Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মরব তবু সরব না

ঐক্যফ্রন্টের রোডমার্চ আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

‘মরব তবু নির্বাচন থেকে সরব না’ দৃঢ়তার সঙ্গে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, হামলা মামলা করে গণধিকৃত এই সরকার ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। আমরা পাতানো ফাঁদে পা দেব না। ৩০ তারিখে ব্যালটের লড়াই করতে চাই। নির্বাচন থাকব। মরব, সরব না। এই স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিতে চাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন। ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হওয়া এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিাপট নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় হামলার শিকার হওয়ার বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা একটি সভ্য দেশ। যারা দেশ শাসন করছে, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। আমার ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নাও। এর আগে সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফেরার সময় ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলা হয় বলে গণফোরামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকারকে বলব বেআইনি আদেশ দেয়া বন্ধ করুন। আপনারা আইন মেনে চলুন। সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না। জেনে রাখো এই দেশে কোনো সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না। এত লক্ষ শহীদ হয়েছেন, বুদ্ধিজীবীরা শহীদ হয়েছেন। তারা শহীদ হয়েছিল যাতে আমরা মাথা উঁচু করে অধিকার নিয়ে বাঁচব। এই স্বাধীন দেশে ৪৭ বছর পরে যা দেখতে হচ্ছে- লজ্জা পাওয়া উচিত যারা দেশশাসন করছেন। লজ্জা পাও লজ্জা পাও, লজ্জা পাও। লজ্জা পেয়ে মুখটা দেখাও না। মুখটা একটু ঢেকে এদিক-ওদিকে থেকে ১০-১৫ দিন কাটিয়ে দাও। তোমাদের মুখ দেখব না, যারা এসব অন্যায় কাজ করছে। অবিলম্বে তা বন্ধ করো।
গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ রেখে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার বিশ্বাস দেশের মানুয়ের প্রতি একশত ভাগ আস্থা আছে। তারা সঠিক বিচার করবে, তারা সংবিধানকে সম্মুন্নত রাখবে, তারা আইনের শাসনকে দেশে ফিরিয়ে আনবে। আর যারা এসব অন্যায়-অনিয়ম-অসাংবিধানিক কাজ করছে তাদের থেকে আমাদেরকে মুক্ত করবে। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে আমাদের নেতারা বলেছেন, থানার সামনে ওরা পাহারা দিয়ে রেখেছে। আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এই যদি হয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, তাহলে কিসের নির্বাচন? তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সকালে তারা আমাদের ওপর বর্বর হামলা করে। ইটপাটকেল, হকিস্টিক দিয়ে হামলা করে। এটি পরিকল্পিত হামলা। তারা চায় আমরা যেন নির্বাচন করতে না পারি। আমরা জনগণকে এখন প্রতিরোধের নির্দেশ দিচ্ছি না। আমরা ৩০ তারিখে ব্যালটের লড়াই করতে চাই। নির্বাচন থাকব। মরব, সরব না।এই স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে যাব সেখানে আক্রমণ করা হবে এটা অবিশ্বাস্য। এই অবিশ্বাস্য কাজগুলো সরকার ও তার দলের লোকজন কেন করছে এটা সকলের বোধগম্য। কারণ তারা হারতে চায় না। এত খুন-গুম, এত দুর্নীতি-লুটপাট করেছে যে তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। অথচ আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম যে, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না।
নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো হয়ে আছে। সাংবিধানিক পদে বসে রয়েছেন অথচ কিছুই করেন না সিইসি। তিনি মিন মিন করে বলেন আমরা বিব্রত। সিইসি আপনারা স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনাদের বিব্রত হওয়ার কথা নয়, ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা, ব্যবস্থা নেয়ার কথা। আপনারা কী মসজিদের ইমাম নাকি। আমি ইসিকে বলব, আজকের ঘটনাসহ গত কয়েক দিনের ঘটনার বিচার ব্যবস্থা নিন। না নিতে পারলে ব্যর্থতার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। এটাই তাদের জন্য সম্মানজনক হবে। মনে রাখতে হবে তারা প্রজাতন্ত্রের মানুষ, সরকারের না। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছি। কিন্তু ৩০ তারিখে এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। শনিবার এখান থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত লংমার্চ করব। ১৬ তারিখ বিজয় দিবসে আমরা বিজয় র‌্যালি করব। আমরা বিজয় দিবসে দেখিয়ে দেব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলা করার মতো কোনো মানুষ এদেশে আছে বলে আমার জানা ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার জন্য আজকে এ ঘটনা ঘটাল তারা। আমার কথা হলো, তোমরা এমন কী করেছো যে ক্ষমতা হারানোর ভয় পাচ্ছো?
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সেনাবাহিনীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মনে রাইখেন আপনারা, নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, আপনাদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এই যে একেকজন সাত/আট লাখ টাকা, ২০ লাখ টাকা আনেন, সেই সুযোগ-সুবিধা চলে যাবে। আপনারা দেশবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালন করেন, আপনাদের আমরা ভালবাসি, নিজের দেশের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, কথা ছিল ১৫ তারিখ থেকে সেনাবাহিনী নামবে। এখন আবার তারিখ বদলায় দিয়েছে। আমরা বলছি, সামরিক বাহিনী এই দেশের প্রতিষ্ঠান, জনগণের প্রতিষ্ঠান। জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব আছে। সুতরাং আমরা বলতে চাই ১৫ ডিসেম্বর থেকেই মাঠে নেমে পড়ুন। শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে, গাড়ি নিয়ে ঘুরলেই হবে। কাউকে ধরতে হবে না, গ্রেফতার করতে হবে না। জনগণের মধ্যে আওয়াজ উঠছে আমার অধিকার আমি প্রতিষ্ঠিত করব। ভোট দিতে যাব। ড. কামাল হোসেনকে দরগা জিয়ারত করতে দেবে না, সেখানে পুলিশি হয়রানি। জনগণের এখন একটাই চাওয়া, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করুক। তিনি বলেন, শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকায় নয়, আমাদের কাছে তালিকা আছে। সারাদেশে বিভিন্ন রকম কায়দায় হামলা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রক চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী প্রমূখ।
ঐক্যফ্রন্টের রোডমার্চ আজ
রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেনের উপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক রোডমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচি মূলত নির্বাচনী প্রচারণায় রুপ নিবে। ড. কামাল হোসেন, আ স ম রবসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি সিনিয়র নেতারা এতে অংশ নিবেন। আজ সকাল ১০টায় পুরানা পল্টস্থ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে থেকে এই কর্মসূচির যাত্রা শুরু হবে। প্রথম পথসভা করা হবে আবদুল্লাহপুর। এরপর পথে পথেই হবে নির্বাচনী পথসভা। সর্বশেষ সমাবেশ হবে ময়মনসিংহ শহরে। ঐক্রফ্রন্টের নেতারা জানান, এটা বৃহৎ কোন কর্মসূচি না। ড. কামাল হোসেন ওপর হামলার প্রতিবাদে স্বল্পপরিসরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। #



 

Show all comments
  • Khurram Sajid ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৫ এএম says : 0
    গুণ্ডাদের আক্রমণ না হলে রাজপথ হবে জনসমুদ্র।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuzar Rahman ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    ভবিষ্যৎ বাণী: অদৃশ্যগোষ্ঠী বাঁধা দিবে, গাড়ি ভাঙ্গবে এবং পুলিশ কখনই তাদের খুঁজে পাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Alam Khan ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    ভোট ডাকাতি রুখে দিতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • বাকী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    নিজেদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখবেন মারতে আসলে যেন কেও ফেরত না যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Rawnak Mustafa ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    একজন লোকও পাবেন না। জনগন আপনাদের ছলচাতুরী বোঝে। গত ১০ বছরে আপনাদের ডাকে কেউই এগিয়ে আসে নি এবারও আসবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    এখান থেকেই কয়েক ডজন নেতাকে জেলে নেওয়া হবে এব শয়ে শয়ে কর্মীকে বেদম প্রহার করে হাজতে ঢোকানো হবে। এ সবই হবে ইসির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানানোর উদ্দেশ্যে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ameen ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 1
    রোডমার্চ করেও কোনো লাভ হবে না কারণ জীবনে আর কখনই এরা (বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট) ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • eng md ibrahim kholil ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:২২ এএম says : 0
    একাওর এ ৩০ লক্ষ শহিদ জীবন দিয়েছে স্বাধানতার জন্য এবার আমরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও গনতন্তকে প্রতিষ্ঠিত করবো। যদি লক্ষ্য থাকে অটুত বিশ্বাস হৃদয়ে হবে হবেই বিজয়, বিজয় হবে আমাদের।
    Total Reply(0) Reply
  • Dhakabasi ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    Go ahead. Voters are waiting for you. Victory will be yours. People do not see more Gum-Khun-Logi Boitha-Bank Loot in the country.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ