পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের সমর্থন পেতে এখন দ্বিগুণ গতিতে প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগে তৎপর। ছুটছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ভোটের দিনক্ষণ দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। নৌকা, ধানের শীষ, ছাতা, লাঙল, আপেল, হাতপাখাসহ যার যার মার্কা নিয়ে অল্পসময়েই বেশিসংখ্যক পুরুষ ও মহিলা ভোটার তথা এলাকাবাসীর কাছে পৌঁছানো এবং ভোট প্রার্থনা করতে পারাই তাদের টার্গেট। গতকাল ছিল পবিত্র জুমাবার। চোখে পড়েছে একটু ভিন্ন চিত্র। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র জুমার দিনটিতে ভোটের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ নতুন মাত্রা পায়।
জুমার নামাজে আগত মুসল্লীদের মাঝে প্রার্থীরা এবং তাদের ভাই, পুত্র, জামাতাসহ আত্মীয়-স্বজন, নেতা-কর্মী, সমর্থকগণ ব্যাপক প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছেন। এরফলে মুখরিত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল মসজিদ প্রাঙ্গণ। টুপি, পায়জামা-পাঞ্জাবী পরিহিত প্রার্থীরা বেশ আগেভাগে মসজিদে মসজিদে ছুটে গেছেন। তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জুমার আগে ও পরে কয়েকটি সমজিদে গিয়ে খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মুসল্লীদের সাথে কুশল বিনিময়, দেখা-সাক্ষাৎ, কোলাকুলি করেছেন। তারা নির্বাচনে আলেম-ওলামা মাশায়েখদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও দোয়া কামনা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সকল রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শ নির্বিশেষে প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা মুসল্লিদের কাছে গিয়ে অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, নির্বাচিত হলে তারা ইসলামী আদর্শ, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা অনুসরণ, ধারণ, লালন ও বিকাশের জন্য সাধ্যমতো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। এলাকাবাসীর সামনে তারা ওয়াদা-আশ্বাস দিয়েছেন সমজিদ-মাদরাসা, মক্তবসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হবে। যার যার এলাকায় সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা সুরক্ষায় ইসলামী আদর্শের প্রচার-প্রসার করবেন। পাড়া-মহল্লায় মাদকের আগ্রাসন, সন্ত্রাস ও মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে ইসলামের পথে আহ্বানের তাগিদ দিয়েছেন।
দেশ ও দশের খেদমত করার জন্য প্রার্থী কিংবা তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা আলেম-ওলামাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। আর এর মধ্যদিয়ে জুমার দিনটিতে চট্টগ্রামের শহর-বন্দর, গ্রাম-জনপদের সবখানে প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ইসলামী চেতনার সুস্পষ্ট ও অনুপম বহিঃপ্রকাশ। এলাকাবাসীর মাঝেও এ নিয়ে ইতিবাচক ও স্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল মসজিদে মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। উৎসুক এলাকাবাসীও ভিড় করেন প্রার্থীদের ঘিরে। তারা নিজেদের এলাকার সমস্যা-সঙ্কটের কথাও তুলে ধরেন। দুই জোটের প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে জুমার দিনে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় আবহ বিরাজ করে। এরফলে কোথাও তেমন অপ্রীতিকর ঘটনারও খবর পাওয়া যায়নি।
জুমার নামাজের শেষে প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ইসলামী পরিবেশে, চেতনায় নির্বাচনী গণসংযোগ প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, কাজির দেউড়ী কাজি বাড়ি মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী মসজিদ, পাঁচলাইশ মক্কি মসজিদের কয়েকজন মুসল্লী জানান, চট্টগ্রাম হচ্ছে ইসলামের প্রবেশদ্বার। বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি। ইসলামী আদর্শ, চিন্তা-চেতনা, ভাবধারাকে এদেশের কোনো দলের পক্ষেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বরং ইসলামকে ধারণ করেই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের যেতে হচ্ছে এবং হবে জনগণের কাছে। ইসলামের প্রসারে তাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। অন্যথায় জনগণ তাকে গ্রহণ করবে না।
সাধারণ চাটগাঁবাসী বলছেন, প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা যদি এদেশের ৯২ শতাংশ জনগণের আদর্শিক পরিচয় তথা ইসলামকে গুরুত্ব প্রদান না করেন তাহলে ভোটারদের কাছেও কোনো গুরুত্ব থাকেনা। যে দল বা জোটই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করুক এবং ক্ষমতায় যাক, ইসলামী ভাবাদর্শকে সমুন্নত রাখতেই হবে। মুসল্লীরা আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ। তবে তথাকথিত ‘সাম্প্রদায়িক’ কিংবা ‘ধর্মান্ধ’ নয়। বরং যারা যত বেশি সাম্প্রদায়িক তারাই নিজেদের চরিত্রকে আড়াল করার হীন উদ্দেশে ইসলাম এবং মুসলমানদের কটাক্ষ করে ‘সাম্প্রদায়িক’ কথাটা বলে গালমন্দ ও অপবাদ দিয়ে থাকে। বরং ইসলামই পরধর্মের প্রতি সহনশীল। যা যুগে যুগে প্রমাণিত সত্য।
চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ বলছেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আলীয়া তথা সুন্নীয়াতের ধারা এবং কওমী ধারার মজবুত অবস্থান রয়েছে। উভয় ধারার সমন্বয়ে এখানকার মানুষ ধর্মানুরাগী নিঃসন্দেহে। নাস্তিক্যবাদী চিন্তা চেতনার এখানে কোনো ঠাঁই নেই।
এদিকে গতকাল জুমাবার নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নতুন মুখ ও পুরনো হেভিওয়েট প্রার্থীরা তাদের সমর্থিত দল বা জোটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজেদের নির্বাচনী এলাকাওয়ারি ব্যাপকভাবে ছুটে বেড়ান। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং একই আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি এম আবদুল লতিফ। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশগর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং নৌকার প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান এমপি ডা. আফছারুল আমীন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের লাঙল প্রতীকে প্রার্থী মন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ধানের শীষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। তাছাড়া দুই প্রধান জোটের অপরাপর প্রার্থীরাও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের সাথে সালাম বিনিময় এবং দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসন ছাড়াও তিনটি পার্বত্য জেলার তিন আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী মহাজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও জনসংহতি, ইউপিডিএফ-এর প্রার্থী ও তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মী, আত্মীয়-পরিজনবর্গ স্থানীয় মসজিদগুলোর আশপাশে মুসল্লীদের উদ্দেশে ছুটে গেছেন। পাহাড়ের উপজাতীয় এবং অউপজাতি বা বাঙালী নির্বিশেষে সকল প্রার্থী ও নেতা-কর্মীর কাছে এখন ধর্মীয় ভাবাদর্শ ভোটের প্রচারণা-গণসংযোগে প্রাধান্য পাচ্ছে। কেননা তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতিদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষুদ্র-বড় গোত্র ১৯টি জাতিগোষ্ঠি। তবে পাহাড়ে মুসলমানদের একক বৃহৎ ভোট ব্যাংক রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।