ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে কম গুরুত্বপ‚র্ণ নয়। এবারের নির্বাচন জাতির বেঁচে থাকার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন নির্ধারণ করবে এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচবে, না পরাধীনভাবে। আজকে শাসক শ্রেণীর হৃদস্পন্দন যেমন বেড়েছে তেমনি তাদের অত্যাচার বাড়ছে। আপনারা দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কেন ক্ষমা চাইলেন? ক্ষমা চেয়েছেন, কারণ উনার সরকার হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। এটা কোনো স্বাধীন দেশের লক্ষণ নয়। আজ হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যা, গায়েবি মামলায় বন্দি করেছেন। এটা থেকে জনগণ আজকে মুক্তি চায়। এটা থেকে জনগণ আজ মুক্তি চায়। জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।
আমাদের কাছে একটি মাত্র পথ আছে। যতই অত্যাচার হোক আগামী ৩০ তারিখে আপনি এবং আপনার বাড়ির প্রত্যেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট নিশ্চিত করবেন। আমাদের জয় সুনিশ্চিত। আমরা এক ঢাকার উন্নয়ন চাই না, সারাদেশের উন্নয়ন চাই। ঢাকার উন্নয়ন মানে দুর্নীতির উন্নয়ন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্ল­া-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী এসএম আকরাম, জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, গণফোরাম জেলার আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সভাপতি সাঈদ আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ