Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধীরে ধীরে ডুবছে ক্ষমতার সূর্য বারাক ওবামার বিদায়পর্ব শুরু

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষমতার সূর্য ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে তার দীর্ঘ বিদায়পর্ব।
তিনি তার পদে অবস্থানের বাকি সময়ের সর্বশেষ শক্তিটুকু নিংড়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক মনোনীত করেছেন, কিউবায় ঐতিহাসিক সফরে গেছেন এবং শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবে কিনা ব্রিটেনের সে বিতর্কে জড়িয়েছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদের শেষপ্রান্তে আসার পর প্রতি সপ্তাহে সময় ও প্রভাবের ক্ষয়িষ্ণু ছবিটি তার কিছু সরকারী কাজে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে, বাজতে শুরু করেছে বিদায়ের সুর।
শনিবার লন্ডনে টাউন হলে তরুণ ব্রিটিশ নাগরিকদের সাথে এক বৈঠকে আর কতদিন ক্ষমতায় আছেন শীর্ষক প্রশ্নের জবাবে ওবামা কৌতুক করে বলেন, আমার এখনো আরো কয়েক মাস সময় আছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৮ মাস এবং ৫২ দিন সময় আছে যা আমি হিসাব করছি না।
নিউইয়র্ক টাইমস এ সপ্তাহে খবর দিয়েছে যে ওবামার বিদায়ের উপলব্ধিযোগ্য লক্ষণ হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল সহযোগীরা সে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন যা আগামী জানুয়ারিতে সুবিশাল মার্কিন সরকারকে ৪৫তম প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত করবে।
এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য কম আনুষ্ঠানিক বিষয় যা শিগগিরই ক্ষমতার সাথে সম্পর্ক ঘোচাবে।
এ সময় ওবামার ব্রিটেন সফর বিদায়ী সফরের মতোই মনে হচ্ছে। তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ডেভিড ক্যামেরনের সাথে তাদের ক্ষমতায় থাকার দিনগুলো সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন। শুক্রবার ব্রিটিশ নেতার সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, ডেভিড ও আমার মধ্যে ছিল অসাধারণ অংশীদারিত্ব।
ক্যামেরন বলেন, আমি বারাক ওবামাকে সব সময় দেখেছি তিনি সন্তের মত পরামর্শ দেন। তিনি অত্যন্ত ভালো হৃদয়ের মানুষ। আমি জানি, তিনি যুক্তরাজ্যের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন ও সব সময় ভালো বন্ধু থাকবেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ব্রিটেনের রানিকে তার ৯০তম জন্মদিনের উপহার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সাথে তার ফটো নিয়ে একটি বই। তাতে ১৯৫১ সালে রাজকুমারী হিসেবে ওয়াাশিংটন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুমানের সাথে তার সাক্ষাতের ছবিটিও ছিল। এ উপহারটি ছিল এ মৌন স্বীকৃতি যে আগের অন্যদের মতই ওবামা প্রশাসনও শিগগিরই ইতিহাসের অংশ হবে।
ওবামা ইতোমধ্যেই তার সর্বশেষ স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণ, তার শেষ বাজেট বক্তৃতা দিয়েছেন ও শেষবারের মত আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বার্ষিক সেন্ট প্যাট্রিকস দিবস সফরের আয়োজন করেন।
সম্প্রতি তিনি পারমাণবিক নিরাপত্তা শীর্ষ বৈঠকের শেষ সভায় সভাপতিত্ব করেন যা কিনা তারই ব্রেনচাইল্ড। সন্দেহ রয়েছে যে তিনি প্রেসিডেন্ট না থাকলে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে গঠিত এ সংস্থা টিকে থাকবে কিনা। বছরের শেষদিকে তিনি বার্ষিক গ্লোবাল সামিটের শেষ সফর করবেন এবং এশিয়াতে বিদায়ী সফরে যাবেন।
বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে ওবামা শেষবারের মত তার প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোর একটি প্রেসিডেন্টের স্টাফদের মধ্যকার ইহুদিদের পাসওভার উপলক্ষে সিডার নৈশভোজের আয়োজন করবেন। আগামী সপ্তাহান্তে হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা সমিতির জন্য তার শেষ নৈশভোজে পীড়নকারী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলিষ্ঠ, বিদায়ী মন্তব্য করবেন।
এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সে সময় ঘটতে যাচ্ছে যখন কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখা যাচ্ছে যে মার্কিন জনগণ ওবামার আরো ভক্ত হয়ে উঠছে। তার প্রতি জনসমর্থনের পরিমাণ এখন ৫১ শতাংশ, তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তবে রিপাবলিকানরা তার প্রেসিডেন্ট পদের শেষ দিন গুনছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মেয়াদের শেষ বছরে তার পাশে থাকা বক্তৃতা লেখক জেফ সেশল বলেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদের শেষ দিনগুলো বেদনাদায়ক, সেইসাথে তা স্মরণ করিয়ে দেয় যে অফিসের শেষ দিনগুলোতেও অনেক কিছু করার রয়ে গেছে। সব সময় এ অনুভূতি জেগে থাকে যে সময় শেষ হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, স্টেট অব দি ইউনিয়ন শেষের সিরিজের প্রথম এবং তারপর একের পর এক চলতে থাকে। সত্যি বলতে কি, গ্রীষ্মের পর লোকজন হোয়াইট হাউজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। সবার দৃষ্টি তখন নিবদ্ধ থাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার দিকে।
মেয়াদের শেষ পর্যায়ে থাকা একজন প্রেসিডেন্টের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এক সরকারের সমাপ্তি থেকে আরেক সরকারের শুরুর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। এটা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ তখন যখন সন্ত্রাসের উদ্বেগ বিরাজিত থাকে।
প্রতিটি বিদায়ী প্রশাসনই তার রাজনৈতিক আলো ক্ষীয়মাণ হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ওবামা তার মেয়াদের শেষদিকে এসে তার প্রেসিডেন্সির ক্ষমতা সীমিত হওয়ার বিরুদ্ধে জোর লড়াই করেছেন। তিনি ইরান চুক্তি করেছেন, কিউবাতে গেছেন এবং অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তিনি মুসলিমদের ব্যাপারে বাগাড়ম্বর ও মার্কিন মিত্রদের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার জন্য রিপাবলিকান দলের অগ্রগামী প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ওবামার ব্যাপারে এ ধরনের প্রলম্বিত স্বাধীনতার ধারণাও আছে। ব্রিটেনের ইইউ রেফারেন্ডাম নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ রাজনীতিতে তার জোরালো হস্তক্ষেপ একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে যা অন্য যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্যই দ্বিধাজনক ছিল। সূত্র সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধীরে ধীরে ডুবছে ক্ষমতার সূর্য বারাক ওবামার বিদায়পর্ব শুরু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ