Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্ত্রধারীদের নিয়ে শঙ্কা

চট্টগ্রামে সাফল্য নেই বিশেষ অভিযানে

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে সাফল্য আসছে না। ধরা পড়ছে না অস্ত্রধারীরাও। কোন কোন এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনা-গোনাও বাড়ছে। ভোটের প্রচারে তাদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। ফলে জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক বাড়ছে। ভোটের আগে পরে সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের ভ‚মিকা কি হবে-তা নিয়েও উৎকন্ঠায় অনেক এলাকার ভোটারা।
প্রতীক বরাদ্দের পরপর ১০ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী তরিকতের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। পেয়ারুল ইসলামের অভিযোগ শীর্ষ সন্ত্রাসী তৈয়ব অ্যাম্বুলেন্সে বসে তার সমর্থকদের উপর গুলি ছুঁড়েছেন। সেখানে সন্ত্রাসীদের হাতে একাধিক ভারি অস্ত্র ছিল। ওই ঘটনায় কোন অস্ত্রধারী ধরা পড়েনি। উদ্ধার হয়নি কোন অস্ত্রও। তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (উত্তর) দাবি ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে চলছে বিশেষ অভিযান। এই অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় হাতে গোনা কিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েকজন ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারী কোন অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ধরা পড়েনি কোন পেশাদার শীর্ষ অপরাধীও। অথচ চট্টগ্রাম অঞ্চলে অস্ত্রধারী এবং তাদের গোপন ভান্ডারর যে কত বেশি সমৃদ্ধ তা সকলের জানা। তুচ্ছ ঘটনাতেও এখানে ভারী অস্ত্র ব্যবহার হয়। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানদের হাতেও আছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরোধেও এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে প্রায় অস্ত্র উদ্ধার হয়।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান যে অভিযানে তাতে এখনও কাঙ্খিত সুফল মিলেনি। বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান গতকাল শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, বিশেষ অভিযানে এ পর্যন্ত যে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তা কোনভাবেই পর্যাপ্ত নয়। এতে আমরা সন্তোষ্টও না। অভিযান আরও জোরদার হবে এবং অস্ত্র গোলা-বারুদ উদ্ধার আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ভোটে অবৈধ অস্ত্রধারীদের কোন অপতৎপরতা বরদাশত করা হবে না। কাউকে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ভোটারেরা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সে ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশী অস্ত্রের ছড়াছড়ি। কক্সবাজারের মহেষখালী, চকোরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড় জঙ্গলে তৈরী অস্ত্র অপরাধীদের হাতে আসছে। সীমান্তপথে আসছে বিদেশী অস্ত্র। তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয় পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর হাত ধরে এসব অস্ত্র চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রসীদের হাতে। কালো অস্ত্রের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয় এই অঞ্চলে। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও স›দ্বীপ থেকে সম্প্রতি বিপুল অস্ত্র গোলারুদ উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৩১টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এই সময়ে ৩৪টি ম্যাগাজিন এবং ১০ হাজার ২১২ রাউন্ড গুলি, কার্তুজ উদ্ধার হয়। পুলিশের অভিযানেও প্রায় সমান সংখ্যক অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায় রাজনৈতিক ক্যাডার মাস্তানদের মধ্যে এখন সরকার সমর্থকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। নিজেদের মধ্যে হানাহানিতেও তারা অস্ত্র ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রসহ তারা ধরাও পড়ছে। বিরোধী দলের সমর্থক অস্ত্রধারীরা দীর্ঘদিন থেকে হয় কারাগারে অথবা পলাতক। তবে নির্বাচন সামনে রেখে কোন পক্ষই যাতে সক্রিয় হতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানান র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও নির্বাচনকে সামনে রেখে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়। এবার শুরুতে নির্বাচন কমিশন অস্ত্র জমা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বলে জানা গেছে। খুব শিগগির এবিষয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি হতে পারে। উল্লেখ্য, গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র ব্যবহার হওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছিলেন। ইউপি নির্বাচনে হাটহাজারীর একটি ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করত গিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন তৎকালীন নগর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি নুরুল আজিম রনি।
জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স হালনাগাদ করার নির্দেশনা দিয়েছে। তথ্য গোপনসহ নানা ফাঁক-ফোকর আর রাজনৈতিক প্রভাবে গত ১০ বছরে অনেক সন্ত্রাসী ও অসংখ্য মামলার আসামিও বৈধ অস্ত্রের মালিক হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ