Inqilab Logo

শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হামলা গ্রেফতার বাড়ছেই

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশের পরিবর্তে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। সময় যতই অতিবাহিত হচ্ছে সহিংসতার পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতীক পাওয়ার পর প্রথম দিনের প্রচারণায় ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মঈন খানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে এই হামলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল ও আ স ম আব্দুর রবের গাড়ীবহরেও হয়। কিন্তু হামলার ঘটনাটি আরও বেশি সহিংসতায় রূপ নেয় শুক্রবার থেকে। ওইদিন রাতে সিরাজগঞ্জে রুমানা মাহমুদের প্রচারণায় ওপর গুলিবর্ষণ করে। এরপর দিন শনিবার নোয়াখালীতে স্থানীয় পুলিশের ওসি বিএনপি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর গুলি করে। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। গতকালও (রোববার) এই হামলার ধারা অব্যাহত ছিল। বরং আগের দিনের তলনায় আরও বেড়েছে। এসব হামলায় এখন ধানের শীষের প্রার্থীদের মারধর, গাড়ী ভাঙচুর, বাড়িতে আক্রমণ, নারীদের লাঞ্চিত করা, দোকান-পাট ভাঙচুর করা হলেও নতুন করে যোগ হয়েছে গুলি করার ঘটনা। কোথাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি করছে অভিযোগ করলেও কোথাও বা পুলিশ নিজেরাই প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ছুড়ছে। গতকাল নরসিংদীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের ওপর হামলা এবং গুলি করা হয়। নোয়াখালীতে বিএনপি প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুক শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সেখানে তার ও নেতাকর্মীদেরও ওপর হামলা ও গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। ইনকিলাবের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের তথ্য ও বিএনপি সূত্রে জানা যায়, রোববার সারাদেশের ৩৬টি জেলায় বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে- নরসিংদী, নোয়াখালী, ঢাকা, ভোলা, পটুয়াখালী, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাঙামাটি, বাগেরহাট, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, শেরপুর, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, ফরিদপুর, যশোর, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশব্যাপী পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অস্ত্রের হামলায় গত কয়েকদিনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের শুধু কর্মীরাই নয় নেতারাও ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। এরা সবাই ধানের শীষের প্রার্থী। গুলিতে গুরুতর আহত ধানের শীষের প্রার্থীরা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। অথচ নির্লজ্জ নির্বিকারের মতো মিথ্যাচার করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। দেশে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা রক্তপাতের জন্য কেবলমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনারই দায়ী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব, নির্যাতন, হামলা, মামলা চলছে। মির্জা আব্বাসের ওপর হামলা হয়েছে। প্রার্থীর ওপর এভাবে হামলা হয়? নির্বাচন কমিশন, সরকার তাকিয়ে থাকে, কিছুই করে না। মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে, তিনি এখন চিকিৎসাধীন। সুব্রত চেব্রæরীর ওপর হামলা করা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। না হলে এর দায়দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।
যুবদলের কর্মীকে হত্যা: বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ঢাকায় গত শনিবার রাতে ধানের শীষের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়ে যুবদল নেতা রিপন মিয়াকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই দিন চট্টগ্রামে একজন বিএনপি কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরে ইপিজেড থানা পুলিশ রাত্রে ইপিজেড এলাকায় হানা দেয়ার সময় আতঙ্কিত হয়ে ছাত্রদল নেতা মোঃ রাসেল একটি দালানে উঠে পড়ে। পরে পুলিশ তাকে ধাওয়া করলে সে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে।
মঈন খানের ওপর গুলি : নরসিংদীর পাঁচদোনা বাজারে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ড. আব্দুল মঈন খানের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণাকালে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, ড্যাগার, রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। প্রথমে তারা ড. মঈন খানের গাড়ী ও আরো একটি গাড়ী ভাংচুর করে এবং তাঁর গাড়ী চালক ও সহকারীকে মারাত্মক আহত করে। এ সময় বিএনপির কর্মীরা মানব ঢাল সৃষ্টি করে ড. মঈন খানের জীবন রক্ষা করে। এ পরিস্থিতিতে রামদা, ড্যাগার ও চাপাতির আঘাতে নেতাকর্মীরা মাথা, শরীর ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম হন। বিএনপি কর্মী, বাজারের দোকানী ও পথচারীসহ ৫০ জনের অধিক আহত হয়ে নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জয়নুল আবদীন ফারুকের ওপর গুলি: নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুকের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ বিজয় র‌্যালী বের করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মিছিলটি নিয়ে তিনি সেনবাগ শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে তার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। এতে আহত হন- বিএনপি নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, পৌর বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম লিটন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাহেব উদ্দিন রাসেল, পৌর বিএনপির সেক্রেটারী শহিদ উল্যাহ, জাকের হোসেন, রহিম উল্যা, নোমান হোসেন, আ: হান্নানসহ ২০ জন। গুরুতর আহতদেরকে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইলে লতিফ সিদ্দিকীর ওপর হামলা: টাংগাইল-২ কালিহাতী আসনের গোহালিয়া ইউনিয়নের সড়াতৈল এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। লতিফ সিদ্দিকী ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীকে হামলার জন্য দায়ী করেছেন। এ হামলার প্রতিবাদে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি জানান, সকালে কালিহাতীর গোহালিয়া বাড়ি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার সময় সেখানকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খানের ইন্ধনে তার গাড়িবহরে হামলা করে। এতে তার ব্যাক্তিগত গাড়িসহ আরো তিনটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এসময় ইট পাটকেলের আঘাতে তার কয়েকজন নেতা-কর্মীও আহত হয়। তিনি বলেছেন যে পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হবে সে পর্যন্ত তিনি অবস্থান কর্মস‚চি পালন করবেন।
সাতক্ষীরায় ধানের শীষের প্রার্থী গ্রেফতার: সাতক্ষীরা-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ও জামায়াত দলীয় সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে শ্যামনগর থানা পুলিশ। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলা সদরের ইসমাইলপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা: ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী হাটখোলা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আক্রমণ চালায়। এতে দু’জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। সুব্রত চৌধুরী কোন রকমে নিজের জীবন নিয়ে একটি দোকানে ঢুকে পড়েন। নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কাছাকাছি অবস্থানরত পুলিশকে বলা হলে তারা বলে উপরের নির্দেশ নেই।
নাটোরে হামলা: নাটোর সদর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালানো হয়। তারা হাতুড়ি দিয়ে ধানের শীষের সমর্থকদের বেধড়ক পিটিয়েছে। এই হামলায় সাবিনা ইয়াসমিন গুরুতর আহত হয়েছেন।
ভোলায় হামলা : ভোলা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগের জন্য বাসা থেকে বের হলে এডিশনাল এসপি, ওসি এবং জেলা প্রশাসক ফোন করে বলেন, আপনি একা একা গণসংযোগ করবেন, সঙ্গে কোন নেতাকর্মী থাকবে না এবং মিছিল করতে পারবেন না। তারপরও তিনি রোববার শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতা আলমগীর, ফারুক, লিটন মেম্বার, ফজলু, ওয়াহিদ, মোশারেফ, জুলু, জহির, শিমুললসহ ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এদের মধ্যে ফজলুসহ ৪/৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। টাঙ্গাইলে হামলা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা লুৎফর রহমান খান আজাদের নেতৃত্বে গণসংযোগ চলাকালীন সময় এসপি আসানুর রহমানের ছোট ভাই ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার চার্জসিট ভ‚ক্ত আসামী শহিদুর রহমান মুক্তির নেতৃত্বে পাকুটি বাজার বাসস্ট্যান্ডে নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা দলীয় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা দেওলাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুস সামাদ ও ঘিওর বিএনপির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম খোকনকে পুলিশের উপস্থিতিতে গুলি করে। হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০/১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে নেতাকর্মীদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পূর্বদল ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক গোলাম মতুর্জা মুক্তা ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক জুয়েলকে গ্রেফতার করে।
চট্টগ্রামে হামলা: চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী আজিম উল্লাহ বাহারের পোস্টার সোয়াবিল ও হেয়াকো এলাকায় লাগাতে গেলে কর্মীদের উপর হামলা ও পোস্টার লিফলেট ছিড়ে ফেলা হয়। এ বিষয়ে প্রশাসন ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বরং পুলিশ পৌর বিএনপি নেতা মুনসুরকে বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে ইসহাক চৌধুরীর পোস্টার-ব্যানার লাগানো রসময় সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে হামলা করে। এতে ইউপি যুবদল সহ সভাপতি মোঃ শওকত আলী, ৭নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মারাত্মক আহত হন। তাদের অবস্থা আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের চাঁদগাও আবাসিক এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ১৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ৩টি মোটর সাইকেলে করে ৯ জন সন্ত্রাসী এসে গুলি ও বোমা বর্ষণ করে জয়বাংলা ¯েøাগান দিতে দিতে চলে যায়। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়াও একই আসনে বিনা কারণে ধানের শীষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করেছে বাকশালি পুলিশ।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন কারাবন্দী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেনের নির্বাচনী এলাকা চকবাজারে গণসংযোগ করার সময় পুলিশ আচমকা ধাওয়া করে বিএনপি নেতা সবুক্তিগিন সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে। চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সরওয়ার জামাল নিজাম ধানের শীষের প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বরুনছড়া ইউনিয়ন এলাকায় আাওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেতকর্মীদের উপর হামলা করে। এতে বটতলী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর, বারসাত ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, যুবদল নেতা সাহাব উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন সহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় থানা পুলিশ উল্টা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করে। এছাড়াও মহসিন মাজার এলাকায় ধানের শীষের পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানস্থলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ভাসানটেক থানা বিএনপি সভাপতি গোলাম কিবরিয়া মাখম ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মাসুমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ময়মনসিংহ-১১ আসনে ধানের শীষের প্রচারণাকালে একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়। নাটোর-৪ আসনে গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে বিএনপি কর্মীদের উপরে হামলায় মোহাম্মদ আলীর মাথা ফেটে যায় এবং তার দুই হাত ভেঙ্গে মারাত্মক জখম হয়। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আখাউড়ার সাবেক মেয়র প্রার্থী মন্তাজ কমিশনারের বাড়িতে ধানের শীষের মিটিং করার সময় অতর্কিত হামলায় ৪/৫ টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। বাগেরহাট-২ কচুয়া থানার কাঠাল ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আবুল বাশার শেখকে হাতুড়ী ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পা ও মেরুদন্ড ভেঙ্গে মারাত্মক জখম করা হয়। বিএনপি প্রার্থী এমএ সালাম সদর উপজেলার ত্রিঘাট বাজারে লিফলেট বিতরণের সময় ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক মনিরুজ্জামান ও থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসেরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লিফলেট বিতরণে বাধা দেয়। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রচার করা যাবে না বলে হুমকি দেয়। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলে। বরিশাল-১ আসনে গৌরনদী কাশেমাবাদ প্রার্থীর নিজ এলাকায় ১২টি বাড়ি ভাংচুর এবং মহিলাদের শ্লিলতাহানী করে। শেরপুরে কাকিলাপুরা ইউনিয়নে ঘরখোলা বাজারে ধানের শীষের সমর্থকদের পথসভায় হামলা এবং অফিস ভাংচুর, ককটেল বিষ্ফোরণ সহ গ্যারেজ থেকে পুরনো মটর সাইকেল বের করে রাস্তায় পুড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে এবং ঝিনাইগাতি বিএনপি কর্মী শহীদুল ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহŸায়ক বিপ্লবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোপালগঞ্জে প্রার্থীদের প্রচারনার মাইক চালাতে বাধা, পোস্টার পোড়ানো, রাতে প্রার্থীর বাসায় পুলিশ হামলা দিচ্ছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই মারধোর করছে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
নওগাঁওয়ের নিয়ামতপুর উপজেলার সুফিয়া বাজারে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাঙামাটিতে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলায় পৌর বিএনপি সভাপতি ও সাবেক পৌর প্রশাসক নিজম উদ্দিন বাবু, কাচালং কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি হুমায়ুন কবির সহ প্রায় ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাবু ও হুমায়ুনের অবস্থা গুরুতর। তাদেরকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মির্জা আজমের থানা মাদারগঞ্জ এলাকায় মাইক চালানো ও পোস্টার লাগাতে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। এবং পরে পুলিশ দিয়ে বিএনপি অধ্যুসিত ইউনিয়ন গুলোতে চিরুনী অভিযান চালিয়ে বিএনপির লোকজনকে গ্রামছাড়া করা হচ্ছে। সেই সব ইউনিয়নে পুরুষদেরকে না পেয়ে একটি বাসার মহিলার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং তার পেটে লাত্থি মেরে মারাত্মক আহত করে। একই সাথে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের জেল দেয় পুলিশ।
নরসিংদীতে ধানের শীষে প্রার্থী এস এম কবির জিন্নার নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে পুলিশের উপস্থিতিতে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিএনপির গাড়ী বহরে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১৪/১৫টি মোটরসাইকেল ও ৭টি গাড়ী ভেঙ্গে ফেলে। ১০/১২ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। আহত কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর।
সারাদেশে গ্রেফতার: হামলার সাথে সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনাও বাড়ছে প্রতিদিন। রোববার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ইমতিয়াজ আহম্মদসহ তিন জন নেতাকর্মী, হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ, রাজশাহীর বাগমারা থানা বিএনপি নেতা ডা. আব্দুল বারী, জোটের নেতা সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আকরাম হোসেনও খোদাবক্স মেম্বারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চারঘাট থানা বিএনপি’র সদস্য রফিকুল ইসলামকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহের মৌল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ও ছাত্রদল সাবেক সভাপতি সহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নাটোরে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মান্দা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, তেতুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম নাজমুল হক নাজু, তেতুলিয়া ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল জব্বার, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পরানপুর ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ও মান্দা উপজেলা ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রবিউল হাসান রবি, মান্দা উপজেলা যুবদল সভাপতি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান নান্টুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শেরপুরে ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য আশরাফ আলী, শহর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক রিপন, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, জেলা যুবদল সদস্য ফরিদ, ইউনিয়ন শ্রমিক দল সভাপতি শহীদুল, ২০ দলীয় ঐক্যজোট নেতা লুৎফর, জেলা যুবদল সদস্য নাজিম। নোয়াখালীতে সুবর্নচর উপজেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ বাচ্চু মিয়া, চর জুবলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ, জবালীয় ৯ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মিজানসহ এ.এইচ. বাহাদুর, কাদির, হানিফ সহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জে ৯জনকে, নওগাঁয়ের ধামইরহাট থানা যুবদল সদস্য কামাল হোসেন, ইউনুস ইসলাম ও পতœীতলা থানার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সোহরাব এবং একই থানাধীন আকবরপুর ইউনিয়ন ঐক্যফ্রন্ট নেতা সারোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকায় ৪১ নং ওয়ার্ড বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলীকে, শিল্পাঞ্চল থানা পোস্টার লাগানোর সময় ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ শরিফ, যুবদল সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সেলিম এবং যুবদল নেতা মিজান, আবু সুফিয়ান, শাহবাগ থানা বিএনপির নেতা মোঃ হাসান, কলাবাগান থানা বিএনপি সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, বিএনপি নেতা সবুজ, রিপন ও জসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে পুলিশসহ ১৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক জানান, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯ টায় গণসংযোগে যান পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের নতুন রাস্তায়। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। অবস্থা বেগতিক দেখে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রশিদসহ বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়।
কুমিল্লা : কুমিল্লার বরুড়ায় আওয়ামী লীগের অংঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমনের ধানের শীষ প্রতীকের নিবার্চনী প্রচারনায় ব্যবহৃত মাইক, সিএনজি, অটোরিক্স, নির্বাচনী অফিস, সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর, উঠান বৈঠকে বাধা, পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বরুড়া রির্টানিং কর্মকর্তা ও বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বরুড়া উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক স্বপন।
চান্দিনায় ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপির সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের ফতেহপুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন নেতাকর্মী আহত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ