Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্ঘাত-সংশয় পিছু ছাড়ছে না

চতুর্থ ধাপে ৭২৫ ইউপি ভোট কাল : আতঙ্কিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘোষণা : প্রচারণার শেষ দিনে সংঘর্ষে নিহত ১

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : চলমান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে সংঘাত পিছু ছাড়ছে না। ভোটের দিন এলেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। নানা শঙ্কা-আতঙ্ক, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই চতুর্থ ধাপের ৭২৫ ইউপিতে ভোট গ্রহণ আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটকে ঘিরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় আজই পৌঁছে যাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, এবারে দুই দিন আগেই ভোট বর্জন শুরু করেছেন আতঙ্কিত প্রার্থীরা। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নে চতুর্থ দফা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী। বুধবার বিকেলে প্রার্থীরা পৃথকভাবে নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন।  হামলা-মামলার ভয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল  খোন্দকার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি এ সময় আগামী ৭ মে’র চর্তুথ দফা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
এদিকে ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ দফায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ১৫টি ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভোটারদের হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হুমকি, নির্যাতন, হামলা-মামলাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। মুকসুদপুরের ১৬ ইউনিয়নের একাধিক স্বতন্ত্র  চেয়ারম্যান প্রার্থী এসব অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটেছে। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মর্জিনা বেগম ও মন্দির মোল্লা নামে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসি গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় দিদার হোসেন ম-ল নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হন।
এর আগে গত বুধবার রাতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাবা ফজলুল হক ও তার স্ত্রী ও দুই ভাই আহত হন। একই রাতে রাজবাড়ী সদরের দাদর্শী ইউপির ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে সংঘাত গ্রাম পর্যায়ে চলে গেছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এই নির্বাচনে অতীতে এত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম তিন ধাপের তুলনায় এ ধাপে সুন্দর ভোট হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, অপরাধী যে পর্যায়ের হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম শক্ত হাতে হ্যাল্ডেল করা হয়।
এদিকে ৭২৫ ইউপির মধ্যে ৩৩ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সব মিলিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত চার ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৫০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সংঘাত-সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৭১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিন হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ৫২২ জন। এই ধাপে আওয়ামী লীগ ৭২৪, বিএনপি ৬১৯, জাতীয় পার্টি-জাপা ১৫৬, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৫৪ ও  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৪২টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিয়েছে।
মাঠে নেমেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা : নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একইসঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দুই দিন আগে থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এবারের নির্বোচনে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে।
সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ : বৃহস্পতিবার রাতেই সব ধরনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী ভোট গ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের যেকোনো নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করার বিধান রয়েছে। আগামী ৭ মে সকাল ৮টা থেকে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এর ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ৫ মে মধ্যরাত ১২টার আগেই সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, শুক্রবার প্রথম প্রহর থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচনী প্রচার। সভা-সমাবেশ ও শোডাউন একেবারেই নিষিদ্ধ। ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টা কোনো মিছিল করা যাবে না।
বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ : নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপ-সচিব মো: সামসুল আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে ইসি। ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোট গ্রহণের পূর্ববর্তী তিন দিন থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। এছাড়া ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌযান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
চতুর্থ ধাপের পর ৫ম ধাপে ২৮ মে ৭৩৩ ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৭২৪ ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঙ্ঘাত-সংশয় পিছু ছাড়ছে না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ