Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহাজোটের পথের কাঁটা বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র : মামলা-হামলা নিয়ে মাঠে ঐক্যফ্রন্ট

‘উৎসব’ বনাম ‘ভয়’

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘উৎসবের আমেজ’ দেখছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। অপরদিকে ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ, সর্বত্রই এখনও ‘ভয়ের পরিবেশ’ বিরাজ করছে। তারপরও জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত। জনগণের চাপের মুখে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে এমন প্রত্যাশা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের। 

প্রতীক বরারেদ্দর আগে থেকেই ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন, আমরাও চাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটযুদ্ধ। আর এটি নিশ্চিত হবে দুই পক্ষের জন্য সমান সুযোগ তৈরির মাধ্যমে। নির্বাচন পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারাও বলছেন, কারও প্রতি পক্ষপাত নয়, অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই তারা কাজ করছেন। দুই পক্ষের এ পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন সচেতন ভোটাররা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি সংসদীয় আসনে নৌকা, ধানের শীষসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। প্রচারণায় পিছিয়ে নেই অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। ভোটের প্রচারে মহাজোটের প্রার্থীরা কোন ধরনের বাধা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন না। কয়েকটি আসনের ব্যাপারে মহাজোটের প্রার্থীরা বলছেন, তাদের জন্য গলার কাঁটা হিসেবে মাঠে আছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই ঝামেলা মোকাবেলা করেই প্রচার চালাতে হচ্ছে। ভোটের প্রচারে নৌকার প্রার্থীরা প্রশাসনের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছেন।
মহাজোট প্রার্থীদের প্রচারের ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণায়। বিশেষ করে বিএনপি প্রার্থীরা ধানের শীষের প্রচার চালাতে গিয়ে নিত্য হামলার শিকার হচ্ছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমানের কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক।
ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার অধিকাংশ এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় পুলিশ এবং সরকারি দলের লোকজন বাধা দিচ্ছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে হয়রানি করার কথা বার বার অস্বীকার করা হচ্ছে।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও বিপরীত অবস্থানে প্রধান দুই জোটের প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামের সর্বত্রই বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নৌকার প্রার্থীরা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখছেন। জনগণের মধ্যেও ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোন ভয়ের পরিবেশের লেশমাত্র নেই। ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। সরকারি দল একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় হয়রানি ও ধরপাকড় করা হচ্ছে।
দুই পক্ষই দাবি করছে, ভোটের হাওয়া তাদের অনুকূলে। নৌকার প্রার্থীদের দাবি, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাটগাঁর মানুষ তাদের আবারও সমর্থন দেবে। ভিন্ন কথা ধানের শীষের প্রার্থীদের। তারা বলছেন, মানুষ ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন। সুযোগ পেলেই তারা দুঃশাসন গুম খুনের বিরুদ্ধে রায় দেবে। ধানের শীষের পক্ষেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
দুই পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সচেতন ভোটারেরা। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে এবং ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেনÑ এমন আশ্বাস দেয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সোমবার প্রার্থীদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়কালে দুইজনই জানিয়েছেন, তারা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পাওয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব নিরপেক্ষতার সাথে পালন করছেন। কারও প্রতি কোন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন না তারা। তাদের এ ভূমিকা ভোটের ফলাফল গণনা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচন টার্গেট রেখে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। নিয়মিত মামলায় অথবা আগের মামলায় যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভোটের পাঁচ দিন আগেই বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ