Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি- ড. কামালের ওপর হামলা ফৌজদারি অপরাধ, গ্রেফতারের ক্ষমতা আছে সেনাবাহিনীর

গাড়িবহরে হামলার তদন্ত হবে --স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:১৬ পিএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলা দুঃখজনক এবং এটি ফৌজদারি অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। এ বিষয়টি তদন্তে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে ইসি প্রতিবেদন চাইবে বলে জানান তিনি। কেএম নূরুল হুদা বলেন, সেনাবাহিনী সিআরপিসি অনুযায়ী পরিস্থিতি বিবেচনায় আটক করতে পারবে। তবে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শনিবার বিকালে কমিশন বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন। নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
সিইসি বলেন, ড. কামালের বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি একজন সিনিয়র সিটিজেন ( জ্যেষ্ঠ নাগরিক) এবং প্রখ্যাত লোক। এটি কাম্য নয়। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। যেভাবে ব্যবস্থা হয়, সেটা হবে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএনপির পক্ষে থেকে একটি আবেদন করেছে। আমরা নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠাব। তারা যেভাবে রিপোর্ট দেবে, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি, গ্রেফতার বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপিকে ফের চিঠি দেবে ইসি। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেয়া হবে। সিইসি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই তাদেরকে যেন অহেতুক হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাল-পরশুই আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব। আগেও বলেছি নিষ্প্রয়োজনে কাউকে যেন গ্রেফতার না করা হয়। যারা নেতা রয়েছেন, তাদের যদি কোনও ফৌজদারি অপরাধ না থাকে যেন অহেতুক হয়রানি না করে। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে বের হওয়ার পথে শুক্রবার সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা হয়। তিনি অক্ষত অবস্থায় ফিরলেও তাঁর এবং জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের গাড়িসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাত-আটটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। আহত হন ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী-সমর্থক। এই ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানানো হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, নির্বাচনের সময় ভোট কক্ষের ভেতর থেকে সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারলেও লাইভ দিতে পারবে না। সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে। সেনাবাহিনী সিআরপিসি মেনে গ্রেফতার করতে পারবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকের নামে আগেই ফৌজদারি মামলা ছিল। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি দেখবে। সিইসি বলেন, আচরণ বিধি, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ, সাংবাদিকরা কি কার্যক্রম চালাবেন বা সুযোগ, সুবিধা পাবেন তা নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আচরণ বিধি প্রতিপালন নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে টেলিভিশনগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার হবে।
কেএম নূরুল হুদা বলেন, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- ভোট কক্ষের ভেতরে কোনও লাইভ প্রচার করা যাবে না। কেন্দ্রে সীমিত আকারে সাংবাদিকদের যেতে হবে, যাতে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অসুবিধা নয় হয়। বাংলাদেশি পযবেক্ষদের জন্য নীতিমালা আছে, বিদেশীদের জন্যও নীতিমালা আছে। সেগুলো মানতে হবে। কেন্দ্রের ভেতরে বেশিক্ষণ থকতে পারবেন না। ভোট কক্ষের বাইরে করতে পারবেন। সিইসি বলেন, যেখানে ভোট পরিচালনা করা হয়, যেখানে পোলিং প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট বসেন, সেখানে লাইভ করা যাবে না। বারান্দায় এসে লাইভ করা যাবে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের কাজে যেন ব্যাঘাত না করে, এজন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোট কক্ষে গিয়ে যদি ৩০-৪০জন যান, তারা একসঙ্গে গেলে তো তারা কাজ করতে পারবেন না। প্রিজাইডিং অফিস বলবেন কতজন যেতে পারবেন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনার ওপর রেসপ্যাক্ট থাকতে হবে। তার কথা মানতে হবে। তিনি বলেন, ভোট কক্ষের ভেতরে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। তবে মোবাইল ব্যাংকিং ও ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
আচরণ বিধি ভঙ্গের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছি ১২২টি। তাদের কাছে অভিযোগ করলে ভাল হয়। নির্বাচনের দায় দায়িত্ব বেশিরভাগ রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে। এছাড়া নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আছে, তাদের কাছেও অভিযোগ দেওয়া যাবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে বলেও মনে করার কথা জানান সিইসি। তিনি বলেন,প্রার্থীরা প্রচার কাজ চালাতে পারছে। আমি মনে করি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে।৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ ডিসেম্বর শেষ হবে নির্বাচনী প্রচারের সময়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শনিবার সকালে রাজধানীতে ‘পতাকার বিজয়’ শিরোনামে আয়োজিত জাতীয় পতাকা নিয়ে এক মিছিল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বলছি এটা তদন্ত করে নিই। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর ড. কামাল হোসেনের দুর্ব্যবহার কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আমি আগেই বলেছি, ড. কামাল হোসেন যে রাজাকার আল-বদরদের সব সময়ই ঘৃণা করেছেন, আবার তার পরেরদিনই সেই দলেই যোগ দিয়েছেন। সেই দলে যোগ দিয়েছেন অনেক নেতা যারা নাকি মুখে অনেক কিছুই বলতেন, তাঁরা আবার সেইখানে যোগ দিয়েছেন। কাজে এ দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে, এই দেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে এরা কী চায়।
এখনো দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢালাও গ্রেফতার চলছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন করে কোনও ওয়ারেন্ট হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ওয়ারেন্ট ছিল। গত শুক্রবার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের গাড়িবহরে হামলা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পতাকার ডিজাইনার শিব নারায়ণ দাস, বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ