Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকি বাড়ায় বিরোধীরা আত্মগোপনে যাচ্ছে

এএফপির প্রতিবেদন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলীয় প্রার্থী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এতটাই ভীতসঙ্কিত যে, নিজের অফিস ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন তিনি। কারণ, নির্বাচনী প্রচারণায় হত্যা ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। ঢাকার এই আইনজীবীর এখন ভোটারদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাত করে প্রচারণায় রাজপথে থাকা উচিত ছিল হাতে লিফলেট নিয়ে। কিন্তু তার জন্য এ কাজ ভীষণ বিপদজনক। তার দল বলছে, প্রার্থীদের সুরক্ষা দিতে কর্তৃপক্ষ কিছুই করছে না।
বিষাদগ্রস্ত তার প্রধান কার্যালয়। সেখানে অব্যবহৃত প্রচারপত্র ও ব্যানার। সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা যখনই এসব পোস্টার টানাতে যাই তখনই আমাদের ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তখন পুলিশ থাকে নীরব দর্শক অথবা তারা ওইসব নেতাকর্মীর সক্রিয় সমর্থকে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দেশজুড়ে ২০ হাজারের বেশি আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা সেনাবাহিনীর। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপি। তারা বলছে, গত এক সপ্তাহে তাদের দলের কমপক্ষে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গত সপ্তাহে পুলিশের ধাওয়ায় ঢাকায় একটি বাসার ছাদ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। বিএনপি দাবি করছে যে, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিরোধী দলের ৩০০ আসনের প্রার্থীর মধ্যে ১৫২ জনের ওপর হামলা হয়েছে। ১৪ জন প্রার্থীসহ কমপক্ষে ৮ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গত মাসে আটক করা হয়েছে। বিরোধীরা আরো বলছে, তাদের র‌্যালির ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে র‌্যালি ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে ভোটারদের মাঝে যাতে তারা ক্ষমতাসীনদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
সুব্রত চৌধুরীর মতো প্রার্থীরা দৃশ্যমান হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু লৌহদন্ড হাতে র‌্যালিতে হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুসারীরা। বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের দু’জন অনুসারী নিহত হয়েছেন। বিরোধীদের র‌্যালিতে হস্তক্ষেপ বা প্রচারণায় হয়রানি করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পুলিশ। ওদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্প্রতি যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। বিরোধী দল বলছে, আটক করা হয়েছে কয়েক হাজার সদস্যকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তার দল নেতাকর্মীদেরকে বিরোধী দলের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেয় নি। তিনি বলেন, আমি বলবো না যে, অভিযোগের সবটাই মিথ্যা। কিন্তু আমরা কোন নির্দেশ দিই নি।
বিরোধী দলীয় বেশ কিছু সংখ্যক প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করা সত্তে¡ও নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ বাড়ছে।
মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও সরকারের সমালোচকরা সতর্কতা দিয়েছেন। বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে নির্বাচন অবাধ অথবা সুষ্ঠু হওয়ার মতো অবস্থা নেই।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, প্রধান বিরোধী দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, এমনকি গুম করা হয়েছে। এতে আতঙ্ক ও নিপীড়নের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো আবারো একটি একপেশে নির্বাচন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করেছিল এবং তাতে শেখ হাসিনা কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই সরকার গঠন করেন। তারপর থেকে হাসিনা ও তার দল ক্রমশ কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, দুর্বোধ্য একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে ভিন্ন মতাবলম্বী ও মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করছেন।
সমালোচক, বিশেষত পুরস্কার বিজয়ী ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে উস্কানিমুলক বিবৃতি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিরোধী দলের অশীতিপর নেতা খালেদা জিয়াকে নভেম্বরে আরেকদফা জেল বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা নিশ্চিত হয়েছে।
আতঙ্কের ফলে ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে যে, শাসক দলের কোনো বিকল্প আছে কিনা। রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার একজন ভোটার রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটা হলো একপেশে নির্বাচন। বিরোধীরা প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে ভীষণ ভীতির মধ্যে রয়েছে। তার প্রতিদ্ব›িদ্ব, বিরোধী দলীয় প্রার্থী অদৃশ্য। প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে এই ভয়ে নাম প্রকাশ না করে একজন দোকানি বললেন, বিরোধীরা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে কিনা তা নিয়েই তো আমার সন্দেহ হয়। এখনও আমি তার কোনো পোস্টার বা লিফলেট দেখি নি। তার জন্য ভোট চাইতে কেউ আমার কাছে আসে নি। জবাবে বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা।
গত সপ্তাহে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, তারা (সরকার) দাবি করে জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে কেন সবাই অবাধে প্রচারণা চালাতে পারছেন না?



 

Show all comments
  • Mohin Uddin Sumon ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    প্রতি দিন লড়াই করে বেচে থাকার নামই বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন মুন্সি ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৩ এএম says : 0
    ধন্যবাদ এএফপিকে। শতভাগ বাস্তব চিত্র। শিগগিরই আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ থৈরি করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ziyaur Rahman Khokon ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৪ এএম says : 0
    এ অরাজক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে দেশে এখন সেনাবাহিনীর শাসন দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল শামীম ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি আওয়ামীপুলিশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৫ এএম says : 0
    প্রবাসী বিএনপির নেতাদের প্রতি একটা অনুরোধ গণতন্ত্রের মাতার মুক্তির সংগ্রামে সাধারণ জনগণের স্বার্থে আরেকটা কর্মসূচি দেওয়া হোক, প্রবাসীরা শুধু লেখালেখি শেয়ার কমেন্ট ছাড়া আর মনে হয় তেমন কিছু করার নেই। একটা কাজ করতে পারি নির্বাচনের আগ মূহুর্তে রাষ্ট্রীয় ভাবে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধের জন্য এবং শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে প্রবাসে প্রত্যেক দূতাবাস একদিন একই সময় সারা বিশ্বে কর্মসূচি দেওয়া জরুরি নির্বাচন আগ মুহূর্তে। তাহলে অনেকটা সফলতা আসবে নির্যাতন বন্ধে এবং সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের নজরে আসে কি হচ্ছে বাংলাদেশে??? রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সবার ভূমিকা জরুরি।
    Total Reply(1) Reply
    • Mizan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:০৭ এএম says : 4
      Right
  • Md Elias Khan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
    আওয়ামী লীগ নয় মনে হয় যেন পুলিশ বিরোধী দলের প্রতিপক্ষ!
    Total Reply(0) Reply
  • Asif Bhuiyan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে বিরোধী দলীয় প্রার্থী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এতটাই ভীতসঙ্কিত যে, নিজের অফিস ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন তিনি। কারণ, নির্বাচনী প্রচারণায় হত্যা ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। ঢাকার এই আইনজীবীর এখন ভোটারদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাত করে প্রচারণায় রাজপথে থাকা উচিত ছিল হাতে লিফলেট নিয়ে। কিন্তু তার জন্য এ কাজ ভীষণ বিপদজনক। তার দল বলছে, প্রার্থীদের সুরক্ষা দিতে কর্তৃপক্ষ কিছুই করছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:০৯ এএম says : 0
    দেখেন আগের যুগে মানূষরা জানোয়ারের সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করিতে হইতো আর এখনকার যুগে মানূষ নামের হায়ানদের সাথে যুদ্ধ করিয়া বসবাস করিতে হইবে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ইনশাআল্লাহ। **********
    Total Reply(0) Reply
  • Md nurullah ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৫০ এএম says : 0
    ধন্যবাদ এএফপি। সর্বাধিক বাস্তব সংবাদ তুলে ধরার মধ্য দিয়ে কেবলই স্বৌরাচার বিতাড়িত করা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • Md nurullah ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৫৫ এএম says : 0
    ধন্যবাদ এএফপি। সর্বাধিক বাস্তব সংবাদ তুলে ধরার মধ্য দিয়ে কেবলই স্বৌরাচার বিতাড়িত করা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • নজির আহমেদ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:০২ এএম says : 0
    আওয়ামীলীগ একটি চাঠার ধল। এই চাঠার দল খেমতায় থাকলে দেশের মানুষ নিরাপত্তাহিনতায় ভুগবে। এই জন্যই এই চাঠার দলকে আমরা না বলি ।এবার আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শিষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচিত করি। তখন দেশে গনতন্ত্র আবার ফিরে আসবে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:০৫ এএম says : 0
    দেখেন আগের যুগে মানূষরা জানোয়ারের সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করিতে হইতো আর এখনকার যুগে মানূষ নামের হায়ানদের সাথে যুদ্ধ করিয়া বসবাস করিতে হইবে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ইনশাআল্লাহ। **********
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Amirul Islam ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৫৯ এএম says : 0
    Awami league appointmented all their pick pocketed, street Thief supporter in police league so they are doing these
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ