পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘পিস্তল-বন্দুক দিয়ে গুলি করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, এই সরকারও পারবে না’ অভিমত ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। যারা বন্দুক পিস্তল দিয়ে গুলি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাদেরকে হুঁশিয়ার করে জানাতে চাই, পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, এই জালিম সরকারও পারবে না। পুলিশী জুলুমের মধ্যেই ভোট পাগল মানুষ জেগে উঠেছে। এখন দেশের সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে শ্লোগান উঠেছে ‘এক দফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি’। গতকাল কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দী মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনে সুয়াগাজী ফুলতলী মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে কুমিল্লার চান্দিনায় রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে কুমিল্লা-৭ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. রেদোয়ান আহমেদের নির্বাচনী পথসভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনে কোন নিরপেক্ষতা নেই। দেশে নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। এই নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন দেশে কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, না না, সব ঠিক আছে। তিনি সত্য কথা বলেননি। এই নির্বাচন কমিশনারও ভূয়া এবং সরকারও মিথ্যাবাদী। এই জুলুমবাজ সরকার ও ভূয়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) একসঙ্গে মিলে গণতন্ত্রকে জবাই করেছে। দুপুরে নির্বাচনী পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে। যদিও তাদের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। তারা ক্ষমতায় থেকে পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়।্ যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোন কাজ হবে না। লগি-বৈঠা দিয়ে, গ্রেফতার করে কোন লাভ হবে না। এবার মানুষ ধানের শীষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের একটি ভোট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। ৩০ ডিসেম্বর আপনারা দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোট দেবেন এবং ভোট গণণা শেষে না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ছাড়বেন না। ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন।
কুমিল্লা-৭ আসনে ( চান্দিনা) ধানের শীষের প্রার্থী রেদোয়ান আহমদকে ভোট দেবার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানান মির্জা ফখরুল বলেন, একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই কমিশনের একজন কমিশনার বলেছেন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন না না সব ঠিক আছে। এ সময়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘ভূয়া ভূয়া’ শ্লোগান দিতে থাকে। নেতা-কর্মীদের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ভূয়া, সরকার ভূয়া।তারা এক সাথে মিলে গণতন্ত্রকে জবাই করছে। আমরা বলতে চাই, জনগণ তা মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচনে কোনো নিরপেক্ষতা নেই। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এসব সব বুঝে। আমি বলতে চাই, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠায় সরকারের সব ষড়যন্ত্র ও কলাকৌশল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে।
গ্রামীণ জনগোষ্টির জীবনমানের উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, কৃষিখাত, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবাসহ বিএনপির ইশতেহারে নানা বিষয় তুলে ধরে বিএনপি তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, আমরা ক্ষমতায় গেলে সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টাণসহ সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের কথা বলেছি। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলমান তারা দাঁড়ি রাখেন। এখন দাঁড়ি রাখলে জঙ্গি বলা হয়। দাঁড়ি রাখার আমাদের কৃষ্টি ও ঐহিত্য। চান্দিনা ড. রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এই নির্বাচনী সভা হয়। সভার শেষ দিকে কুমিল্লা-৭ আসনে রেদোয়ান আহমেদ ও কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী মুজিবুল হকের হাতে ধানের শীষ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
সুয়াগাজীতে নির্বাচনী সভায় মির্জা ফখরুল :
একই দিন বিকালে কুমিল্লার সোয়াগাজী পুরাতন হেলিপ্যাড মাঠে এক নির্বাচনী সভায় কুমিল্লা-১০ আসনের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে মেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে আমার মেয়ে শাম্মী। এতো কথা বলেছে কার জন্যে ? তার তো আজকে জনসভায় কথা বলার কথা নয়। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা তার গবেষণা করার কথা, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর কথা। বাবার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি আজকে আপনাদের সকলের কাছে একটা করে ভোট ভিক্ষা চাইব। আমার হৃদয়ের বন্ধু মনিরুল হক চৌধুরী মুক্তির জন্য একটা ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি, আমি একটা ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, আমি ভোট চাচ্ছি কারাবন্দি নেতা গফুর ভুঁইয়া ও মোবাশ্বের আলী ভুঁইয়ার মুক্তির জন্য।
তিনি বলেন, আপনাদের যে ভাইরা এখানে সামনে যে ছোট ছোট ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে অনেকে ঢাকায় রিকসা চালায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা পালিয়ে থাকে ছেলেরা, হকারি করে তারা। এটা কী আমাদের স্বাধীনতার আশা-আকাক্সক্ষা , এটা কী স্বপ্ন। আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত স্বপ্নকে চূরমান করে খান খান করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।
কুমিল্লা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হুমকি দিয়ে বলে এখানে (কুমিল্লা-১০) ২৭ তারিখ থেকে নাঙ্গলকোর্টে আর কোনো বিএনপি থাকবে না। আমি বলি আপনি কে ? আপনি কি জমিদার ? আপনি কী রাজা? এই কথা বলার আপনি কে ? এই মাটি আমাদের, এই দেশ আমাদের । এখানে সবাই থাকব। ভোট দেবো ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের ভোট দিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করে আপনাকে এখান থেকে বিদায় করবো।
তিনি বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এই আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেবো। আমরা এদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন আজকে তারা এক হয়েছেন। আজকে বুঝতে হবে,জানতে হবে এখানে ধানের শীষকে জয়ী করতে না পারি তাহলে মনিরুল হক চৌধুরী বের হবেন না, গফুর ভুঁইয়া বের হবেন না, মোবাশ্বের আলী ভুঁইয়া বের হবেন না, হাজারো নেতা-কর্মী যাদের মিথ্যা মামলায় জেলে রেখে তারা কেউ বের হবেন না। সবচেয়ে বড় আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি হবেন না। ফিরিয়ে আনতে পারবো না আমাদের নেতা তারেক রহমানকে। সেজন্য জোটবদ্ধভাবে সাহস করে আমাদের দাঁড়াতে হবে। যতই বিপদ আসুক, যতই ভয় দেখাক, হুমকি দেখাক, যতই গ্রেপ্তার করা হোক কোনো কিছুর কাছে আমরা মাথানত করবো না। ৩০ তারিখ পযর্ন্ত জনগণের ঘরে ঘরে যান, ভোট চান।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান সরকারি দলের পক্ষ অবলম্বন করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ এনে অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। কারাগারে দীর্ঘ ১১ ধরে অনশনে থাকা মনিরুল হক চৌধুরীর প্রতি বিনীত আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, মনিরুল হক চৌধুরী জেলখানায় ১২দিন ধরে অনশন করছেন। কেনো? তাকে তার নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা করতে দেয় না। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচনে কোনো সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি এই মঞ্চ থেকে আহবান জানাতে চাই, আপনি কার কাছে দাবি জানাবেন। এদের তো কানে মোহর দিয়ে দিয়েছে আল্লাহ। এরা কিছু শুনতে পায় না, বধির। এদের বুকের মধ্যে কোনো দয়া-মায়া নেই, মানুষের জন্য মন কাঁদে না।। আমি বলছি এখানে লাখো মানুষ অনুরোধ জানাচ্ছে দয়া করে আপনি অনশন ভঙ্গ করুন, এদেশের মানুষের জন্য আপনি বেঁচে থাকুন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তির দিন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর মানুষের মুক্তির দিন। একজন এই সময়ে বললেন আপনি বঙ্গবন্ধুকে মনে করে রাজনীতি করেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্যা একটা ভোটের জন্য মানুষকে মারে। আপনাদের বলতে চাই, আলেমের ঘরেও জালেম হয়। আপনারা যদি শৃঙ্খলা রাখতে পারেন, উস্কানির মধ্যেও যদি শৃঙ্খলা রাখতে পারেন আমি বিশ্বাস করি একাত্তর সালে যেভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পারেনি, আগামী ৩০ ডিসেম্বরও এই সরকার পারবে না। দারোগা-পুলিশ দিয়ে যাই হোক নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না। ইনশাল্লাহ আপনারা যদি আপনাদের নেত্রীর মুক্তি চান তাহলে ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের ভোট দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সারাদেশে ধানের শীষের প্রার্থী একই জনই। তিনি হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। মনিরুল হক চৌধুরী, আমাদের মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকীর এরা ধানের প্রতীক মাত্র।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, তারা বলে তারা নাকী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আমি বলছি, আমরা স্বাধীনতার পক্ষে নয়, আমরাই স্বাধীনতা। যেখানে জিয়াউর রহমান আছে, যেখানে ড. কামাল হোসেন আছেন, যেখানে আসম আবদুর রব আছেন, যেখানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আছেন, যেখানে মান্না আছে সেখানে কী পক্ষ লাগে। আমরাই স্বাধীনতা। আপনাদের বলব, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, রাতে গ্রেপ্তার করছে, অত্যাচার করছে- এদিকে তাঁকাবেন না। আমার মনে হয়, এ সরকার ও তাদের পুলিশ ভয় পেয়েছে। তাই তারা আক্রমণ করছে। আমরা ভয় পাবোনা। ভোটের দিন সকলে ভোট কেন্দ্রে যাবেন।
সভায় অশ্রæসজল কন্ঠে মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ড. চৌধুরী সায়মা বলেন, আমার বাবা ছিলো মনিরুল হক চৌধুরী এই মাঠ, এই স্টেডিয়াম এসব মনিরুল হক চৌধুরীর। আজকে তাকে অন্যায়ভাবে তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। ৩০ তারিখ এর জবাব দিতে হবে ধানের শীষের ভোট দিয়ে। কুমিল্লার ছেলেরা মার খাচ্ছে তাদের মুক্তির দাবিতে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হউন। ৩০ তারিখ এক সঙ্গে ভোট দিতে প্রস্তুতি নিন।
এই নির্বাচনী সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মিয়া মোস্তাক আহমেদ, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফরি, সালাহ উদ্দিন ভূইয়া শিশির, শামসুদ্দিন দিদার, মইনুল ইসলাম বাবুল, শহিদুজ্জামান মজুমদার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।