পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রদান নিয়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা এখন নির্বাচনে হয় কারচুপি না হয় বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, বিএনপি এক একটি আসনে ৩ থেকে ৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে এবং এসব আসন তারা অকশনে দিয়ে দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে যে যত বেশি টাকা দেবে সে মনোনয়ন পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অবৈধ টাকা ওড়াচ্ছে, এটাই তাদের চরিত্র। তারা নির্বাচনকে হয় বানচাল না হয় ভোট কারচুপির চক্রান্ত করছে। দেশবাসীকে বলবো তারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেছে তাই জনগণের অর্থ জনগণের কাছে পৌঁছাক তাদের অর্থ নেন, আর নৌকা মার্কায় ভোট দেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির সুধাসদন বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী, জয়পুরহাট, নড়াইল ও গাইবান্ধায় এই চার জেলায় নির্বাচনি সমাবেশে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইলবাসীর জন্য হীরার টুকরা বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই একটা হিরের টুকরাকেই আমি আপনাদের (নড়াইল জেলা) উপহার দিলাম। আপনারা নড়াইলবাসী নড়াইল-২ আসনে মাশরাফিকে এবং নড়াইল-১ আসনের প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন নড়াইলের এমপি হয়ে থাকবো। নড়াইলের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আমি তা করবো। ২০০১ সালে আমি নড়াইলের দুটি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। আপনারা আমাকে বিজয়ী করেছিলেন। তাই নড়াইলের প্রতি আমার টান অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
ভিডিও কনফারেন্সে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যকালে বলেন, ইনজুরির কারনে নির্বাচনী এলাকায় আসতে একটু দেরী হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এলাকায় এসে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবো। তিনি নৌকা প্রতীকে কাজ করার জন্য সকল নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং প্রচারকাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ জানান।
আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি জামায়াতের লোকজন আওয়ামীগের ব্যাচ পরে কেন্দ্রে গিয়ে যে কোন ঘটনা ঘটাতে পারে। সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট এসএম ফজলুর রহমান জিন্নাহ, এ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলী, সিকদার আজাদ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নড়াইল পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ^াস, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. গোলাম নবী, নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্ত্তী, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু, লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম, নারী নেত্রী আঞ্জুমান আরা, জেলা পরিষদের সদস্য সাজ্জাদুর রহমান মুন্না, জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান প্রমুখ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহীর ছয় আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জনগণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, কারণ আজকে যে উন্নয়নের ধারাটা আমরা সূচনা করেছি, এই রাজশাহী শুধু শহর বা জেলা নয়, গোটা বিভাগে বা সমগ্র বাংলাদেশে আমরা যে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি তা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা থেকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে সংযুক্ত হন। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীসহ জেলার ৯ উপজেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাজশাহীর সবকটি আসনে জয়ী হয়ে এ বিজয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রার্থীরা। শেখ হাসিনা বলেন, ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সাল থেকে আমরা জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। এই রাজশাহীতে তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করে, মদদ দিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করার সুযোগ করে দেয়। তারা জঙ্গিদের ব্যবহার করে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। একটার পর বোমা হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব ঘোষণা দিয়েছিলাম একে একে সবগুলো বাস্তবায়ন করেছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারটা কখনও ভুলে যায় না। সেটা সাথেই থাকে। প্রতি বছর আমরা যখন বাজেট দেই তখন ইশতেহার অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা করি। ক্ষেত্রেবিশেষে আমরা তার চেয়েও অনেক বেশি কাজ করেছি। প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা ৯৩ ভাগ মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আগামীতে সরকার আসতে পারলে প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছাবে। প্রত্যেকটা ঘর আলোকিত হবে। আমরা সেইভাবে পরিকল্পনা ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি ছেলেমেয়েদেরকে, আমরা বৃত্তি দিচ্ছি পড়াশোনার জন্য। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
রাজশাহী অঞ্চলেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান যেন বৃৃদ্ধি পায়, ব্যবসা-বাণিজ্য যেন উন্নত হয় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী শহর রক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছি।
তাই আসন্ন নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। অর্থাৎ ২০২০ এর মার্চ মাস থেকে ২০২১ এর মার্চ মাস, আমরা এই বর্ষটাকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা যেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারি সেই সুযোগটা আমরা চাই এবং তার জন্যই নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
গত সিটি নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে মেয়র নির্বাচিত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী মহানগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, যেভাবে আপনারা আমাদেরকে মেয়র উপহার দিয়েছেন, ঠিক সেইভাবেই আমাদের আগামী নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। এরপর তিনি একে একে রাজশাহীর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই রাজশাহী সিটি মেয়র ও মাদরাসা ময়দানের সমাবেশের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে কথা বলেন। লিটন বলেন, আজকে সর্বত্রই সর্বকাজে অনেক দ্রুতই উন্নত বিশ্বের কাতারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আমাদের রাজশাহী কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে উত্তর রাজশাহী সেচপ্রকল্প, এখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে একটি বিমানবন্দর, সেটি আন্তর্জাতিকমানের করা, রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন-এটি খুবই জনপ্রিয় দাবি। পদ্মা নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং আপনি করছেন, কাজ শুরু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, খুব চমৎকারভাবে কাজ চলছে। নতুন বিসিক ও চামড়া শিল্প এলাকা হচ্ছে। এরপর গোদাগাড়ীতে একটি ভেটেরিনারি কলেজ এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় হলে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাব।
ভিডিও কনফারেন্সের রাজশাহীর সমাবেশের সঞ্চালক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আখতার জাহান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. সাইদুর রহমান খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, মেয়র লিটনের সহধর্মিনী সমাজসেবী শাহিন আক্তার রেণী, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সহধর্মিনী তসলিমা খাতুন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।