পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
গতকাল সকাল সকাল সাড়ে দশটায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলের ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
এই ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-কে স্লোগান এবং ২১ দফা অঙ্গীকার রাখা হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়ন জংশনে মিলিত হওয়া, ২০৪১ সালে সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো এবং ২১০০ সালে নিরাপদ বদ্বীপ পরিকল্পনাকে এই ইশতেহারে মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এছাড়া গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন তথা গ্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণসহ বিভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার করেছে দলটি।
ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার হল :
১. আমার গ্রাম, আমার শহর-প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; ২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; ৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; ৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; ৫. পুষ্টি সম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; ৬. সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; ৭. মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; ৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; ৯. দারিদ্র্য নির্মূল; ১০ সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; ১১. সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; ১২. সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; ১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা; ১৪. আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা- লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ; ১৫. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; ১৬. জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা; ১৭ ব্লু- ইকোনোমি- সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; ১৮. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; ১৯ . প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ; ২০. টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; ২১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারের উল্লেখ যোগ্য প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরা হল:
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা
আইনের শাসনের মূল বক্তব্যই হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই নীতির আরেকটি অর্থ হচ্ছে কেবলমাত্র সংবিধান ও নির্বাচিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।
প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনও প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
প্রজাতন্ত্রের কর্মবৃত্তে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মাপকাঠি শুধু জ্যেষ্ঠতা নয়; যোগ্যতা হবে। একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। নিশ্চিত করা হবে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ন্যায়পরাছুতা এবং সেবাপরাছুতা। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত করা হবে। নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার কাজ অগ্রসর করে নেওয়া হবে।
জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা
আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকবে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কাজ চলমান থাকবে। সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়াদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যানবাহন- সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কার্যের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ:
দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল:
আগামীতে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। সন্ত্রাসী-গডফাদারদের এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
স্থানীয় সরকার : জনগণের ক্ষমতায়ন
সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতি: উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ থেকে স্বাধীনতার ৭০ বছর ২০৪১। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের সূচকগুলোর বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং আপামর মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতি গণমনে আত্মবিশ্বাস ও সাহস এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর সম্ভব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার ৭০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কৌশল ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি। এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০৪১, অর্থাৎ ২০ বছর বাংলাদেশকে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ১০ শতাংশ ধরে রাখতে হবে।
এ জন্য কয়েকটি কৌশল ও পদক্ষেপও উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল:
বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে: ২০৪১ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপি-র ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।পর্যাপ্ত অবকাঠামো সেবা সরবরাহ করতে হবে। রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।ব্যাংক ও বীমা খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও গভীরতা এবং পুঁজিপণ্য সরবরাহ ও বৈচিত্র বাড়াতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানির শেয়ার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের লেনদেন দ্রুত নিষ্পন্ন করা হবে।
জনসংখ্যায় বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে: ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত ছিল ৬৬ শতাংশ, ২০৩০ সালে যা বৃদ্ধিপেয়ে হবে ৭০ শতাংশ। ২০৩০-এর পর থেকে এই হার কমতে থাকবে। এই জনমিতিক সম্ভাবনার সুফল বাস্তবায়নের জন্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে: রফতানি পণ্যের বৈচিত্র বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সীমিত সংখ্যক পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে রপ্তানি সম্প্রসারণ দুঃসাধ্য। রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য খাতভিত্তিক সমস্যাবলি সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) কালপর্বে গড় প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২৫) কালপর্বে এই হার গড়ে ১০.০ শতাংশ ছুঁয়ে যাবে।
কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে: আয়কর, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো হবে। মূসক আইন যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবায়নযোগ্য করে বিদ্যমান ইস্যুগুলোকে সমাধান করা হবে। ভ্রান্ত পৌনঃপুনিক কর আরোপ (কাসকেডিং) পরিহার করা হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও বিরোধ নিষ্পত্তির সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে কর কর্মকর্তাদের পুরস্কার বা প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রমকে অধিক কার্যকর করা হবে। আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে আয়করের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দ্বিগুণ করার জন্য অর্থাৎ জাতীয় আয়ের ৯ শতাংশ এডিপি-তে খরচ করার উদ্দেশ্যে বাজেট কৌশলে সমন্বয় করা হবে। বিদেশি অর্থায়নের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংক হতে ঘাটতি অর্থসংস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে: বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার এবং দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নের টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে। বাজার-ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সাথে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে। অর্থপাচার রোধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট)
অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে। পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপ লাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ
গ্রামকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বরাবরই বিবেচনা করে এসেছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেওয়া হবে।
গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’
একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ। জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট। তরুণদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।
শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাই এবং আত্মীয় পরিজনকে হারানোর পর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি রাজনীতি করছি শুধুমাত্র জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবন সমৃদ্ধশালী হয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বঞ্চনা থেকে তারা যেন মুক্তি পায়, তাদের জীবনটাকে আরো উন্নত করা- এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র কামনা।
যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই আদর্শ তিনি বাস্তবায়ন করতে চান উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করবো।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে।
কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনও আইন করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘স্বাধীনতাবিরোধী কোন শক্তি এ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্লাানিকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে আমার আকুল আবেদন আগামী ৩০ তারিখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন। আপনারা নৌকায় ভোটটি দিন। আমরা আপনাদেরকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।