Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তারপরও থেমে নেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা

ঢাকায় বাধা হামলা হয়রানি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে অভিযোগ করে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর শ্যামপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তার উপর বারবার হামলা হচ্ছে। সকল বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রাক্তন এই সংসদ সদস্য। নানা শঙ্কার মধ্যেও গতকালও তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমার নির্বাচনী এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর আমাদের গণসংযোগ, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কার্যক্রমে পুলিশ ও আমার প্রতিদ্ব›দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর প্রার্থী সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা অব্যাহত বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে আমার শ্যামপুরের বাসাটি প্রধান অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে নেতা-কর্মীরা আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ভয়ভীতি দেখায়। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শত বাধা বিপত্তি ভোটাদের মুখ বন্ধ করতে পারেনি। তারা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা-১২ ও ১৩ আসনে গত দুদিন ধরে সমানে চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী প্রচারকাজ। নির্বাচনী আসন দুটি ঘুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রচারের চিহ্ন দেখা গেছে। বৃষ্টিতে পোস্টার ভিজে পড়ে গেলেও আওয়ামী লীগের মাইকিং ছিল জমজমাট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর পক্ষে হাত পাখার প্রচার ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণা কম ছিল। গতকাল বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রচারণার পাশাপাশি বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম খানের প্রচারণাও ছিল। দুপুরে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকাতে জোরালো প্রচারণা চালায় তার কর্মীরা। বিকাল ৩টায় আব্দুস সালাম খানের স্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
শুধু ঢাকার মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও বা শ্যামপুর নয়, দিন যতো যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার ২০টি আসন ও এর আশপাশের এলাকার ভোটের প্রচারের চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। মহাজোট প্রার্থীরা শুরু থেকেই মাঠ চষে বেড়ালেও ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা মাঠে নামতে শুরু করেছেন। বিএনপির প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে গণসংযোগকালে অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়ছেন বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা। বেশির ভাগ জায়গায় তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা ও হামলার মুখে পড়ছেন। কোনো কোনো জায়গায় সরাসরি বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তারপরেও থেমে নেই নির্বাচনী প্রচারকাজ।
একাধিকবার হামলার শিকার হয়েও থেমে থাকেননি ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস। গতকাল বুধবারও তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে ঢাকা-৯ আসেনর বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস আগের দিন হামলায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় গতকাল তিনি মাঠে ছিলেন না।
ওয়ারীতে গণসংযোগকালে ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী পুলিশের বাধার মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। গতকালও প্রচারণা চালিয়েছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে গরে ঘরে লিফলেট বিতরণ করছেন। তবে তার সমর্থকদের অভিযোগ, এলাকায় পোস্টার লাগাতে পারছেন না তারা। পুলিশ ও মহাজোটের কর্মীরা পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না।
রাজধানীর উত্তরখানে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগের সূচনা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলার মুখে পড়েন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু থেমে নেই এ এলাকার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। গত কয়েক দিন ধরে তিনিও গণসংযোগ করে চলেছেন। পুলিশের ভয়ে শত শত নেতাকর্মীদের পাশে না পেলেও অনেকেই তার প্রচারণায় সাড়া দিচ্ছেন বলে স্বপনের সমর্থকরা জানান।
ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার গণসংযোগ চলছে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই। নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে যাত্রাবাড়ী- ডেমরা এলাকা। ধানের শীষের পোস্টার না থাকলেও থেমে নেই এ আসনের বিএনপি প্রার্থী নবীউল্লাহ নবীর প্রচারণা। গত মঙ্গলবার তিনি কয়েকশ’ সমর্থক নিয়ে নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লার নিজ বাড়ি মাতুয়াইল এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। বিএনপি প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী বলেন, পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতেই দিচ্ছে না। রাতে অনেকেই ঘরে ঘুমাতে পারে না। নবীউল্লাহ বলেন, পুলিশ দিয়ে গণজাগরন ঠেকানো যাবে না। ইনশাল্লাহ নির্বাচনে মানুষ যদি ভোট দিতে পারে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।
ঢাকা-১১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী রহমত উল্লাহ। তার বিপরীতে আছেন বিএনপি নেতা কাইয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা বেগম। রহমত উল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। নৌকার পেস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরাও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন পুলিশ তার সাথে থাকা কর্মীদের ছবি তুলে নিচ্ছে। রাতে ওই সব কর্মীর বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তারপরেও তিনি ধৈর্য্য ধরে নির্বাচনী প্রচাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের নায়ক ফারুক। অভিজাত এলাকায় তিনি কয়েক দিন আগে থেকেই প্রচারকাজ চালাচ্ছেন। তার বিপরীতে ঐক্যজোটের প্রার্থী আন্দালিব পার্থ। অনেকটা নির্জনে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে পার্থকে। তবে দিন দিন এ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানান গুলশানের এক বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, পুলিশের ভয়ে নেতাকর্মীরা পার্থর কাছে ভিড়তে ভয় পায়। কিন্তু তারপরেও নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছে।
ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. এনামুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন। নৌকার পোস্টারে পুরো সাভার এলাকা ছেয়ে গেলেও বৃষ্টিতে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকাবাসী জানায়, ধানের শীষের প্রার্থী প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল করতে না পারলেও থেমে নেই এ আসনের প্রচারকাজ। সাধারণ মানুষ ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে বলে জানান দেওয়ান সালাহউদ্দিনের একজন সমর্থক।



 

Show all comments
  • abdul qayum ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:৪১ এএম says : 0
    This is a one sided report.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ