পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিনটি ঘনিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে ভোটের মাঠে প্রার্থী ও তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা গণসংযোগ দিন দিন জোরদার হচ্ছে। তারা বিরামহীন গতিতে ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লায়, হাটে-মাঠে সবখানে। যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়িঘরে। বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ চট্টগ্রাম জেলার উত্তর ও দক্ষিণের ১৬টি, তিন পার্বত্য জেলার তিন আসন মিলিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচনী আসন ১৯টি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট এ মুহূর্তে ভোটের ময়দানে জোর কদমে পদচারণায় ব্যস্ত।
উভয় জোটের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের আহ্বান-আওয়াজ পৌঁছে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সভা-সমাবেশে, গণসংযোগে, মাইকে, পোস্টারে, মিছিলে, ব্যানারে ভোটারদের কাছে সেই একই আকুল আবেদন- ‘ভোট চাই ভোট দিন’। ভোটাররা মনোযোগ সহকারে শুনছেন প্রার্থী ও নেতাদের বক্তব্য। নির্বাচনী ওয়াদা-আশ্বাস এবং পক্ষ-প্রতিপক্ষের আচার-আচরণ, কর্মকান্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন। আবার সচেতন মানুষজনের আলাপচারিতা ও আড্ডায় ভোটের মাঠের নানা প্রসঙ্গে মন্তব্য আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষ নেই।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা গত দশ বছরে বন্দরনগরীসহ সারাদেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। আবার নির্বাচিত হলে উত্তরোত্তর উন্নয়ন-অগ্রগতির অঙ্গীকার প্রদান করছেন। দেশ ও জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের ওয়াদা নিয়ে ছুটছেন নৌকা, লাঙল মার্কার প্রার্থীরা। সর্বত্র বাধা-বিঘ্নহীন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে মহাজোট। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিতে নৌকার প্রতি আবারও সমর্থন চাইছেন প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা। মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন বঞ্চিতদের মান-অভিমান ভাঙিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগে একাত্ম করা সম্ভব হয়েছে। নিজেদের অবস্থান আরো সংহত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তা সত্তে¡ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বস্তিতে নেই সরকারি জোট। কেননা বিএনপি জোটের পদচারণা বৃদ্ধি ও জনগণের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে শক্ত প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় বর্তমান মন্ত্রী-এমপি ও নতুন মুখ প্রার্থীদের মাঝে হারজিতের টেনশন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার তিনটি পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি উপজাতিদের দুইটি আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিইডএফ) কর্তৃক আওয়ামী লীগের ভোটে ভাগ বসানোর হিসাব-নিকাশ চলছে। ফলে এই পৌষের শীতেও ঘামছেন নৌকার হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। আর বিএনপি জোট মনে করছে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনে কঠোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই ভোটের ময়দানে দিনে দিনে তৎপর হয়ে উঠেছে বিএনপি জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সকল শ্রেণি-পেশার ভোটারদের কাছে ঐক্যফ্রন্ট দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে যাচ্ছে। ‘দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩০ ডিসেম্বর সবাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমেই গণরায়’ প্রদানের বার্তাটি ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। বিএনপি জোটের প্রচার-গণসংযোগ নির্বাচনমুখী তৎপরতা ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে। প্রচারের নিত্যনতুন কৌশলে তারা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। অতীতের জাতীয় নির্বাচনী ফলাফলদৃষ্টে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির মজবুত ঘাঁটি। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি জোটের তৃণমূলের কর্মীরা আগের চেয়ে এখন দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে উজ্জীবিত।
বিএনপি জোটের ভোটের প্রচার-প্রচারণায় মহাজোট সরকারের উন্নয়নের জবাবে বলা হচ্ছে, উন্নয়নের নামে গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের সুফল জনগণ পায়নি। শাসক মহলের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। জনদুর্ভোগ বেড়েছে। ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী প্রচারকালে সভা-সমাবেশে বলছেন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন না থাকায় সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেই তারা বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় রয়েছে। ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’ একথা আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকারসমূহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
শত প্রতিক‚লতা, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই ভোটের মাঠে টিকে থেকে এগিয়ে চলেছে বিএনপি জোট। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, সভা-সমাবেশে বিএনপি জোটের প্রার্থী এবং তাদের নেতা-কর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা, ভোটের প্রচার থেকে বিরত রাখতে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের কর্মী-ক্যাডারদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের ভ‚মিকা অনেক ক্ষেত্রেই শাসকদলের প্রতি পক্ষপাতমূলক।
অপরদিকে বিএনপি জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জানান, ঝটিকা গ্রেফতার আতঙ্ক, গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে পুলিশি হয়রানি। গত দুই সপ্তাহে বিএনপি জোটের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী, সমর্থককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। উচ্চ আদালতে জামিনপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদেরও পুরনো বা গায়েবি মামলা হুলিয়ার নামে ধরে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশি হয়রানি এবং আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কর্মী-ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলা, হুমকি-ধমকির উদ্দেশ্য যাতে বিএনপি জোট জগগণের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাতে না পারে। অর্থাৎ ভোটের প্রচার-গণসংযোগে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ ও সীমিতকরণ। বিরাজমান দ্বিমুখী বৈরী অবস্থা মোকাবেলা করেই বিএনপি জোটের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ নিয়েই তৎপর।
এরমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি আসন। তবে শত বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জে মাঠে তৎপর থাকার প্রত্যয় বিএনপি জোটের তৃণমূল কর্মীদের। দেশে গণতন্ত্র, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩০ ডিসেম্বর নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট বিপ্লবের উদাত্ত আহ্বান তুলে ধরছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।