Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুয়ারে প্রার্থীরা

চট্টগ্রামের ১৯ আসনে জমজমাট প্রচার

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রার্থীরা ছুটছেন। সাথে কর্মী-সমর্থকেরা। লক্ষ্য ভোটারের কাছে যাওয়া। তাদের মন জয় করা। ধনী, গরিব, দিনমজুর, শ্রমিক সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। মার্কা দেখিয়ে ভোট চাইছেন। ক্ষণিকের দেখায় আপন করার চেষ্টা করছেন। ভোটাররাও বেজায় খুশি। প্রার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। প্রাণ খুলে কথা বলছেন। হাত বাড়িয়ে প্রচারপত্র নিচ্ছেন। ভোটার কোন মার্কা সিল মারবেন তা বুঝার উপায় নেই। তবুও আশাবাদী প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ভোটের প্রচার। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের চিত্র এখন এমনই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে প্রধান দুই জোটের হেভিওয়েটসহ শতাধিক প্রার্থী।
বিএনপি জোটে ধরপাকড় আর গ্রেফতারের শঙ্কা থাকলেও প্রার্থীরা বসে নেই। দল ও জোটের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে ছুটছেন। ভোটাররাও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বলছেন, ধানের শীষের পক্ষে মানুষের স্রোত নামছে। প্রার্থীরা যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই মানুষের ঢল। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। মহাজোটের নৌকার প্রার্থীরাও বসে নেই। তারাও ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট চাইছেন। তাদের দাবি, তারাও জনগণের স্বতস্ফ‚র্ত সমর্থন পাচ্ছেন। জোয়ার নৌকার পক্ষে।
চট্টগ্রাম নগরীতে গতকালও ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। জেলার সীতাকুন্ড, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সমান্তরালে বিএনপির প্রার্থীরাও গণসংযোগে নেমেছেন। শুরুতে পুলিশি ধরপাকড় ও বাধার মুখে কয়েকটি এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীরা গণসংযোগ জোরদার করতে পারেননি। তবে গতকাল প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রর্থীরা গণসংযোগ করেছেন।
তিন পার্বত্য জেলায় অনেক আগে থেকে প্রচারে নামে সরকারি দলের প্রার্থীরা। কোনোরকম প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে ধানের শীষের প্রার্থীরাও পাহাড়ে ভোটের প্রচারে সরব হয়েছেন। ধানের শীষের প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় বাধার মুখে পড়ছেন। গণসংযোগ থেকেই নেতাকর্মীদের ধরে নেয়া হচ্ছে। মহানগরী এবং জেলার প্রায় প্রত্যেক এলাকায় পুলিশি ধরপাকড় চলছে বলে অভিযোগ বিএনপি জোটের। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভয়ভীতিহীন উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি করে আসছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এসব দাবিতে কোন সাড়া মেলেনি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। বন্ধ হয়নি ধরপাকড়ও। কারাগারে যারা বন্দি আছেন তাদেরও নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্যদিকে উৎসবের পরিবেশে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থীরা। কয়েকজন প্রার্থীর পেছনে পুলিশ বাহিনীকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। নৌকার প্রচারে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা থাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দিন যতই বাড়ছে উভয় পক্ষের প্রচারে ততই গতি আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের পাঠানটুলি, মোগলটুলী ও আগ্রাবাদ এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেন। তার সাথে ছিলেন মহানগর বিএনপির নেতারা। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বলেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচন গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার নির্বাচন। একই আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফও গতকাল দিনভর গণসংযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও নৌকার প্রার্থী ডা. আফছারুল আমীন গণসংযোগ করেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল কলেজ রোড, চকবাজার ও জামাল খান এলাকায় গণসংযোগ করেন। তার সাথে যোগ দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কারাবন্দি ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে গণসংযোগ করেন তার প্রধান নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয়কারী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ারসহ বিএনপি নেতারা।
মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে গণসংযোগ করেন। ধানের শীষের প্রার্থী নুরুল আমিনও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। বিএনপি জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থী ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম তার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ছাতা মার্কার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই আসনে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীও প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। মহাজোটের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে লাঙ্গল মার্কার প্রচারণায় ব্যস্ত। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক বিএনপি নেতাদের সাথে নিয়ে ধানের শীষে ভোট চাইছেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ধানের শীষের প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীক আর জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম আপেল মার্কায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে নৌকার প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং ধানের শীষের প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান নৌকার প্রার্থী জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে ধানের শীষের ইসহাক কাদের চৌধুরী ও নৌকার প্রার্থী দিদারুল আলম দিনভর গণসংযোগ করেছেন। শুরুতে বাধা পাওয়ায় প্রচারণা চালাতে না পারলেও সীতাকুন্ডে মাঠে নেমেছেন বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরী ও ধানের শীষের এনামুল হক এনাম সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ধানের শীষ ও নৌকার পাশাপাশি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আপেল মার্কার প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। এ আসনে নৌকা পেয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী তরিকতের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ধানের শীষের পক্ষে ভোটের লড়াইয়ে আছেন বিএনপির কর্নেল (অব.) আজিমউল্লাহ বাহার। চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে বিএনপির মোস্তফা কামাল পাশা আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে নৌকার এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ধানের শীষের জসিম উদ্দিন সিকদার ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকার ড. হাছান মাহমুদ ও ধানের শীষের প্রার্থী এলডিপির নুরুল আলম প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।



 

Show all comments
  • হতদরিদ্র দীনমজুর ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৩১ এএম says : 0
    মনোনশীল রাজনিতি চর্চা আজ একেবারেই নেই| জোর করে খমতায় যেতে হবে থাকতে হবে| এই মানষীকতা আজ আমাদের সকলের মধ্যে বিরাজমান| এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে| নইলে গনতন্ত্র অর্থবহ হবেনা | সকলের সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে|| সাধারন জনগন চায় নির্ভেজাল গনতন্ত্র, ভোটাধীকার|.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ