পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামী আন্দোলন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের বিষয়ে অটল থেকে এককভাবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার অঙ্গীকারের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
গণমানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো নির্বাচনী ইশতেহারে ১৬টি অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে। প্রাধান্য দেয়া অঙ্গীকারগুলো হচ্ছে, মানুষের কল্যাণে ধর্ম ও রাজনীতির সমন্বয় ও গুণগত পরিবর্তন ঘটানো। কার্যকর সংসদ নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে প্রপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে প্রবর্তন। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে অবাধ শিক্ষার প্রচলন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও অনৈতিক পেশার সাথে জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মনোনয়নের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করার পদ্ধতি প্রবর্তন। কৃষি ও শিল্পবিপ্লব ঘটিয়ে বেকার-দারিদ্র্যমুক্ত এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে পণ্যমূল্য ২০% কমিয়ে জনগণের উপর আর্থিক চাপ কমানো। নারীদের অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সীমাহীন ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গীবাদের বিষয়ে জিরো ট্রলারেন্সের নীতি গ্রহণ করা। ঘুষ, দুর্নীতি নির্মূলের মাধ্যমে বছরে এক বাজেটের টাকা সাশ্রয় করে ১৫ বছরে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া।
নাগরিক সুবিধা
দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, উন্নত ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করে জনগণকে যে সব নাগরিক সুবিধা দেয়া হবে তা নি¤œরূপ : স্বাচ্ছন্দে ক্রয়ের জন্য খাদ্যমুল্য স¦াভাবিক মুল্যের চেয়ে ২০% কমানো। মানবিক কারণে রিক্সা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ীর লাইসেন্স ফি মওকুফ করা। সকল সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ২৫% বৃদ্ধি করা। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসা ব্যয় ৫০% কমানো। শিক্ষার্থীরা পড়াকালীন সময়ে যাতে পুঁজি সঞ্চয় করে স্বাবলম্বী হতে পারে, এ লক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট সেভিংস ব্যাংক (এসএসবি) গঠন করা। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বেতন দ্বিগুণ করা। আয়কর ও ভ্যাট ৩০% কমানো। চলাচলের সহজলভ্যতার জন্য সকল সেক্টরের পরিবহন ভাড়া ৩০% কমানো। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ সকল গণপরিবহনের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা। জমির খাজনা, সকল ধরণের টোল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০% কমানো। কৃষকের উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নেয়ার স্বার্থে সার, সেচ ও বীজ অর্ধেক মূল্যে দেয়া। সকল মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন এবং খাদেমকে সম্মানজনক ভাতা দেয়া। সকল মন্দির ও গীর্জাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং সেবককে সম্মানজনক ভাতা দেয়া। আমদানী ও রফতানী শুল্ক ৩০% কমানো। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং লোডশেডিং বন্ধ করা। সর্বত্র আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা। টেকসই ও গ্যারান্টি সহকারে রাস্তাঘাটসহ সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা। রাস্তা-ঘাট এবং ফেরিতে সকল ধরণের অবৈধ চাঁদা ও টোল বাতিল। দেশিয় এবং বৈদেশিক ঋণ ১৫ বছরের মধ্যে শূন্যের কোঠায় আনা।
ঘোষিত ইশতেহারে আরো রয়েছে : দেশের সর্বস্তরে অসৎ ও অযোগ্য নেতৃত্ব পরিবর্তন করে, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টকারী ও জালভোট প্রদানকারী এবং নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিতরা পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে তাদের যাবজ্জীবন শাস্তির আইন করা। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা। মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করা। প্রত্যেক জেলায় ও উপজেলায় অবস্থিত হাসপাতালসমূহের চিকিৎসা ও খাবারমান উন্নত করা। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি যথা- হোমিওপ্যাথী, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি বা কবিরাজী চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আরও উন্নত ও মানসম্মত করা। বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা এবং কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি চালু করে দেশ থেকে দারিদ্য দূর করা। শিল্পঋণ সহজলভ্য এবং নতুন শিল্প স্থাপন করা। কৃষি-শিল্প, যোগাযোগ, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব নব উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেয়া। ইন্টারনেটের সকল ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বন্ধ করা। জাতীয় স্বার্থ ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে পররাষ্ট্রনীতির একটি রোল মডেল স্থাপন করা। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা এবং বিদেশী ও প্রবাসীদের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরী করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের চাকরি প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেলা, যোগাযোগ ও চিকিৎসা সহজ করা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অমুসলিম সম্প্রদায়ের সকল প্রকার নাগরিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী নয়-এমন সকল ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ দেয়া। অবাধে গাছ কাটা এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করে প্রতিটি বাড়িতে বছরে কমপক্ষে ১০টি বৃক্ষ রোপনে উৎসাহিত করা। বুড়িগঙ্গাসহ সকল নদী-খালকে দূষণ, দখলমুক্ত করে ন্যাব্য করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোখতার হোসেন, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহসচিব আলহাজ¦ আমীনুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আলহাজ¦ আবদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, এড. লুৎফুর রহমান শেখ, ইঞ্জি. শরীফুল ইসলাম, ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল করীম মারুফ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।