পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : দিনে দিনে জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে না জমি। সেজন্য বছরে বছরে বাড়ছে জমির মূল্য। শহরে কিংবা গ্রামে সাধারণত কেউ এক ইঞ্চি জমিও অব্যবহৃত রাখেন না। কিন্তু সরকারী জমির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। বাস্তবে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায়। গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমে শুকিয়ে যাওয়া নদী, সড়কের দুইপাশ ও রেলওয়ের পরিত্যক্ত হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারী জমি পৈতৃক সম্পত্তির মতো দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছে প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর ধরে। সরকারী জমি ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’-অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে পুরোপুরি বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তির পরিমাণও কম নয়। চোখের সামনে দখল প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে অথচ সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকায়। বিশাল সম্পত্তি যদি দখলমুক্ত করে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাহলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ ১ জেলার বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধের অভাবই সরকারী সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের বড় অন্তরায়। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে সরকারী জমি উদ্ধারে জোরালো কোন ভূমিকা নেয়া হয়েছে গোটা এলাকায় একযোগে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও রাঘববোয়ালরা সরকারী ভূমির অবৈধ দখলদার। জীবদ্দশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু মাথা গোজার ঠাই পাওয়া সম্ভব নয় কোনভাবেই এমন হতদরিদ্র, ভূমিহীন, নিঃস্ব ও অসহায় লোকজনও কিছু এলাকায় বস্তিঘর তুলে জীবনযাপন করছে, যার সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। তাদের কেউ সরকারী জমি দখল করেছে এমন ঘটনা কম। দখলদারদের প্রায় সবাই বিত্তশালী। সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারের নামে মাঝেমধ্যে স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে অভিযান চললেও বস্তিবাসীদের উপরই আঘাতটা পড়ে বেশী। অভিযানের ছোঁয়া লাগে না প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের। এসবক্ষেত্রে নিঁখুতভাবে খোঁজ নিলে সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় সরকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির পুঙ্খানুপঙ্খ বিবরণ পাওয়া যাবে, যাতে যে কোন সচেতন ও বিবেকবান মানুষ হতবাক হবেন।
জেলা পরিষদ, রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খাল, বিল-বাওড়, নদীপাড় এবং সড়ক ও জনপথসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের বিশাল বিশাল এলাকার জায়গাজমি পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ অঞ্চলের সরকারী জায়গাজমি ভোগদখল করে আসছে। কি পরিমাণ সরকারী সম্পত্তি বেদখলে ও অব্যবহৃত অবস্থায় এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এর পরিমাণ প্রায় অর্ধলক্ষ হেক্টর জমি। দখলমুক্ত ও অব্যবহৃত অবস্থায় থাকা সরকারী জায়গাজমি কৃষি ও শিল্পসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থা নেয়া হলে সমৃদ্ধ হত সরকারের অর্থভান্ডার। তাতে বেকারদেরও কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ সৃষ্টি হত। কিন্তু এটি বরাবরই ওভারলুক করা হয়। মরা ভৈরবের যশোর, খুলনা, নওয়াপাড়া, বারীনগর, ডাকাতিয়া, নওদাগা, বোলতলা, বারান্দীপাড়া, রাজারহাটসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কিলোমিটারের সিংহভাগ দুইপাড় দখল হয়ে গেছে। যশোর শহরের দড়াটানা পয়েন্টে নদের অস্তিত্ব মুছে যেতে বসেছে। নদের জমিতে দুইপাড়ে বড়বড় অট্টালিকা গড়ে তোলা হয়েছে। ঝিনাইদহের নবগঙ্গা,মাগুরার নবগঙ্গা, নড়াইলের চিত্রা, চৌগাছা থেকে কেশবপুরের কপোতাক্ষ, যশোরের মুক্তেশ্বরী নদী, রেলওয়ে, সড়ক, জেলা পরিষদের বিশাল এলাকার জমি যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরসহ বিভিন্ন জেলার ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী জমি কোথায় কতটুকু দখল হয়েছে তা নির্দ্দিষ্ট করে বলা যাবে না। দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করে বলেন ‘ব্যক্তি সম্পত্তির হিসাব ব্যক্তির প্রয়োজনে রাখেন, সরকারী সম্পত্তির কোন ঠিক ঠিকানা নেই, একটি বিভাগের জমি তো নয়, কয়েকটি বিভাগের সরকারী জমি প্রভাবশালীরা দখল করে নিলে তার হিসাব রাখবে কে? হিসাব রাখতে গেলে তো চাকরীটা যাবে, জীবননাশেরও ভয় আছে, তাই আপনাদের মতো আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি। দেখেন না নদপাড়, রাসস্তার পাশে, রেলওয়ের জমি কিভাবে দখলের মহোৎসব চলে, শুধু এই সরকারের আমলে নয়, অতীতেও যে যখন ক্ষমতায় বা প্রভাবশালী তার ইচ্ছায় দখল হয়, সরকারী সম্পত্তি তো আছেই অনেক ব্যক্তি সম্পত্তিও জোর করে দখল ঘটনা কম নয়।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় প্রতিবছর গড়ে কৃষি থেকে অকৃষিতে চলে যাওয়া জমির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর। এ অঞ্চলে মোট জমি ২১ লাখ ১১ হাজার ৬৬ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১২লাখ ৬হাজার ৫৩০ হেক্টর। স্থায়ীভাবে পতিত রয়েছে ৫৬হাজার ৬৫৮ হেক্টর। এই পতিত জমিও আবাদের আওতায় আনা হচ্ছে না। বাকি জমি জলাশয়, বনভূমি, রাস্তাঘাট, রেলওয়ে, বাড়ীঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ফল বাগান ও শহরাঞ্চল। এর মধ্যে সরকারী সম্পত্তির কোন হিসাবের সমন্বয় নেই এক দপ্তরের সাথে আরেক দপ্তরের। যশোর ও খুলনার ভৈরব নদপাড়, কুষ্টিয়ার পদ্মাপাড়, জিকের অব্যবহৃত ক্যানেল, নড়াইলের মধুমতি নদীপাড়, ঝিনাইদহ ও মাগুরার নবগঙ্গা নদীপাড়, যশোর পুলেরহাট, উপশহর, বারান্দীপাড়া, খুলনা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পর্যšত বিভিন্নস্থানে রেলওয়ের জমি এবং গোটা অঞ্চলের সড়কের একাংশসহ গোটা অঞ্চলের হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি রয়েছে। এর একটা অংশ ভোগদখল হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানায়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অব্যবহৃত সরকারী সম্পত্তি ব্যবহারের কোন নিয়মনীতি মানা হয় না। এ অঞ্চলের বেশীরভাগ সরকারী জমি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। যা ব্যবহারের কোন পরিকল্পনাও নেই। যার জন্য এসব সরকারী সম্পত্তির একটা অংশ বেহাত হয়ে গেছে। সরকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, কাগজ কলমে সরকারী সম্পত্তি অথচ বাস্তবে ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে অনেক জমি। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর, বিভিন্ন জেলার জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, রেলওয়ে, সড়ক, জেলা পরিষদ ও ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ সরকারী জমি অব্যবহৃত কিংবা বেদখলে গেছে তার কোন হিসাব দিতে পারেনি। বলা হয়েছে সময় লাগবে। তাছাড়া এসব সম্পত্তির হিসাব করা খুবই জটিল। বিড়ত ওয়ান ইলেভেনের সময় দক্ষিণ-পশ্চিমে দেড় হাজার কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখলমুক্ত হয়েছিল। পওে আবার দখলে চলে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদ, সড়ক ও রেলওয়ের সম্পত্তিই বেশী বেদখলে রয়েছে। বেহাত হয়ে গেছে এসব সরকারী বিভাগের জমি। এক বিভাগ আরেক বিভাগকে দোষারোপ করেই তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য গোটা অঞ্চলের অব্যবহৃত জমির পরিমাণ একত্রে করে সঠিক তথ্য দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে-এর সাথে কারো দ্বিমত নেই। যা বিভিন্নস্থানে চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সরকারী কোষাগারে নামকাওয়াস্তে অর্থ জমা দেখিয়ে সরকারী সম্পত্তি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। তাও একপর্যায়ে অনেক লীজগ্রহীতার হাতে চলে যাচ্ছে।
যশোর ও খুলনার বেশ কয়েকজন সামাজিক নেতা বলেছেন, বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে গোটা অঞ্চলের সরকারী সম্পত্তি দখলমুক্ত করা জরুরি। ওই জমি ভুমিহীন দিলেও যারা একটু মাথা গোজার ঠাই পায়নি, তারা উপকৃত হবে। যেসব সরকারী জমি প্রভাবশালীদের নামে লীজ দেয়া তা বাতিল করে ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেয়া হোক। কারণ প্রভাবশালীরা ভূমিহীন সেজে সরকারী সম্পত্তি লীজ নিয়েছে বেশীরভাগক্ষেত্রে। সরকারী সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে যদি বেকার যুবকদের স্বার্থে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় তাহলে সেটি হবে দৃষ্টান্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।