পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ক্রমশঃ বাড়ছে। রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ দ্রুতই ওপরে উঠছে। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী ও তাদের কর্মীবাহিনী দিনরাত মানুষের কাছে ছুটলেও পরমত সহিষ্ণুতার অভাবসহ প্রতিপক্ষ দলকে কোন অবস্থাতেই ভোটের মাঠে আসতে দিতে রাজি নয় সরকার পক্ষ। ফলে ছোট-বড় গোলযোগ লেগে আছে প্রতিদিনই। এসব সংঘাত-সহিংসতায় আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা ভীতি ও শঙ্কাও বাড়ছে। ফলে বহু প্রতিক্ষিত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আকাঙ্খা পূরণ হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।
ভোলা-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপি’র হাফিজ ইব্রাহিম গতকাল পর্যন্ত এলাকায় যেতে পারেননি। ভোলা-৩ আসনের মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ-বীর বিক্রম গতকাল বিকল্প নৌপথে মেঘনা পাড়ের মঙ্গল সিকদার লঞ্চঘাটে পৌছে লালমোহনে নিজ বাড়িতে যাবার পথে অন্তত দশ হাজার মানুষ তার সফরসঙ্গি হন। বাড়ি পৌছে আগত জনতাকে বিদায় দেয়ার পরে তার বাড়ী অবরুদ্ধ করে ফেলে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। দুপুরের পরে মহাজোট সমর্থকরা তার বাসায় ঢুকতে চাইলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত পনের জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের এ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে। হামলাকারীরা পরে লালমোহন বাজারে মিছিল বের করে। মেজর হাফিজ নিজ বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। আতঙ্কে লালমোহন বাজারে দোকানপাটও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। লালমোহনের ওপর দিয়ে চরফ্যাশন-ভোলা রুটের বাস চলাচলও বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। এর আগের কয়েকদিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ঢাকার সদর ঘাট থেকে লঞ্চে আরোহনই করতে পারেননি।
বরিশাল-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপিতে সদ্য ফিরে আসা জহিরুদ্দিন স্বপন তিনদিন আগে এলাকায় ফিরে শরিকলের নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। রাতের আঁধারে তার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুখোশধারীরা নির্বাচনী প্রচারনায় না নামতে সতর্ক করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ আদেশ অমান্যকারীদের করুন পরিনতির বার্তা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদিনই ছোট বড় সহিংসতা লেগেই আছে। ভোলার প্রায় সবগুলো নির্বাচনী এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচারনায় অংশ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পটুয়াখালী শহর ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষকে কোন অবস্থাতে দাঁড়াতে দিতেও রাজী নয় বিশেষ সুবিধাভোগী মহলটি। হামলা ভাঙচুর সেখানে নিয়মিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গতকাল সেখানে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। গতকাল পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মাওলা রনির গাড়ীতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, গলাচিপায় বিএনপি প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির স্ত্রী রুনু বেগমকে বহনকারি গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। শনিবার গলাচিপা পৌরশহরের মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময়ে গাড়িতে অবস্থানরত প্রবীন বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবু তালেব মিয়া আহত হন। এ ঘটনায় পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। গোলাম মাওলা রনি এ প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করেছে, গাড়ীতে তার বোনও ছিল। অপরদিকে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটো জানান, এ হামলার ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দলের জের। তিনি আরও জানান গোলাম মাওলা রনি বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার অনেক আগে থেকেই গলাচিপা বিএনপি ত্রিধারায় বিভক্ত। গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বরিশাল ব্যুরো আরো জানায়, পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী ভোটের চেয়েও ভোটার ও তার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশী শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন। কোন ধরনের নিয়ম কানুন ও শান্তি-শৃঙ্খলা জেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই নির্বাসিত হতে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভোটারদের মধ্যেও নিরাপত্তার শঙ্কা বাড়ছে।
পটুয়াখালী শহর ও সন্নিহিত নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার বাউফল, গলাচিপা ও কলাপাড়াসহ প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পটুয়াখালী-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অলতাফ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে জেলা শহরে বিএনপি নেতাকর্মী কোন কাজ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন। তার সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার কথা জানান তিনি। পটুয়াখালী-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে মারাত্মক শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি আলীপুরে সভা করতে পারেননি। রাঙ্গাবালীতে নির্বাচনী সভায় হামলা ও ভাঙচুড়ের ঘটনা ঘটেছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
ঝালকাঠী-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জীবা আমীন খানের গাড়ি বহরে ইতোমধ্যে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ মহিলা প্রার্থী অনেকটাই নিরাপাত্তাহীনতায় বলে জানা গেছে। এলাকার সাধারন ভোটারদের মতে ঐক্যফ্রন্ট্রের এ প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়ে তার গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসমর্থনও বৃদ্ধি করছে মহাজোট কর্মীরা।
তবে এখনো অপেক্ষাকৃত শান্ত রয়েছে বিভাগীয় সদর বরিশাল-৫ আসনের চালচিত্র। এখানে এখনো পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল। মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের দুই প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে প্রচারণা চলছে। শুক্রবার মহাজোট প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক শামিম নগরীর জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে জুম্মা নামাজ আদায় করেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহাজোট প্রার্থী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও দুর্নীতির সাথে কোন ধরনের আপোষ করবেন না বলেও অঙ্গিকার করেন। তিনি শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন।
অপরদিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারওয়ার নগরীর বাইরে তার নির্বাচনী এলাকার সাহেবের হাট জামে মসজিদে জুম্মা নামাজ আদায় ও গণসংযোগ করেন। বিকেলে তিনি নগরীর এ করিম আইডিয়াল কলেজে কর্মীসভা ও গণসংযোগ করেন।
তবে এ নগরীতে প্রচারণায় সবার আগে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিম। তিনি বরিশাল-৫ ছাড়াও ঝালকাঠী-২ আসনেও প্রার্থী এবার। ১৯৯১ থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বরিশাল সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন আসনে অংশ নিলেও কখনো বিজয়ী হতে পারেনি। এবার পীরসাহেব কোন আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা না করলেও ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ ছাড়াও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক মাইকিং চলছে। তাদের সংঘবদ্ধ প্রচারণায় এখনো বড় কোন বাধার সৃষ্টি হলেও বরিশাল মহানগরীতে একটি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী আন্দোলন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।