Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কণ্ঠরোধ করতেই ড. ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ -রিজভী

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিচারপতিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতেই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নিতে সম্প্রতি নতুন আইন পাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
একই সঙ্গে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক যাতে দলের পক্ষে দেশে-বিদেশে ‘কথা বলতে না পারেন’ সেজন্যই তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ‘জড়ানো হয়েছে’ বলেও  অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
রিজভী আহম্মেদ বলেন, নতুৃন আইনের ফলে বিচারপতিদের অভিশংসন ও অপসারণের ক্ষমতা সুিপ্রম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে এখন জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত হবে। বিচারপতিদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ও তাদের ওপর নগ্ন আগ্রাসন করতেই এমন আইন করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি। এটি স্বাধীন বিচারকার্য পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি করবে এবং মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। এটি পাসের মাধ্যমে সরকার পুরোপুরি বিচারপতিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে।
বিচারপতিদের অপসারণ আইন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ভীতিকর। চাপ সৃষ্টির জন্যই এটি করা হচ্ছে। বিচারপতিরা যেন সরকারের ইচ্ছামতো কাজ করে সেজন্যই এই আইন করা হচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে ন্যায়বিচার শিকেয় উঠবে। এই আইন পাশের মাধ্যমে সরকার বিচার ব্যবস্থাকে বিরোধী দলসহ গণমাধ্যম এবং গণতন্ত্রে স্বীকৃত সকল অধিকারকে আরো নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, এই ভোটারবিহীন সরকার প্রধানের ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট ধ্যানকে কেউ যেন নাড়া দিতে না পারে সেইজন্যই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ চলছে। এই আইন প্রণয়নের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে ক্ষমতার মসনদকে নিষ্কন্টক করা এবং তাদের প্রতিপক্ষকে দুরমুস করা। সম্প্রতি ভোটারবিহীন সরকারের তিনজন মন্ত্রী উচ্চ আদালতে দ-িত হওয়ায় সরকারের মধ্যে একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর সে কারণেই তড়িঘড়ি করে বিচারপতিদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই নতুন আইন পাশ হতে যাচ্ছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, এখন তা সংসদে পাশ করার প্রক্রিয়া চলছে। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের এই আইন পাশ করা হলে সংবিধানের সর্বশেষ স্তম্ভটুকুও বিলীন হয়ে যাবে। সরকার জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সংস্থায় নিজেদের লোক বসিয়ে সবকিছুকে আওয়ামীকরণ করায় একদলীয় শাসনের নির্মম যাঁতাকলে দেশবাসী পিষ্ট হয়ে হাহাকার করছে।
সরকারের নির্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের হাস্যকর অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, এই অভিযোগের উদ্দেশ্যই হলো- তার কন্ঠরোধ করে দেয়া, যাতে তিনি দেশে বিদেশে বিএনপির পক্ষে কথা বলতে না পারেন। ড. ওসমান ফারুককে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং হেয় প্রতিপন্ন করতেই এধরণের ঘৃণ্য চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের এধরণের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নেতাদের রিমান্ড নেয়া প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আবারো দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নানকেও ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দুজনার প্রতি রিমান্ডের নামে এই নিষ্ঠুর আচরণ বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের নির্দয় নিপীড়ণ ও জুলুমের একটি নতুন মাত্রা। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এধরণের অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের রিমান্ড বাতিল করে নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান দু:শাসনের কবলে পড়ে এমনিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত। ভোটারবিহীন সরকারের তরফ থেকে গণমাধ্যমের ওপর প্রতিনিয়তই নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন চলছে। বিশেষ বিশেষ জায়গা থেকে ফোন করে সংবাদ সেন্সর করার জন্য ধমক দেয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে বলে অনেক সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদেরকে অবহিত করেছেন। তার ওপর গণমাধ্যমকে আরো বেশী মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে মিডিয়া মনিটরিং সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গতকাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। এর আগে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমনকি দেশীয় গণমাধ্যমের বিকাশের নামে বিদেশী গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণের সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকার আবারো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলে গণআন্দোলনের হুঁঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিজভী বলেন, সরকার আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। কয়দিন আগে গৃহস্থালি ও যানবাহনের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম আবারো বাড়বে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী।
রিজভী বলেন, এরআগেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গৃহস্থালি কাজে এক বার্নারের গ্যাসের চুলা ব্যবহারের জন্য ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা এবং দুই বার্নারের চুলা ব্যবহারের জন্য ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা হয়। একই সময় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়। বর্তমানে তা আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক চুলা ৬০০ টাকার স্থলে ১২০০ টাকা এবং দুই চুলা ৬৫০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন-অর রশিদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।






 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কণ্ঠরোধ করতেই ড. ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ -রিজভী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ