Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফের ক্ষমতায় ফিরবে আ.লীগ

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রত্যাশা করছে, আগামী এই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর জন্য এই সরকারের আমলে হওয়া মজবুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছে ইউনিটটি। পাশাপাশি স্থানীয় সমর্থনও তাদের জয়ে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে ইআইইউ।
ইআইইউ জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিবেশ নির্ধারিত হবে আগামী ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যকার সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাবনা ঘিরে। এর পাশাপাশি রয়েছে সন্ত্রাসীদের হামলার আশঙ্কা, বিরোধীদলের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর। এসবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ নতুন সরকার নির্বাচনে ভোট দেবে। বিরোধীদলীয় বিক্ষোভ ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এখনই দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্য ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করবে। তবে এর আগ পর্যন্ত দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় থাকবে।
চলমান ও আসন্ন রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে সন্ত্রাসী হামলা। এতে করে ব্যাপক আকারে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বা প্রধান শহরগুলো টার্গেট করবে। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরও ভূমিকা রাখবে বিরোধীদলগুলোর বিক্ষোভ। বর্তমানে প্রধান অনানুষ্ঠানিক বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে, তারা খালেদার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বাতিল হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছে না। তবে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২০১৪ সালে যেক্ষেত্রে তারা নির্বাচন বর্জন করেছিল। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ধারণা, খালেদার সমর্থকরা তার মুক্তির জন্য বিক্ষোভ-মিছিল অব্যাহত রাখবে। তাদের থামাতে মোতায়েন করা হবে নিরাপত্তা বাহিনী।
ইআইইউ রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির অপর একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটকে। তাদের ধারণা, এই সংকট আরও চার থেকে পাঁচ বছর স্থায়ী হবে। এই সংকট যত দীর্ঘমেয়াদী হবে তত বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের উৎপত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
রাজনৈতিক দল বা সন্ত্রাসী ছাড়াও বিভিন্ন নিরপেক্ষ দলের বিক্ষোভের কারণেও রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র করে তুলতে পারে। যেমন চলতি বছর সড়কে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ইআইইউ জানিয়েছে, এতে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও কিছু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাদের প্রধান বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ঝানু রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের সংবিধানের লেখক কামাল হোসেন। বিশ্বজুড়ে তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। দেশে তার আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ তরুণ ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি বিরোধীদলের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করায় তা বিরোধীদলের পক্ষে কাজ করতে পারে। তারপরও আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অদ্বিতীয়।
ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অনুসারে, নির্বাচনের পর আগামী বছরগুলোতেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেই কেন্দ্রীভূত থাকবে। চীন ও ভারত ক্রমাগত হারে দেশটিতে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। তবে আসামে অবৈধ বাংলাদেশীদের অভিবাসন দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে চির ধরাতে পারে। এছাড়া তিস্তার পানি বণ্টন নিয়েও দেখা দিতে পারে বিরোধ।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হবে বাংলাদেশের। এমনটাই ধারণা ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। দেশটিতে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে চীনা সহায়তায়। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানের মতো উত্তেজনাপূর্ণই থাকবে বলে ধারণা করছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এর মূল কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট।
ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রত্যাশানুযায়ী, ২০১৯ সালে টাকার মান কমবে। সে হিসেবে আগামী বছর ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে ৫দশমিক ৬ শতাংশ। পূর্বে এই বৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইআইইউ আগামী বছরের জন্য আমদানী হার নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তাদের প্রত্যাশানুযায়ী, ব্যাপক আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টির কারণে কমবে টাকার দর। বর্তমান মার্কিন ডলারের তুলনায় ১ ডলার হচ্ছে ৮৬ দশমিক ৪ টাকার সমান। পূর্বে তা ছিল ৮৫ দশমিক ৮টাকা।
আগামী বছরগুলোতে অবকাঠামোগত প্রকল্প নির্মাণে খরচ বৃদ্ধি ও কর খাতে অনগ্রতি ২০১৮/১৯ অর্থবছরের সমপরিমাণ বাজেট ঘাটতির সৃষ্টি করবে ২০২২-২৩ সালে। বিগত পাঁচ বছরের এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ৪ শতাংশে বৃদ্ধি পেলে তা বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
ইআইইউ এ সংকট কাটাতে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আমদানি খরচ ৭৫ বেসিস পয়েন্টে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ রেপো হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এর সঙ্গে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আর্থিক ইস্যুতে কিছুটা নরম হতে পরামর্শ দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এতে করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়বে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে পুনরায় হার বৃদ্ধি করতে হবে তাদের। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রত্যাশানুযায়ী, এই উপায় অবলম্বনে ২০১৮/১৯-২০২২/২৩ অর্থবছরে গড় জিডিপি বৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। শক্ত হবে বেসরকারি খাত।
উল্লেখ্য, ইআইইউ হচ্ছে একটি ব্রিটিশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তারা ব্যবসায়িক উন্নয়ন, অর্থনীতি, রাজনৈতিক প্রবাহ ও সরকারের নীতিমালা বিশ্লেষণ করে থাকে। তারা সাধারণত চার ভাবে তথ্য সরবরাহ করে থাকে- ডিজিটাল পোর্টফোলিও, প্রিন্ট, গবেষণা প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সেমিনার। এটি দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপের একটি শাখা প্রতিষ্ঠান।



 

Show all comments
  • Apu Khandaker ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 1
    মনে করছি ভোট কাউকেই দিবোনা এখন দেখছি ধানের শীষে ভোট দেয়া ফরজ হইয়া গেছে। অত্যাচের প্রতিবাদ হোক ব্যালটের মাধ্যেমে, আর এটাই সর্বনিন্মস্তরের ঈমান।
    Total Reply(0) Reply
  • Mfs Farhad Sunny ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 0
    স্বপ্নেই দেখে যেতে হবে এইবার...বিএনপির জোয়ারে সম্ভবত, আ.লীগ চিরতরে ক্ষমতাচ্যুত হতে যাচ্ছে !!
    Total Reply(0) Reply
  • Rustom Ali ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৮ এএম says : 1
    কি ভাবে গালি দিলে আমার মনকে খুশি করতে পারবো সেটা ভাবছি। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে বাজার ঘাটে রাস্তায় ২০/২৫ জন মানুষ এক জায়গায় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করলে তার বড়জোর দুইজন পাওয়া যায় আওয়ামীলীগ সমর্থক বাকি আটজনই ছয়জন পাওয়া যায় বি এন পির এবং দুইজন আওয়ামীলীগ বি এন পি কাওকে পছন্দ করে না। এটাই সত্য এবং সঠিক। কিন্তু দেশের কিছু দালাল মিডিয়া সরকারের হয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে মিথ্যা বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে। যদি ও আমি বি এন পি করি না। কিন্তু এটাই সত্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Hafej Anwar ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে খারাপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিরোধী দলকে পুলিশ দিয়ে হামলা, মামলা গ্রেফতার করা হচ্ছে। হামলা করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • একলা পৃথিবী ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৯ এএম says : 1
    ঠিক বলছে, তাহলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন হোক, যেহেতু সরকার গঠন অাওয়ামিলীগ করবে তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন।।
    Total Reply(0) Reply
  • মুঃ জহিরুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৫০ এএম says : 1
    জনগণের ভোটে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে এটা সুস্থ মানসিকতার মানুষ চিন্তাও করে না। যদি তাই হতো তাহলে আওয়ামীলীগ ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ সালের ভোট ছাড়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাখতো না। এজন্যই তারা সেই ২০১৪ সালের মতই আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাখবে। ভোটের আয়োজন তো এটা একটা নিয়ম রক্ষা করা এবং বিশ্ববাসীকে দেখানো যে আমরা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Billal Hossain ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৫১ এএম says : 1
    ইআইইউ কত কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগের দালালি শুরু করছে এদেশে আওয়ামীলীগের ২০% সমর্থন নাই। এদেশের মানুষ যদি লীগ নেতাদের কাছে পাইতো তাহলে জোতা আর জারু দিয়া পিটাইতো
    Total Reply(0) Reply
  • Ariz Afi ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৫১ এএম says : 1
    ভোট চোরি করা ছাড়া কোন দিন ও খমতা আসতে পারবে না আর ইনশা আল্লাহ আল্লাহ bnpবিজয় করে দিবে
    Total Reply(0) Reply
  • আমি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৫২ এএম says : 1
    আওয়ামীলীগ লবিষ্ট নিয়োগ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তারা আবার ক্ষমতায় আসবে। কোন লাভ হবেনা। এইদেশের মানুষ দুঃশ্বাষন থেকে মুক্তি চায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ