চিরদিন কেউ ক্ষমতায় থাকবেনা জানিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, সব পুলিশ জেনে রোখো, যারা আজকে অবৈধ আদেশ দিচ্ছে তারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। তাই তাদের বেআইনি আদেশ মানবে না। ভুলে যেওনা তোমরা (পুলিশ) ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি করবে। আজকে যারা আদেশ দেয়, তারা আইনানুগ আদেশ দিচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে। কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না। এটা করলে সংবিধান ভঙ্গ করা। তোমরা সংবিধান ভঙ্গ করার অপরাধ করো না।

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে বিজয়নগরে ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের নিশ্চুপ ভূমিকা ও সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এবং কর্মীদের ধরপাকড় নিয়ে ড. কামাল বলেন, সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর বঙ্গবন্ধুর। যেখানে বঙ্গবন্ধু লেখে গেছেন- এদেশের মানুষ আইনের আশ্রয় পাবেন। পুলিশ যেটা করছে সেটা বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হয়েছে। যেসব পুলিশ হামলা, গ্রেফতার করছে তারা কার আদেশে এসব করছে? আমি প্রত্যেকটা এ্যারেস্টের বিস্তারিত তথ্য চাই। এই দেশে এখনো সংবিধান আছে। জেনে রেখো কেউ চিরস্থায়ী নয়। বুঝে নিও, সংবিধান ভঙ্গ করার কাজ করো না। কার আদেশে এমন কাজ করছো তা আমাকে জানাও।

এর আগে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পথে ড. কামালের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

হামলার বিষয়ে ড. কামাল বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি আসলামুল হকের গু-াবাহিনী ও কমিশনার টিপুর নেতৃত্বে গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। হামলায় আমার, আ স ম আব্দুর রব, জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ ৭-৮টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। হামলায় আব্দুর রবের গাড়ির চালকসহ ২৫-৩০ জন গুরুতর আহত হয়। এ সময় শত শত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। আমরা লক্ষ্য করছি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী-নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেফতার, প্রচারণায় বাধা, ভাঙচুরের মাধ্যমে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। যা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়।’

পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আইজিপি সাহেব আপনাকে আমি লিখিতভাবে চিঠি পাঠাবো। আপনার পুলিশদের বিষয়ে যা শুনছি তাতে আমি উদ্বিগ্ন। আপনার বিষয়ে আমার ভালো ধারণা ছিল। আমি আপনাকে আজকের ঘটনার তথ্য দেবো। ধারণা করছি যে তথ্য দেব আপনি আপনার বিশ্বস্ত লোক দিয়ে সেগুলো তদন্ত করবেন। কথা দিচ্ছি সব ধরনের সাহায্য করবো। তিনি বলেন, চারিদিকে শুধু অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট আর অ্যারেস্ট। আমরা জানতে চাই কার আদেশে এগুলো করা হচ্ছে। আমরা প্রতিটা অ্যারেস্টের বিস্তারিত তথ্য চাই।

ড. কামাল বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটি শহীদদের জন্য অবমাননাকর। এটি মেনে নেয়া যায় না। যারা এ হামলা করেছে তাদের আমি ভাড়াটিয়া বলবো। ওরা দুই পয়সার জন্য এ কাজ করেছে। আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি চার পয়সা দেবো, তোমরা সরে যাও।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ডেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসীন মন্টু, আব্দুল মালেক রতন, রেজা কিবরিয়া, সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু প্রমূখ।