পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই দৃশ্যপট দ্রæত পাল্টাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের কুষ্টিয়ার পদ্মাপাড় থেকে বাগেরহাটের সমুদ্রপাড় পর্যন্ত। একপক্ষীয় শক্তির মহড়া অনেকটাই কমেছে। পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে মানুষ আর মানুষ। এ অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাধারণ ভোটারসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মানুষ বের হওয়ায় পরিবেশ শান্ত হয়ে আসছে। ভোটাররা উন্মুখ হয়ে আছেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১০ জেলার ৩৬টি আসনে দুই পক্ষই এখন কোমর বেধে মাঠে। ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে’ এমনভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী মহাজোটের নৌকা আর ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের মধ্যে।
এ অঞ্চলের রাজনীতি সচেতন মানুষ নির্বাচনের সামগ্রিক বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছেন। ভোট পÐিতরা রীতিমতো খাতা কলম নিয়ে বসে পড়েছেন কোন আসনে কোথায় কার কি অবস্থা, যোগফল কী হতে পারে-ইত্যাদি হিসাব নিকাশে। তাদের কথা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্ব›দ্বীপূর্ণ। দুই নির্বাচনী জোটই অস্তিত্বের লড়াই হিসেবেই দেখছে। সেই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখেই তারা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। কোন আসনে কার কার সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে এটি মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মূল লড়াইটা হয়। রেকর্ডে দেখা গেছে, একবার বিএনপি ও আরেকবার আওয়ামী লীগ আসনসংখ্যা বেশি পায়। এবার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা এখনো বলার সময় আসেনি।
রাজনীতি সচেতন মানুষের ভাবনায় জোরশোরে উচ্চারণ হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাই পারে সাধারণ মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে। তাই নির্বাচন নিয়ে সচেতন প্রতিটি মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সবারই কথা, ভোটাররা যাতে অবিস্মরণীয় স্বতঃস্ফ‚র্ততা ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য দক্ষ ও পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সর্বাগ্রে। কয়েকজন সাধারণ ভোটারের কথা, দশম সংসদ নির্বাচন একতরফা হওয়ায় বেশ কয়েকজন বিনাভোটের এমপির কর্মকাÐে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারা এলাকার সাধারণ মানুষের খোঁজ রাখেন নি। দলের স্বার্থও দেখেন নি। দেখেছেন ব্যক্তিস্বার্থ। তাই মহাজোট হোক আর ঐক্যফ্রন্ট হোক লোভজর্জর ব্যক্তি যেন অন্তত জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ না পায় সেদিকে দৃষ্টি দেবেন বেশিরভাগ ভোটার। ভোটারদের ভাবনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যত শঙ্কায় থাকুক না কেন, এবারের নির্বাচনে অন্তত ভোটকেন্দ্র দখল হবে না। তাদের বিশ্বাস, ভোটাররা নিবিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব থেকে গত কয়েকদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জনমত সমীক্ষা করা হয়েছে, নির্বাচনী জরিপে বরাবরই দৈনিক ইনকিলাব নিরপেক্ষভাবে সঠিক চিত্রটিই তুলে ধরে বলে বিদগ্ধ পাঠকের অভিমত। তারা বলেছেন, যারাই সরকারে থাকুক তাদের ভুলত্রæটি দৈনিক ইনকিলাব সবসময় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। জনগণ কি ভাবছেন তা তুলে ধরে। এতে কেউ নাখোশ হন, কেউবা খুশি হন। সত্য ও বাস্তবতার আলোকে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনে দৈনিক ইনকিলাব বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এখন অনলাইন ভার্সনেও পিছিয়ে নেই দৈনিক ইনকিলাব। অনেকেরই মূল্যায়ন হচ্ছে, ইনকিলাব কোন পক্ষের নয়, দেশ ও জনগণের পক্ষে, তাই কোন স্বার্থান্বেষী মহল বা প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে নতি স্বীকার করে না, কারো রক্ত চক্ষুকে কখনো ভয় পায় না ইনকিলাব সাংবাদিকরা। পদ্মাপাড় থেকে সমুদ্রপাড় যেখানেই গেছি লোকজনের সঙ্গে কথা বললে পরিচয় পেয়ে অনেকেই আগ্রহেভরে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনাদের জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ হবে কবে?
দুঃশাসন অবসানের স্লোগান নিয়ে মাঠে প্রার্থীরা
রেজাউল করিম রাজু
দুঃশাসনের অবসান আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্লোগান নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা সোচ্চার। বর্তমান এমপি, মন্ত্রীদের বিপক্ষে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী এমপিরা। সেয়ানে সেয়ানে। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। ভোটারদের মন জয় করতে প্রতিশ্রæতি আর বিষেদাগারের ফুলঝুরি। বিএনপির প্রার্থীরা আওয়ামী শাসনের বিগত দশ বছরের নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরছেন। তাদের দু:শাসন, বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র হরণ। ডিজিটাল আইন, বিরোধী দলের উপর দমন নিপীড়নের কথা। ব্যাংক লুটপাট, বেকারত্ব তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে চাকরির কোটা আন্দোলন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন নায্য আন্দোলনের উপর দমন নিপীড়নের বিষয়গুলো। বেকারত্বের ভয়াবহতা। চাকরিতে সরকার দলীয় ক্যাডারদের পুনবার্সনের কথা বলছেন। এছাড়া রয়েছে খুন গুম হামলা গায়েবি মামলার কথা। মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিএনপি শাসনামলে উন্নয়নের কথা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে দেশের বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের ধানের শীষের কাতারে আনার বিষয়টাও গুরুত্ব দিয়ে ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন। বলছেন দু:শাসন থেকে মুক্তি পেতে ধানের শীষে ভোট দেবার জন্য।
বসে নেই মন্ত্রী এমপিসহ ডাক সাইটে নেতারা। আগে থেকেই মাঠে ছিলেন। নির্বাচনের সময় নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়েছেন। বেশ দাপুটেপনা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাজানো মাঠে সমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন্ ফলে প্রচারণার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিপক্ষ প্রার্থীর চেয়ে। ক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার করছেন। তুলে ধরছেন আওয়ামী সরকারের বিগত দশ বছরের উন্নয়ন চিত্র। পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্পের কথা বলছেন। উন্নত দেশ হবার কথা। সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য ভোট চাইছেন। বলছেন এই মুহূর্তে দরকার শেখ হাসিনার সরকার। বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেকে তুলোধুনো করছেন। এদের স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি, জঙ্গিবাদ, মানবতা বিরোধী শক্তি হিসাবে চিত্রিত করছেন। চলছে চরিত্র হননের পালা।
ব্যানার ফেস্টুনের পাশপাশি চলছে প্রচারণা মিছিল শো-ডাউন। খরচও হচ্ছে বেসুমার। বিপক্ষের লোকদের দাবড়ানিতে রাখা হচ্ছে। কোথাও কোথাও তারা ভাল ভাবে প্রচার প্রচারণায় নামতে পারছেনা। তাদের ব্যানার পোস্টার গায়েব হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর হচ্ছে, হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রচার কর্মীদের। এমনি নানা অভিযোগ নিয়ে অসহায়ের মত যাচ্ছে রিটানিং অফিসারের কাছে। তারা বলছেন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঐ পর্যন্তই। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হামলা মামলা নির্যাতনে কোণঠাসা বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনের সুবাদে মাঠে নামছেন। তাদের প্রচার প্রচারণা সরকারী দলের মত না হলেও চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে দোয়া চাইছেন। তাদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কোথাও কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন। লিফলেট দিয়ে নীরবে চলে আসছেন। নির্বাচনের অসমতল মাঠ আর বৈরী আচরনের মধ্যদিয়ে মাঠে সক্রিয়।
রাজশাহীর চারটি আসন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সদর আসনে রয়েছে ওয়াকার্স পাটির ফজলে হোসেন বাদশা। যদিও তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীতল সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনে প্রার্থী না করার দাবি ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন। কিন্তু শীতলতার বরফ কতটুকু কমেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েগেছে। বলা হচ্ছে প্রার্থী নয় আমরা নৌকা মার্কা আর শেখ হাসিনার জন্য কাজ করছি। বিরোধিতার মুখেও দাপুটে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। নগরীর যত উন্নয়ন তার সতের বছরের সময় করা বলে ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। বাদশা সরকারের উন্নয়নের কথা বলছেন।
রাজশাহী-১ আসন গোদাগাড়ি তানোরে প্রার্থীতা নিয়ে শক্ত বিরোধীতা ছিল। এনিয়ে নিজেদের মধ্যে হানাহানি কম হয়নি। পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। হাইকমান্ডের নির্দেশে বিরোধী সেভেন স্টার গ্রæপকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রকাশ্যে যাই বলুক তবে বিরোধের ছাইচাপা আগুন কতটা নিভেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েগেছে। বিরোধের ফল আর তার সময়ে উন্নয়নের সুফল পেতে পারেন বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
রাজশাহী-৩ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দিন এমপির বিরুদ্ধে প্রচারণায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আসাদুজ্জামান। তিনি মনোনয়ন পাননি। হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রচার প্রচারণায় নামলেও শীতল সম্পর্ক কতটা উষ্ণ হয় দেখার বিষয়। সুবিধা পেতে পারেন বিএনপির নতুন মুখ অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। রাজশাহী-৫ আসনে ধনকুবের এমপি এনামুলের সাথে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ স্থানীয় নেতাদের বিরোধ তুঙ্গে। মনোনয়ন পাবার পর হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। প্রান গেছে নিজেদের একজনের। হাইকমান্ডের নির্দেশে হঠাৎ করে একসাথে মঞ্চে এলেও নির্বাচনের মাঠে তারা কতটুকু সক্রিয় হবেন ? এখানে বিএনপির আমলা প্রার্থী সাবেক এমপি আবু হেনা। এমনিভাবে প্রায় আসন ঘিরে সরকার দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে বিরোধের ছাইচাপা তুষের আগুন। যে ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে দিতে পারে। সরকার দলীয় প্রার্থীরা রাজসীক প্রচার প্রচারণা চালালেও ভেতরে রয়েছেন টেনশনে। তাকিয়ে আছে সব পর্যায়ে সাজিয়ে রাখা ক্ষেত্র গুলোর দিকে দিকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।