পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে সংক্ষুব্ধ সংসদ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বিষয়টি উত্থাপন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও জাসদ একাংশের নেতা মইনুদ্দিন খান বাদল ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা চান তারা। পরে আইনমন্ত্রী জানান, রায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আগামী সোমবারের মধ্যে রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করা হবে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অর্গান আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। আইনসভা থেকে আমরা আইন তৈরি করি এবং কার কত পাওয়ার নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় জানাচ্ছি, কিছু দিন আগে ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪ নামে যে আইনটি পাস করলাম, যেটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে, হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি কোর্ট এটি অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাহলে আমরা যে আইন পাস করি, সেটি কি অবৈধ আইন হয়? এটি আমার জানার দরকার আছে। যে আইন পাস করি এভাবে যদি একটার পর একটা অবৈধ ঘোষণা হতে থাকে, তাহলে আইনসভার মর্যাদা থাকে না।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এই সংসদ স্বাধীন ও সার্বভৌম। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এই সংসদ গঠিত। এই জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংবিধান (সংশোধন) আইন পাস হয়। এতে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের ভোট এবং প্রেসিডেন্টের সম্মতিক্রমে কোনো বিচারপতিকে অপসারণ করা যাবে। ’৭২-এর সংবিধানেই এ বিষয়টি ছিল। সংসদের মান-মর্যাদা দেখার দায়িত্ব স্পিকারেরÑ এই সংসদ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এভাবে চললে সংসদের কোনো মান-মর্যাদা থাকবে না।
মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, আমরা এর জন্য আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা চাই। দেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া যায় না।
জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধÑ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করবে সরকার।
তিনি বলেন, আদালতের এই রায় মোটেই ‘মেইনটেনেবল’ (গ্রহণযোগ্য) না। তাই আগামী রোববার বা সোমবারে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে। এই রায় সংবিধান পরিপন্থী আপিল করলে এই রায় টিকবে না বলেও মত দেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সর্বসম্মতভাবে ষোড়শ সংবিধান সংশোধনী আইন পাস করেছি। সেখানে আমাদের মধ্যে কারোর কোনো দ্বিমত ছিল না। আজ হাইকোর্ট ডিভিশিনে রায় হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে এটি অবৈধ। যদিও পুরো রায় এখনো হাতে পাইনি।
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করে ওঠেন। স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, এটাই শেষ সিদ্ধান্ত নয়, এরপরও আপিল করা যায়। আমরা এখানে যেটি করেছিলাম, সেটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যাতে অক্ষুণœ থাকে, বিজ্ঞ বিচারপতিদের সম্মান অক্ষুণœ থাকেÑ সেজন্যই এই সংশোধনী করা হয়েছে। কিন্তু তাারা আজ বলে দিলেন এটি অবৈধ। আমি বলছিÑ এটি মোটেই অবৈধ না। তাদের কথা গ্রহণযোগ্য না।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এটি কোনোভাবেই অবৈধ নয়। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাই আপিল করলে এই রায় গ্রহণযোগ্য হবে না। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আপিল করব। আমরা শুধু আইন প্রণয়ন করি না, যে আইন করি তার শ্রদ্ধাও করি। আমরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট জাজেস রিমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলিজেস বিল-২০১৬ বিল উত্থাপন করতে গেলে আরেক দফা তোপের মুখে পড়েন আইনমন্ত্রী। বিরোধী দলের সদস্যরা হইচই করে বলতে থাকেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায়ের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই বিল আমরা উত্থাপন করতে দিতে পারি না। পরে স্পিকার বিল উত্থাপনের অনুমতি দিলে বিরোধী দল ওয়াকআউট করে। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বিরোধী দল হইচই করে ওয়াকআউট করে। পরে ৫টা ৪২ মিনিটে আবার সংসদ সদস্যরা ফিরে আসেন।
এ নিয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিল উত্থাপন করার অনুমতি দিতে পারি না। এর জবাব দিতে আইনমন্ত্রী বলেন, স্পিকার বিচারকরা অবিবেচক হতে পারেন, এই সংসদ অবিবেচক হতে পারে না। আমাকে আগে বিলটা উত্থাপন করতে দিন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের এ রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।