পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে। দলটির অধিকাংশ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় মস্তান ও পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় মানুষ মনে করছে জনবান্ধব দলটি যেন জনগণের ভোটকে ভয় পাচ্ছেন। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটকে কেন্দ্র করে সংসদীয় তিনশ আসনের প্রায় দুইশ আসনে দেখা যায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা মস্তান আর আইন শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করে একপক্ষীয় প্রচারণার চেষ্টা করছেন। অথচ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক আগেই দলের মন্ত্রী-এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মন্ত্রী-এমপিরা তখন জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলে হয়তো এখন তাদের মস্তান ও পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হতো না। ইনকিলাবের মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের তথ্য মতে সারাদেশের প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও শতাধিক এমপি এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে জনগণের বদলে মস্তান ও পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে নির্র্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ধানের শীষসহ অন্যান্য প্রতীকের প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা করাচ্ছেন; নির্বাচনের উৎসবমূখর পরিবেশ ‘বিষিয়ে’ তুলে ভোটারদের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপি ও দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, এবারের নির্বাচন আগের মতো (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) সহজ হবে না। নির্বাচন হবে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ। এখন থেকে এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলুন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নিন’। এরপর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের একাধিক সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘একই বার্তা’ দিয়েছেন।
এমনকি তিনি সংসদীয় দলের সভায় মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘জরিপ করা হয়েছে, আপনাদের যাদের অবস্থা খারাপ তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না’। মাস দু’য়েক আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক জেলা শহরে মহাসমাবেশে শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ভোটের প্রস্তুতি নিন। জনগণকে কনভিন্স করতে না পারলে এবার কিন্তু আপনাদের নেত্রীকে বেটে খাওয়ালেও কাজ হবে না।’ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার বলেছেন, ‘এমপিদের যাদের অবস্থা খারাপ তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না’। যদিও তিনি অনেকবার নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের দায় এড়াতে ‘হাইব্রীড’, ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘কাউয়া’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। এতো সতর্কের পরও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও সিনিয়র নেতারা সতর্ক হননি, প্রধানমন্ত্রীর কথা কর্ণপাত করেননি। তারা সকলেই কার্যত: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ভাবখানা শেখ হাসিনার ইমেজ তাদের আবার সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করে আনবে। মন্ত্রীসভার জাঁদরেল নেতা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এমপিদের একই অবস্থা। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদের প্রত্যাশা ছিল এবারও ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের আয়োজন করে তারা বিজয়ী হয়ে আসবেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে আসায় সেখানে ছাঁই পড়েছে। এখন হুমকি-ধমকি এবং বহিস্কারের হুংকার দিয়েও দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতা উঠিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। আর গণবিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে জনগণের কাছেও যেতে পারছেন না বহু প্রার্থী। বাধ্য হয়েই তারা ক্যাডার-মন্তান ও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের পোস্টার লাগাতে বাধা দিচ্ছেন, পুলিশকে ব্যবহার করে গ্রেফতার, হামলা-মামলায় হয়নারী করে নির্বাচনী মাঠ নিজেদের দখলে রাখছেন। এটা করতে গিয়ে নতুন কৌশলে পুলিশকে দিয়ে ‘গায়েবী মামলা’র আবির্ভাব ঘটাচ্ছেন। মেরুদন্ডহীন ইসির দুর্বলতার সুযোগও নিচ্ছেন জনবিচ্ছিন্ন ওই প্রার্থীরা। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে চরমভাবে।
তফসিল ঘোষণার পর প্রথম ৭দিন তারা মন্তান ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের ঠেকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখন অনেক এলাকায় ভয়কে জয় করে ধানের শীষসহ অন্যান্য প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করেন। ধানের শীষের প্রার্থীরা যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই জন স্রোতের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশী গ্রেফতার, হামলা-মামলার ভীতি কাটিয়ে উঠে ঐক্যফ্রন্টের কর্মী সমর্থকরা রাস্তায় নামছেন। ইনকিলাবের আঞ্চলিক অফিস, ব্যুরো অফিস, জেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা সংবাদদাতারা জানান, যেসব আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামছেন সেখানে সাধারণ মানুষ তাদের পিছনে ছুটছেন। ভীতি-আতঙ্ক কাটিয়ে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কনকনে শীতের মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামছে। মির্জা ফখরুলের ঠাকুরগাঁও ও বগুড়া, ব্যারিস্টার মওদুদের নোয়াখালী, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কুমিল্লা, মিজানুর রহমান মিনুর রাহশাহী, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল মামুনের চট্টগ্রামসহ যেখানে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামছেন, সেখানেই নামছে জনতার ঢল। নির্বাচনের তারিখ যতই এগিয়ে আসছে ততই গরম হচ্ছে নির্বাচনী মাঠ।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মাঠে নামবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের অভিমত সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। কারণ পুলিশ বাহিনী ক্ষমতাসীনদের তল্পিবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় তাদের প্রতি মানুষের আস্থায় ঘাটতি পড়েছে। কিন্তু দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষ শতভাগ আস্থাশীল। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মাঠে কে কোন দল করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেটা দেখেন না, তারা দেখেন কে অন্যায় করছে সেটা। ফলে সেনাবাহিনী মাঠে নামলে আওয়ামী লীগের যে সব প্রার্থী মস্তান ও পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করে প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে রেখেছেন তারা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাবেন। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় সন্ত্রাসী, মস্তান কোন দলের তা বিবেচনায় না নিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের কঠোরভাবে দমন করে থাকে। সেনা নামলে মন্তানরা দুর্বৃত্তায়ন করলেই ধরা খাবেন। আবার আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার সাহস পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক বার্তা এবং বার বার তাগাদা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের যারা প্রধানমন্ত্রীর ‘ব্যাক্তি ইমেজে’র উপর নির্ভরশীল থেকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তারা কার্যত: এবার নির্বাচনে ধরা খাচ্ছেন। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।