Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধরপাকড়েও মাঠে ঐক্যফ্রন্ট

চট্টগ্রাম অঞ্চলে নৌকা-ধানের শীষের প্রচারণা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

হামলা, ধরপাকড়। বাড়ি বাড়ি অভিযান। তল্লাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন। যখন যাকে খুশি তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া। জামিনে থাকার পরও নতুন মামলায় আসামি করে দেওয়া। এমন ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হলেও মাঠ ছাড়ছে না ধানের শীষের প্রার্থীরা। তাদের সমর্থকরাও মাঠ ধরে রাখতে মরিয়া। বাধার পাহাড় মাড়িয়ে ভোটের প্রচারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। যতই দিন যাচ্ছে ততই দীর্ঘ হচ্ছে ধানের শীষের মিছিল। ভয়কে জয় করে মাঠে থাকার প্রত্যয় নেতা-কর্মীদের চোখে-মুখে।
প্রতিপক্ষের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে শীতেও কপালে হালকা ঘাম নৌকার প্রার্থীদের। তারাও জোরদার করছেন নৌকার প্রচারণা। সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা প্রার্থীদের। এবার খালি মাঠে গোল হবে না-তা ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন ভোটারেরাও। ফলে সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী প্রচারে আরও গতি সঞ্চারে মনোযোগী হবে প্রধান দুই পক্ষই-এমন অভিমত পর্যবেক্ষকদের।
এই অঞ্চলের ১৯টি আসনে আগে থেকেই মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা। মনোনয়ন নিয়ে কিছুটা জটিলতা ছিল। তবে প্রার্থিতা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের কোন জটিলতায় পড়তে হয়নি। পক্ষান্তরে বিএনপির বেশির ভাগ প্রার্থীকে নানা জটিলতা মোকাবেলা করে প্রার্থিতা পেতে হয়েছে। আর তাই তাদের মাঠে নামতেও সময় লাগে। মার্কা পাওয়ার পর পর নৌকা ও নাঙ্গলের প্রার্থীরা মাঠে নামতে কোন অসুবিধা হয়নি।
অন্যদিকে কয়েকটি এলাকায় বাধার মুখে পড়তে হয় ধানের শীষের প্রার্থীদের। প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ পার হলেও এখন মাঠ অনুক‚ল হয়নি তাদের জন্য। ধানের শীষের প্রার্থীদের অভিযোগ এখনও চলছে ধরপাকড়, বাসা-বাড়িতে তল্লাশি অভিযান। গতকাল বিজয় দিবসের দিনেও ধরপাকড় থেকে রক্ষা পাননি নেতা-কর্মীরা। হাটহাজারী উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে বিজয় দিবসের র‌্যালি ও শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শেষে পুলিশ মেখল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে।
শনিবার নগরীর কোতোয়ালী আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দি ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে ভোটের প্রচারে গিয়ে গ্রেফতার হন সাবেক কাউন্সিলর ও নাগর বিএনপির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সবুক্তগীন সিদ্দিকী মক্কি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে ভোটের প্রচার থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ চকবাজার থানা যে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় ওই মামলায় তিনি আগাম জামিনে ছিলেন।
একই দিন হামলা হয় ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের প্রার্থী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের প্রচার মিছিলে। এতে তার পুত্র অধ্যাপক ওমর ফারুকসহ আহত হয়েছেন অনেকে। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের প্রার্থী আবু সুফিয়ানের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলা হয়েছে স›দ্বীপে বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফা কামাল পাশার প্রচার মিছিলেও। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্র্থী এনামুল হক এনামের ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নগরীতে প্রতিদিনই নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের অভিযোগ হালিশহর থানায় বিএনপির একশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নতুন করে গায়েবি মামলা হয়েছে। এই মামলায় যাকে খুশি তাকে ধরছে পুলিশ। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রস্তাবকসহ গত কয়েক দিনে অন্তত ৭০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপির সহকারী দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আগের রাজনৈতিক মামলায় জামিন থাকার পরও তাদের ধরে নিয়ে নতুন নতুন মামলায় আসামি করে দিয়েছে পুলিশ।
এখনও কারাবন্দি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল আহসান নওফেল প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একের পর এক মামলায় শাহাদাতকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। আইনি জটিলতায় প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও এখনও ভোটের মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। কারাবন্দি এই দুই নেতাকে একের পর এক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলামও কারাগারে। জামায়াতের অভিযোগ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও বিএনপির প্রার্থীর অফিস ও প্রচারে হামলা হয়েছে বলে প্রার্থী শহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন।
কাউকে গ্রেফতারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা ফৌজদারি মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা লঙ্ঘন হচ্ছে না বলেও দাবি করেন নগর ও জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এতকিছুর পরও মাঠে সক্রিয় আছেন বিএনপি ও বিশ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ধানের শীষের প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরিবেশ এখনও তৈরী হয়নি। তারপরও ধানের শীষের প্রার্থীরা মাঠ ছাড়বে না। দলের অন্য নেতারাও ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন হামলা, গ্রেফতার আর ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে মাঠ ছাড়া করা যাবে না। যতই বাধা আসবে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার ততই প্রবল হবে।
ধানের শীষের প্রার্থীদের এই দুঢ় অবস্থানের কারণে নৌকার প্রার্থীরাও নড়ে-চড়ে বসেছেন। তারাও এখন আরও বেশি মাঠমুখী হচ্ছেন। কলহ বিরোধ কমিয়ে সবাইকে নৌকার পক্ষে মাঠে নামানোর নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকে। আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক দলের প্রার্থীরা দলের পাশাপাশি মহাজোটের শরিকদের এককাতারে আনার চেষ্টা করছেন। গতকাল বিজয় দিবসের নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ভোটের প্রচার চালিয়েছেন। প্রতিটি এলাকায় চলছে মার্কার পক্ষে মাইকিংসহ ভোটের প্রচার। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের কয়েকটিতে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বেশিরভাগ আসনে সমানতালে চলছে প্রচারণা।
যাদের নিয়ে এত আয়োজন সেই ভোটারেরাও সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। দশ বছর পর সব দলের অংশগ্রহণে আপাতত নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’। তবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনটিতে ভোটারদের অংশগ্রহণও পুরোপুরি নিশ্চিত করার চাপ তৈরী হচ্ছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ