Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহীর ছয় আসনের প্রচারণায় উত্তাপ উত্তেজনা

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজশাহীর ছয়টি আসনে জমে উঠেছে প্রচার প্রচারনা। ক্ষমতার সুবাদে সরকার দলীয় এমপিরা একটু বেশী সুবিধা নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা হামলা মামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে মাঠে নামছে। নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়া পোষ্টার ছেড়া মামলার পরও মাঠে থাকার কৌশল করছে। 

রাজশাহীর ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা উনিশ লাখ সাড়ে বিয়াল্লিশ হাজার। নারী পুরুষ ভোটার প্রায় সমান সমান। নতুন ভোটার যোগ হয়েছে এবার দু’লাখ। এদের মনজয় করতে চলছে কৌশলী প্রচার প্রচারনা। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগ কর্মীরা বেপরোয়া আচরন করছে। আর পুলিশও তাদের পক্ষে। এ কারনেই তাদের দাপট বেশী।
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক আর আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি। বাধা বিঘ্নের পরও কোনঠাসা বিএনপি প্রচার প্রচারনায় মাঠে। এলাকায় ধানের শীষের সমর্থক বেশী। নেতাকর্মীরা বলছেন ভোটাররা ভোট দেবার সুযোগ পেলে রায় তাদের পক্ষে যাবে। এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রবল চাপা বিরোধ রয়েছে। যার সুফল পাবে বিএনপি প্রার্থী।
রাজশাহী সদর আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির সতের বছরের সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু। অন্যদিকে মহাজোটের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক দু’বারের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। পোষ্টারে ব্যানারে বাদশা এগিয়ে থাকলেও বিএনপিও কম যায়না। শুরুতে তাদের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হলেও তারা প্রচারনার গতি বাড়িয়েছে। এখনো বিভিন্ন মহল্লায় পোষ্টার কেটে দেয়া হচ্ছে বলে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছে বিএনপি
ক’মাস আগে হয়ে যাওয়া সিটি মেয়র নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বুলবুল তেমনভাবে মাঠে নামতে পারেননি। তার নির্বাচনী অফিস পর্যন্ত করতে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু এবার এমপি নির্বাচনে মিনুর বেলায় তেমনটি নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মহল্লায় নির্বাচনী অফিস তৈরী হচ্ছে। আওয়ামীলীগের নারী পুরুষরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেমন প্রচারনা মিছিল করছেন। তেমনি বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেও হচ্ছে মিছিল। অবস্থা দৃষ্টে দেয়ালে পিঠ ঠেকা বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘুরে দাড়াচ্ছে।
রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামীলীগের এমপি আয়েন উদ্দিন এবারো প্রার্থী। তার পুরানো মাঠ। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নগর বিএনপির সেক্রেটারী এ্যাড. শফিকুল হক মিলন। যদিও আসনটির দিকে টার্গেট রেখে আগে থেকেই মাঠে ছিলেন। মনোনয়ন পেয়ে তার প্রচারনার গতি বাড়িয়েছে। এখানে তাকে সরকার দলীয়দের হাতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন। বিশেষ করে রাতের বেলা তার ব্যানার ফেষ্টুন ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। কর্মীদের হুমকী ধামকী দেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী-৪ আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক আমলা এমপি ও ধনকুবের এমপি। বিএনপি প্রার্থী রয়েছেন আমলা আবু হেনা আর আওয়ামীলীগের ধনকুবের এনা গ্রুপের কর্নধার এনামুল হক এমপি। প্রচার প্রচারনার শুরুতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্নস্থানে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। তারপরও মাঠে তৎপর। এখানে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকট। অনেক হেভিওয়েট নেতার সাথে বিরোধ এনামুলের। ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনির ঘটনা ঘটে গেছে। বিএনপি নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে এমপির জি-২০ গ্রুপ নামে ক্যাডার গ্রুপের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এমন হামলার সাথে সংশ্লিষ্টতা এনামুল হক উড়িয়ে দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে নেবার চেষ্টা করছেন। এমনিতে এলাকাটি রক্তাক্ত জনপদ হিসাবে পরিচিত। সর্বহারা আর বাংলা ভাইয়ের বিচরন ক্ষেত্র ছিল।
রাজশাহী-৫ আসনে আওয়ামীলীগ তাদের প্রার্থী বদল করেছে। আব্দুল ওয়াদুদ দারা এমপির পরিবর্তে স্বাচিপ নেতা ডা. মুনসুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ প্রার্থী রাজনীতির মাঠে অপেক্ষাকৃত নতুন খেলোয়াড়। দারা মনোনয়ন না পাওয়ায় তার বাহিনী বেশ খানিকটা কোনঠাসা ও মনোক্ষুন্ন। এখানে অনেক বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। গত দশ বছর আওয়ামীলীগের বাধা আর মামলা হামলায় এলাকায় যেতে পারেননি সেভাবে। মনোনয়ন পেয়ে এখন মাঠে নেমেছেন। দীর্ঘ ক’বছর কোনঠাসা হয়ে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। তবে বাধাহীন ভাবে নয়। বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারনায় বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
রাজশাহী-৬ আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আর বিএনপির সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে একের পর এক গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে আবু সাঈদ চাঁদকে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন আনার পর গায়েবি মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানোর খেলা চলছে। তারপক্ষে প্রচার প্রচারনা চালাতে গিয়ে হামলা মামলা আর গ্রেফতারের শিকার হতে হচ্ছে। চারঘাটে পোষ্টার লাগানের ঘটনা কেন্দ্র করে তিন বিএনপি কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। বাঘার আড়ানীর চকসিংগা এলাকা ও রিফিউজীপাড়া এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারনা মাইক কেড়ে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। মারপিটও করা হয়।
এমন সব কর্মকান্ডের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী চালাচ্ছেন সুবিধাজনক প্রচার প্রচারনা। অন্যদিকে হামলা মামলা গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে চলছে বিরোধী পক্ষ তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কর্মীদের প্রচার প্রচারনা।
নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার উত্তাপের সাথে বাড়ছে উত্তেজনা। শঙ্কিত সাধারন ভোটাররা। সর্বত্র একই কথার প্রতিধ্বনি সুষ্ঠু নির্বাচন হবেতো। আমার ভোট আমি দিতে পারবতো। আদৌ ভোট হবে কিনা এনিয়ে সংশয়ও কম নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ