পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী বলেছেন, সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) আল্লাহর রাহে নিবেদিত মহান বুযুর্গ ছিলেন।
তিনি সায়্যিদুনা হযরত হুসাইন (রা.)-এর ফয়যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ইসলামের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণে যারা প্রাণ দেন তারা দুনিয়া থেকে চলে গেলেও অমর থাকেন। সায়্যিদ আহমদ শহীদ (র.) আজো মানুষের অন্তরে বেঁচে আছেন। তিনি বাল্যবয়স থেকেই তিনি মানুষের সেবায় নিবেদিত হয়েছিলেন। অন্ধ, আতুর, রুগ্ন ব্যক্তিদের জন্য পানি এনে দিতেন, তাদের জ্বালানী সংগ্রহ করে দিতেন। সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী (র.) অনুরূপ বাল্যবয়সে অসহায় মানুষের খেদমত করেছেন। সৈয়দ আহমদ বেরলভী (র.) আশিকে রাসূল ছিলেন। ফানা ফির রাসূল তাঁর হাসিল ছিল। বারবার রাসূল (সা.) এর দীদারও নসীব হয়েছে। তার হাতে অনেক মানুষ মুসলমান হয়েছে। হজে গমনের আগে কলকাতায় তাঁর হাতে এত অধিক মানুষ মুসলমান হয়েছিল যে তাদের খতনার জন্য ১০/১৫ জন লোক নিযুক্ত করতে হয়েছিল। তাছাড়া এ সময় এত অধিক সংখ্যক লোক তাঁর হাতে বায়’আত হয়েছিল যে সরাসরি হাতে হাত রেখে বায়’আত সম্ভব হয়নি বিধায় তিনি কাপড় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি রাতের বেলা ইবাদত-বন্দেগী আর রুনাজারীতে অতিবাহিত করতেন। শাহাদাতের আগের রাতও মুজাহিদদের নিয়ে রুনাজারি করেছেন। হজের সময় আরাফাতেও অত্যন্ত কান্নাকাটি করেছেন। একবার আরাফার ময়দানে হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) খুব বেশি কেঁদেছিলেন। তখন শহীদে বালাকোট (র.) এর কথা স্মরণ হয়েছিল। হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। তার সুস্বাস্থ্যকে দ্বীনের কাজে লাগিয়েছেন, জিহাদে ব্যয় করেছেন, সারাজীবন তরীকতের খেদমত করেছেন। যিনি তরীকা প্রতিষ্ঠা করেন, তাসাউফের তালীম দেন, তাওয়াসসুলে বিশ্বাস করেন, যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেন, মীলাদ পড়েন তিনি ওহাবী হন কিভাবে? নামের সাথে মুহাম্মদিয়া থাকলেই কি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাবের অনুসারী হয়ে যায়? তাহলে আহমদিয়া থাকলেই কি আমরা কাদিয়ানী বলব? হযরত সৈয়দ আহমদ বেরলভী (র.) মানুষের হৃদয়ে ইসলামের আলো জ্বেলেছেন। তাঁর আদর্শ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, এতীম, অনাথ, অসহায়ের সেবা করা। তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী গতকাল (৫ মে) বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররমস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আযাদী আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার, ঈমানী চেতনার প্রাণপুরুষ, আমিরুল মু’মিনীন, ইমামুত তরীকত, শহীদে বালাকোট হযরত সৈয়দ আহমদ বেরলভী (র.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বালাকোট-চেতনা উজ্জীবন পরিষদের উদ্যোগে পরিষদের আহ্বায়ক, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী।
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ নজমূল হুদা খান ও নজীর আহমদ হেলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দারুল আমানের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা আবু বকর, ঢাকা খানকা-ই খাস মুজাদ্দেদীয়ার পীর ছাহেব ড, আ, ফ, ম আবু বকর সিদ্দীক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব আলহাজ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, দ্বারীয়াপুরের পীর ছাহেব অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ জনাব মোঃ ইসমাঈল মিঞা, মুফতি মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম-মহাসচিব ড. মাওলানা এ.কে.এম. মাহবুবুর রহমান, মহাখালী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম খান আল মারুফ, সোনাকান্দার প্রধান খলীফা কুমিল্লা সৈয়দপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহির মো: ছালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেন, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. ঈসা শাহেদী, গাজীমুড়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোঃ তাজুল ইসলাম, ছাগলনাইয়া ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম। সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান নিজামী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ কুতবুল আলম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, মুসলিম হ্যান্ডস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, সুন্দাদিল হবিগঞ্জের পীর ছাহেব মাওলানা কাজী আলাউদ্দিন আহমদ, খিলগাঁও মডেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাওলানা রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা হাসান চৌধুরী গিলমান, ঈশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ।
হুমায়ূনুর রহমান লেখনের কুরআন তিলাওয়াত, ইসলাম সঙ্গীতশিল্পী মুজাহিদুল ইসলাম বুলবুল, শাহীদ আহমদ ও সাইফুল ইসলামের হামদ, নাত ও জাগরণী সঙ্গীত পরিবেশনার মাধমে সূচিত সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নী জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন, মাওলানা বেলাল আহমদ, আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা কাজী হাসান আলী, মাস্টার আহমদ আলী, হাফিয মাওলানা মনজুর আহমদ, অধ্যক্ষ মাওলানা নুমান আহমদ, ঢাকা মহানগরী সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হুসাইন, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটির লেকচারার নোমান আহমদ, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ উদ্দীন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহিবুর রহমান, অর্থ সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টেও অফিস প্রধান মাওলানা জিল্লুর রহমান, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের হাফিয আশিকুর রহমান, মাওলানা কুতুব উদ্দিন খান প্রমুখ।
দারুল আমান কুমিল্লার পীর ছাহেব হযরত মাওলানা আবু বকর ছাহেব বলেন, সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ছাড়া আমাদের তরীকার সিলসিলা অচল। গোড়া কেটে আগায় পানি দিলে যেমন গাছ বাঁচে না, তেমনি শহীদে বালাকোট (র.) কে বাদ দিলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবেনা।
মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, আল্লাহর ওলীদের এমন কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না যে, তারা তাদের অনুসারীদের মানুষকে আঘাত করার শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ওলীদের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা গুলোয় জঙ্গীবাদের চর্চা হয় বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট।
মাওলানা রূহুল আমীন খান বলেন, সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার ও সময়ের শ্রেষ্ঠতম বুযুর্গ। তিনি মুসলিম সমাজে যে সকল শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার অনুপ্রবেশ করেছিলো সেগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মানুষের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুন্দর করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ‘তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া’ নামে একটি তরীকার প্রবর্তন করেছিলেন। এ তরীকার মাধ্যমে তিনি মুসলিম জনসমাজের আত্মা পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রচলিত কুসংস্কার ও অনৈতিক কার্যাবলীর বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন। তাঁর আন্দোলন আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।