পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার শীর্ষক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন
‘পুলিশ কেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) কথা শুনছে না’ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। নির্বাচনকালীন সময় সংবিধান অনুযারী প্রশাসনের সব দায়িত্ব ইসির ওপর ন্যাস্ত; অথচ পুলিশ চলছে সরকারের কথায়। পুলিশ যেন একটা পক্ষকে জিতিয়ে দেয়ার মরিয়া।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ভয়াবহ পরিণত হবে সর্তক করে তিনি বলেন, রাস্তায় রাস্তায় কেন এত পুলিশ? কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এমন অবস্থায় চলে গিয়েছে যে, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে? এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি; এরা কোন আইনের বলে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পুলিশের কোন ক্ষমতা নাই; কোন ক্ষমতা নাই। পুলিশ বিনা কারণে গ্রেফতার করছে। তা সংবিধান পরিপন্থী। কোনো নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা দেখিনি। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন। আলোচনা অংশ নিয়ে ড. কামাল হোসেন নির্বাচন কমিশন, পুলিশ বাহিনী, বিচার বিভাগ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহŸান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের আর যে ১০দিন আছে এই সময়ে দেশের মানুষ ও স্বাধীনতার জন্য নির্বাচন কমিশন ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করুন, নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগান। সরকার যদি পরিপন্থী কিছু করলে তবে তা থেকে বিরত রাখার, আদেশ দেয়ার ক্ষমতা আপনাদের আছে। পুলিশ যেভাবে ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে এটা থেকে মানুষকে রক্ষা করা অপরিহার্য্য বলে আমরা মনে করি। ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দেবে,এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। এইগুলো আপনাদের অবশ্যই জানা আছে। তবুও স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোন সংবিধান পরিপন্থি কাজ করে, এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন, বলেন পুলিশ সরান। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেশের জন্য ও দেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান ইনশাআল্লাহ ভালো নির্বাচন হবে। উজ্জল ভবিষৎ সামনে দেখা যাচ্ছে। আর এটা না করলে নির্বাচনের উপর কোন আঘাত দেয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। সরকার পুলিশকে মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে হয়রানি, গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা সংবিধানপরিপন্থী। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ যেভাবে গ্রেফতার চালাচ্ছে, সেটিকে লজ্জাকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ইসিকে বলেছি পুলিশকে কি আপনারা রাস্তায় রাস্তায় আক্রমণ করতে বাধা দিতে দায়িত্ব দিয়েছেন? রাস্তায় রাস্তায় কেন এত পুলিশ? কিসের জন্য দাড়িয়ে আছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এমন অবস্থায় চলে গিয়েছে যে, রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ দাড়িয়ে থাকবে? এটাকে যদি কেউ সুশাসন বলে, তবে আমি বলবো সে মিথ্যা বলছে।
ড. কামাল বলেন, লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সংবিধান পেয়েছি। এটা ভুলে গেলে চলবেনা। তথাকথিত নির্বাচনে যদি আপনারা ৩০০ সিট চান তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই। আপনারা চান আমরা দিয়ে দেই। সবাই হাত তুলে সম্মতি জানিয়ে দিয়ে দেই। শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বলেছেনই আরও পাচঁ বছর থাকতে চান, আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই। এ পাঁচ বছর পরে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আরও পাচঁ বছর থাকতে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য সময় এভাবেই বৃদ্ধি করা যায় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। সবাই বলবে আরও পাচঁ বছর থেকে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করি এটা নিয়মে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, (সরকার) আপনারা কোন ক্ষমতার বলে শাসন করছেন সেটা আমরা পরে বুঝব। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছেন। আজকে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলে দিচ্ছি, এখনই অবিলম্বে পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনের বলে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নাই।
এ ধরনের শাসন জীবনে কখনো দেখেননি দাবি করে কামাল হোসেন বলেন, এটাকে যদি সুশাসন বলা হয় তাহলে মিথ্যা বলা হবে। কী বলব এসব দেখতে হচ্ছে শুনতে হচ্ছে। এগুলো আমার জন্য শাস্তি। সাহস থাকলে পুলিশ দিয়ে তাকে ধরিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে কামাল হোসেন বলেন, উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে আমি একথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা, ধরেন আমাকে। আশ্চর্য স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে।
ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, পুলিশকে যদি এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন, বিশ্বাস করেন আমার কী হয় না হয় সেটা না, আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না, ইনশাল্লাহ। সেটা মনে রাখবেন।
সংবিধানের আলোকে চলতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লংঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার উপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক, স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার উপর আঘাত। এ আঘাত দেয়া উচিত না। এ আঘাত দেশদ্রোহের শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহ করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবে।
আজকে যে মানবাধিকারের কথা আমরা বলছি, সংবিধানে সে কথা স্পষ্ট করে বলা আছে যে, সরকার মানবাধিকার লংঘন করতে পারবেনা, পুলিশের এই ভূমিকা থাকবেনা। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরীত সংবিধানের মানবাধিকার, আইনের শাসনের কথা যেভাবে বলা আছে সেগুলো লংঘন করলে তাদের অসম্মান করা হয়, স্বাধীনতার লংঘন করা হয়।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি।
এ অবস্থায় আইনের শাসন, মানবাধিকার, ঐক্য সংগঠিত করে, ভোটাধিকার যেন সকলে প্রয়োগ করতে পারি সেসব নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমি যেটা দেখছি, ভোটাধিকার নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অমান্য করে দেশ চলতে পারে না। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
বিচারপতিদের প্রতি উদ্দেশ্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, কোর্ট যদি কোটের মতো হয়: তারা যখন বলে এটা স্থগিত করা কারো অধিকার নাই। অনেক জজ স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি হতে পারেননি। আমরা দেখেছি জজ সাহেবকে ছুটি দিতে হয়েছে। বলা হয়ে থাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। কিন্তু আসলে প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে যারা আশে পাশে যারা বসেন তারা সত্যিকার অর্থে যদি এটাকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে না পারেন তখন লিখে আমরা কোন কিছু ভোগ করতে পারি না। সেখানে লেখা আছে মুছে দেয়ার কারো সাহস নেই। বিচারকরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবে কারো আদেশ নির্দেশ পালন করবে না। শুধু সংবিধানের আদেশ মেনে চলবে। তিনি আরো বলেন, পদ পাওয়াটা বড় জিনিসি। প্রধান বিচারপতি হয়েও আপনাকে মনে রাখতে হবে অবসর যাওয়ার পর আপনাকে মানুষ শ্রদ্ধা করবে কি করবে না। যে সব জজ সাহেবরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করেন না পরবর্তীতে মানুষ তাদেরকে ধিক্কার জানায়।এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, যারা আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনা যদি গ্রহ না হয়ে থাকেন। তাহলে আপনাদের কাছে প্রার্থনা করছি আল্লাহ যাতে আপনাদের সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করতে দেন। ডানে বামে না তাকিয়ে সংবিধানে কথা মনে করে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা এখনো সুসম্মানে আছেন পরবর্তীতেও থাকেন। ৭২ সংবিধানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কথা লেখা আছে।
মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ) এর সভাপতি ড. মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব) নূরুদ্দিন খান, সাবেক আইজিপি ড. এম এনামুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।