পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে ড. কামাল হোসেনের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাসদের আ স ম আবদুর রব, রেজা কিবরিয়া, বিএনপির আবদুস সালাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণদলের সভাপতি এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণফোরামের এ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার অফ্রিদ প্রমূখ। জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে শতাধিক যুবকের হামলার সময় অনতিদূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। হামলাকারীদের ধরতে বা নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসেনি।
গণফোরামের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা লতিফুল বারী হামিম জানান, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবসহ গণফোরামের নেতারা ছিলেন। তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বের হওয়ার সময় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসলামুল হকের সমর্থকেরা তাঁদের গাড়িবহরে এই হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কামাল হোসেনের গাড়ি আগে বের হয়। তাঁর পেছনের গাড়িতেই ছিলেন আ স ম আবদুর রব। হামলার ঘটনায় আ স ম আবদুর রবের গাড়ির চালক আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতক্ষদর্শী ঐক্যফ্রন্ট নেতা গোলাম মাওলা চৌধুরী জানান, আতর্কিতে হামলায় লোকজন ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। আসম রব ও গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দারের গাড়িসহ আরও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে ড. কামাল হোসের গাড়ি রাখা ছিল। তিনি যখন গাড়িতে বসতে যাচ্ছেন, তখন অতর্কিতে শতাধিক যুবক জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ওই গাড়িতে গ্লাস ভাঙচুর করে। ওই যুবকরা এ সময় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করছিল। আশপাশে যাঁরা ড.কামালের সঙ্গে হেঁটে আসছিলেন, তাঁদের মারধর করা হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন টিভি সাংবাদিক আহত হন।
হামলার ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন একটি দৈনিকের ফটোসাংবাদিক। এসময় তার ক্যামেরা সিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সরকারের তল্পিবাহক দুটি টিভি চ্যানেলের দুই ক্যামেরাপারসন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা হামলা ঠেকাতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তবে কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা সরে গেলে ড. কামাল তার গাড়িবহর নিয়ে স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন। তবে এরপরও ড. কামালের সঙ্গে থাকা লোকজনকে পেটানো হয়। হামলার শিকার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। তখন অতর্কিত আমাকে মারধর করে। পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশ উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে কেন ছবি তুলতে গেলেন? হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল নিরব। মিরপুর দারুসসালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন। এত মানুষের ভীরে একটু ধাক্কাধাক্কি হতে পারে। হয়তো কোনও পলিটিক্যাল কারণে। তবে যাই হোক দিন শেষে পুলিশ এটিরও তদন্ত করে দেখবে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, ড. কামাল হোসেন যখন মিডিয়ার সামনে কথা বলছিলেন, হঠাৎ সরকারের সুবিধাভোগী এক সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘জামায়াতের তো রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, এখন জামায়াত সম্পর্কে আপনাদের সর্বশেষ অবস্থান কী?’ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এমন প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন ড. কামাল। বুদ্ধিজীবী দিবসে এ ধরণের প্রশ্ন না করে বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কত টাকা পেয়েছ আমাকে এই প্রশ্নগুলো করার জন্য? শহীদ মিনারে এসেছ, শহীদদের কথা চিন্তা করা উচিত। কোন চ্যানেল থেকে এসেছ? চিনে রাখব। চুপ করো, খামোশ।
কামাল হোসেন বলেন, আেজকে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। লাখো শহীদ জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, সেই স্বাধীনতাকে আমরা ধরে রাখি। অর্থপূর্ণ করি সকলের জন্য। এই স্বাধীনতা ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে যারা আখের গোছাতে চাচ্ছে, তাদের জন্য নয়, সব মানুষের প্রাপ্য। তিনি আরো বলেন, শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভলালসা নিয়ে লুটপাট করছে, তাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
ড. কামাল হোসেনের উপর হামলার নিন্দা
ড. কামাল হোসেন এবং আসম রবসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলা’র নিন্দা জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মনোনয়পত্র দাখিলের পর থেকে সারা দেশে বিরোধী মতের উপর সরকারী দলের ক্যাডাররা লাগাতার সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রচারণার মাইক কেড়ে নিচ্ছে। নির্বাচনী অফিস ভেঙে দিচ্ছে। ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। এর সাথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে নির্বিচার গ্রেফতার করে জেলে পুরছে। এসব করে ক্ষমতাসীন দল সারা দেশে এমন এক ভীতিকর পরিবেশে তৈরি করতে চায়, যাতে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে না পারে এবং ভোটাররা কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস না পায়।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, এতদিন বিএনপি ও জোটের অন্যান্য শরীক দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। আজকে দেখা গেল, ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারাও নিরাপদ নয় সরকারী দলের সন্ত্রাসী হামলা থেকে।
আল্লামা কাসেমী বলেন, ফ্যাসিবাদি শাসনের অবসানের লক্ষ্যে মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে সাংবিধানিক উপায়ে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সরকার একে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বলে মনে করছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পরিচালিত সকল ষড়যন্ত্র ও দমন-পীড়নের বিপরিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক ব্যালট বিপ্লব ঘটাতে হলে, আলেম-ওলামাসহ দেশের সকল মানুষকে এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।