Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বগুড়ার মাঠ শীতেও গরম বাতাস

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


হঠাৎই বগুড়ায় নির্বাচনী মাঠে অন্যান্য জেলার মতোই অস্থির ও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও শুরুর দিকে বগুড়ার নির্বাচনী পরিবেশ ছিল নিরুত্তাপ ও উৎসবমুখর। বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মধ্যে মহাজোট পূর্বের সবকটি আসনের বর্তমান এমপিদেরই মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটাই মুষঢ়ে পড়েন। কারণ এর ফলে শুধু বগুড়া ১ ও বগুড়া ৫ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থাকলো, বাকি ৫টি আসনের ১টি জাসদ ইনু ও ৪টি জাতীয় পার্টির ভাগে চলে যায়।
শুরুতে মহাজোটের এই আসন ভাগাভাগির কারণে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে বিএনপি। তবে গত সোমবার হাইকোর্টের আপিলেট ডিভিশনে বগুড়া ৩ ও বগুড়া ৭ আসনের বিএনপি মনোনীত ২ জন চূড়ান্ত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এখন জাতীয় পার্টির দু’জন কম জনপ্রিয় প্রার্থীর এমপি হওয়ার পথ সুগম হয়ে গেল। এই রায়টি বগুড়ার রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে বিএনপির রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও কৌশলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে বগুড়ার যে দুটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে, ওই দুটি আসনে বিএনপিরও শক্ত প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আলামত ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রস্তুতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া ১ সংসদীয় আসনে বিএনপির উপজেলা কার্যালয়টি রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই সংসদীয় আসনের অন্তত ৩টি ইউনিয়নে এবং প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিএনপির নেতা কর্মীরা পোস্টারিং করতে পারছে না, পারছে না গণসংযোগ করতে। এই আসনের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম সংষ্কারবাদী নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলেন। সম্প্রতি ভোটের আগে দলে ফিরে মনোনয়ন পেয়েছেন। অনেকের ধারণা, তার প্রতিপক্ষ কৌশলগতভাবে আগ্রাসী হয়ে হামলা করে তার দায়দায়িত্ব বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চালিয়ে দিলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে কাজী রফিকুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের আশা, এলাকার মানুষ যেহেতু কট্টর বিএনপি তথা ধানের শীষের সমর্থক তাই ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালনে নামলে তারা দু’চার দিনের মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারবেন।
বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট উপজেলাকে নিয়ে গঠিত ৫ সংসদীয় আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জিএম সিরাজ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে সংষ্কারবাদী হিসেবে সুপরিচিত। ১/১১’র পর থেকে তিনি এলাকার রাজনীতির সাথে ছিলেন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই ১২ বছরে এই এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলার সময় অনেকেই তার কাছে সাহায্য সহযোগিতার জন্য গেলে তিনি সবাইকে বিমুখ করেন। কেউ রাজনীতিতে ফেরার কথা বললে তিনি তাকে স্ট্রেইট বলে দিতেন, বিএনপি আর কামব্যাক করতে পারবে না, কাজেই বিএনপিতে ফেরার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর পরিস্থিতি অনুকূল মনে করে দলে ফেরেন এবং মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। ফলে তার বিরুদ্ধে বিরাট সংখ্যায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে।
এই ক্ষোভের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ তার গাড়ীবহরে হামলা ও তার পক্ষের কর্মীদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে। সেই সাথে এমপিপ্রার্থী সিরাজের ওপর হামলার পরপরই তার দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ওপর। এই আসনে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তবে এখানে ও বগুড়া ১ আসনের মতোই বিএনপির প্রার্থী ও তার সমর্থকরা আশা করে আছেন মাঠে সেনাবাহিনী নামার।
বগুড়া ২ (শিবগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। মনোনয়ন দাখিল ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখানে মাহমুদুর রহমান মান্নার গণসংযোগগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে তার প্রতিপক্ষ মহাজোট মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ প্রায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর ওপর ককটেল হামলা হয়েছে মর্মে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এটাকে স্থানীয় ভোটাররা হানাহানির সূচনা হিসেবে দেখছেন। তাদের ধারণা, এ ধরনের ঘটনাকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলার জালে জড়িয়ে ঘরছাড়া করা হবে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ইনকিলাবকে বলেছেন, যত মামলা হামলাই হোক না কেন তারা মাটি কামড়ে থেকে ভোট সম্পন্ন করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বগুড়ার ৪ সংসদীয় আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও জাসদ ইনু নেতা রেজাউল করিম তানসেন। একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ভোটে লড়ছেন ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন। অনলাইন জগতের আলোচিত/সমালোচিত মুখ হিরো আলম এই আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। বগুড়ার এই আসনটিতেই এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে।
বগুড়া ৬ (সদর) আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বিএনপির প্রার্থী হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষ মহাজোটের প্রার্থী ও সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরকে পরাস্ত করবেন। নুরুল ইসলাম ওমর জাতীয় পার্টির নেতা হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে কতটুকু সমর্থন করবেন তা নিয়ে জোটের মধ্যেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই আসনে এখন পর্যন্ত সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে তেমন সংঘাতের কোন আশঙ্কা নেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ