Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে আতঙ্ক সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর অপেক্ষায়

বিশেষ সংবাদদাতা, বরিশাল : | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

 নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি সংসদীয় আসনের জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি প্রায় চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে হলেও এখনো ভোটের মাঠের পরিস্থিতি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুক‚ল নয়। বেশিরভাগ নির্বাচনী এলকার সব প্রার্থীরা অবাধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। ক্ষমতাশীনদের হামলা আর পুলিশের মামলায় শত শত কর্মী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না বলেও অভিযোগ প্রতিদিনের। অনেক প্রার্থী এখনো অবরুদ্ধ নিজ বাড়ি ও এলাকায়। তারা সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় অবহিত করলেও পুলিশÑপ্রশাসনের খুব একটা প্রতিক্রিয়া নেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে মহাজোট ও তার প্রার্থীদের সম্পর্কে ক্রমশ বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে আমজনতার মধ্যে। 

ফলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রার্থী আর সাধারণ মানুষ এখন সেনাবাহিনীর অপেক্ষায়। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মতো দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতাও আশা করছেন ‘সেনাবাহিনী মাঠে নামলে দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটতে পারে’। এতেকরে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বচন নিয়ে নতুন আশার আলো জাগতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল। তবে যেহেতু সেনাবাহিনীকেও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণেই রাখা হচ্ছে, সেহেতু আপাদত ভরসার ঐ স্থান থেকে সাধারণ মানুষের আশা কতটা পূরণ হবে তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিকমহল।
এবারের সাধারণ নির্বাচনে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার ২১টি সংসদীয় আসনে ১২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে মহাজোট, ঐক্যফ্রন্ট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও কয়েকটি আসনে জাকের পার্টি ও জেপির প্রার্থীরাও রয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদেরই পদে পদে বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক প্রার্থীর প্রচারণায় বাধাসহ হামলা ও মামলার ঘটনায় জনমনেরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
অথচ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনকে ঘিরে একটি উৎসবের আমেজ তৈরী হবার কথা ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বচনের প্রতীক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কতিপয় প্রার্থী ও তাদের অতি উৎসাহী কর্মীদের কারণে ইতোমধ্যে গোটা নির্বাচনী পরিবেশ বিপর্যস্ত। ফলে আগ্রহ ইতোমধ্যেই আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকমহল।
বরিশালÑ১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জহিরুদ্দিন স্বপন এলাকায় এসে তার নিজ বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন। কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে মুখোশধারীরা। বরিশালÑ২ আসনের প্রার্থী সরফুদ্দিন সান্টুর প্রচার সভায় হামলার ঘটনা ঘটছে। পটুয়াখালীতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী জেলা সদরে কোন প্রচারণা চালাতে পারছেন না। পটুয়াখালীÑ৩ আসনে গোলাম মাওলা রনির প্রচারণায়ও হামলার ঘটনা ঘটছে। একই পরিস্থিতি পটুয়াখালী-২ ও চার নম্বর আসনেও।
ভোলা জেলার পরিস্থিতি আরো নাজুক। জেলাটির ৪টি আসনেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ভোলা-২ এর হাফিজ ইব্রাহীম ও চার নম্বরে নাজিম উদ্দিন আলমসহ প্রতিটি আসনেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বিঘেœ প্রচারণায় অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে মেজর হাফিজ ও হাফিজ ইব্রাহীমের বাসভবনে কয়েক দফা হামলা হয়েছে। সমগ্র ভোলা জেলা ইতোমধ্যে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল। তবে বানিজ্যমন্ত্রী ও ভোলাÑ১ আসনে মহাজোট প্রার্থী তোফায়েল আহমদ অভিযোগ করেছেন, ‘দুই হাফিজের কারণেই শান্ত ভোলা আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে’ ।
তবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে নির্বিঘœ প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীগণ। বর্তমান পীর সাহেবের ভাই মুফতি ফয়জুল করিম বরিশাল-৫ ছাড়াও ঝালকাঠী-২ আসনেও প্রার্থী এবার। ১৯৯১ থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা বরিশাল সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন আসনে অংশ নিলেও কখনো জামানত রাখতে পারেননি। এমনকি ২০০১-এর নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে নির্বাচন করলেও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩টি আসনের ১৮টিতেই জামানত হারাতে হয়। ২০০৮-এর নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন এককভাবে নির্বাচন করে বরিশাল সদরসহ বিভাগের ২১টি আসনের ১৭টিতে জামানত হারায়। ঐ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে এযাবতকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৭ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়েও জামানত ধরে রাখতে পারেনি তাদের প্রার্থী। অথচ ঐ নির্বাচনে ১/১১ সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীদের ফলাফল ভাল কামনা করলেও তা পূরণ হয়নি।
এবারো ইসলামী আন্দোলন সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক প্রচারণা নিয়ে আন্তরিকভাবেই ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। কিন্তু মহাজোট ভোটের লড়াইয়ে তাদের মূল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ইসলামী আন্দোলনকে কৌশলগত ছাড় দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল। মহলটির মতে, ‘ইসলামী আন্দোলন-এর ভোট যত বাড়বে বিএনপিসহ ঐক্য ফ্রন্টের ভোট তত কমবে’। এমন হিসেবই কষছে মহাজোটের নীতি নির্ধারকগণ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ