Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চষে বেড়াচ্ছে মহাজোট মাঠমুখী বিএনপি জোট

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণসংযোগ জোরদার

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটের প্রচারণা গণসংযোগ দিন দিন জোরদার হচ্ছে। অবিরাম ছুটছেন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সরগরম প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার। ভোটারগণ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন প্রার্থীদের বক্তব্য, ওয়াদা-আশ্বাস এবং প্রতিপক্ষের বিষয়ে নানা সমালোচনা। বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ চট্টগ্রামের ১৬টি আসন এবং তিন পার্বত্য জেলার তিনটি আসন মিলিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের আহ্বান ও আওয়াজ পৌঁছে যাচ্ছে। মাইকে, পোস্টারে, মিছিলে, ব্যানারে ভোটারদের কাছে শুধুই একটি আকুল আবেদন- ‘ভোট দিন’।
সবখানে বাধা-বিঘ্নহীন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাকে আরও বেগবান করতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকার প্রতি পুনরায় সমর্থন কামনা করছেন মহাজোট প্রার্থীরা। বর্তমান নেতা-এমপিরা দাবি করছেন, তারা নৌকার পক্ষে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
তবে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পদচারণা বৃদ্ধির সাথে সাথে চট্টগ্রামের সবখানে মহাজোট আগের মতো সেই ফুরফুরে মেজাজে নেই। শক্ত প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় নেতা-কর্মীদের মাঝে হারজিতের টেনশন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটের মাঠমুখী তৎপর হয়েছে বিএনপি জোট। গায়েবি মামলার ভয়-ভীতি, প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্ক, হুমকি-ধমকি অতিক্রম করে ধানের শীষের প্রার্থীরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। গত ১০ ডিসেম্বর চ‚ড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকে গত প্রায় এক সপ্তাহে অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি জোটের কর্মীরা ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ইতামধ্যে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) এবং চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থক নেতা-কর্মীরা এলাকায় জনগণের মাঝে পৌঁছে প্রচারণা-গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বলছেন, তারা দীর্ঘদিন পর অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যেই জনগণের কাছে যাচ্ছেন। যেখানেই যাচ্ছেন পরিবর্তনের পক্ষেই জনসমর্থন দেখতে পাচ্ছেন।
এর মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর চকবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সবুক্তগীন সিদ্দিকী মক্কীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে প্রচারণা ও গণসংযোগ করছিলেন।
মহানগরীর তিনটি আসনের প্রতিটিতে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় সরজেমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বিপরীত রাজনৈতিক মেরুতে অবস্থান সত্তে¡ও মহাজোটের নৌকা এবং বিএনপি জোটের ধানের শীষের প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দের ভোটের প্রচারণা-গণসংযোগের ক্ষেত্রে বর্তমান সময় পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে সংযত আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারকালে যাতে জনগণের মাঝে শঙ্কা-আতঙ্ক তৈরি না হয়, বরং ভোট উৎসব বজায় থাকে এবং পরস্পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বজায় রাখার পক্ষে বক্তব্য রাখছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে সৌহার্দ্র ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশের বলিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক এবং অপর প্রার্থী ও নেতৃবর্গ। প্রধান দুই জোটের প্রার্থী ও নেতাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চট্টগ্রামবাসী ইতিবাচক চোখে দেখছেন। সাধারণ মানুষ চায় এই শান্তি-সম্প্রীতি যাতে ভোটের দিনও অটুট থাকে। তাহলেই ভোটাররা নিরাপদে খুশীমনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে আবার নিরাপদে ঘরে-বাড়িতে ফিরতে পারবেন।
কিন্তু কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উশৃঙ্খল কর্মী-সমর্থকদের উসকানি, হামলার ঘটনা ঘটছে এমন অভিযোগও রয়েছে। এ কারণে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের স্বাভাবিক গতিতে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের নির্বিবার কিংবা পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আবার যখন-তখন পুরনো গায়েবি মামা হুলিয়ার নামে পুলিশ ধানের শীষের প্রচারণা-গণসংযোগকালে নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমনটি অভিযোগ করে প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের কাছে এর প্রতিকার চাইছেন।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের সমর্থিত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ধানের শীষের প্রচার ও গণসংযোগে আওয়ামী লীগের হুমকি, বাধা-বিপত্তি ও হামলা, পুলিশের হয়রানি ও একপেশে ভ‚মিকা পালনের অভিযোগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের শরিক তরিকতের নৌকার প্রার্থী এবং আপেল প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে মারমুখী অবস্থানের কারণে এলাকাবাসীর মাঝে বিরাজ করছে পরবর্তী সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় ভয়-ভীতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ