পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আবারও মা-বোনদের কাছে ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ বঞ্চিত হয় না। নৌকা মার্কায় ভোট চাই, জনসেবা করার সুযোগ চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই শুধু আছে একটা বোন। আমার কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, আমার শুধু একটা চাওয়া যে, যে স্বপ্নটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, আপনারাই আমার দায়িত্ব নিয়েছেন, আপনারা আমার আপনজন তাই নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আরেকটিবার দেশ সেবার সুযোগ করে দেবেন। নৌকায় ভোট দেবেন যেন দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর কখনো না থামে।
গতকাল বুধবার বিকেলে কোটালীপাড়ায় নির্বাচনী জনসভায় লাখো জনতার উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে। গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে নিজ এলাকা থেকে দলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা আসার খবরে কয়েক দিন ধরেই উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এদিন সকাল থেকেই জনসভায় যোগ দিতে বিভিন্ন বয়সের লাখো জনতা সভাস্থলে এসে হাজির হন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সভাস্থলসহ আশপাশের গোটা এলাকা। বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে সড়কপথে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে গণভবন থেকে টুঙ্গিপাড়া যাত্রা করেন এবং বেলা ২টা ১০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর দুপুরের খাবার শেষে কোটালীপাড়ার জনসভায় উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর-স্বজন তাদের যারা মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, অগ্নিসংযোগকারীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তারা যেন জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তাই আবার নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আমি সকলের সাহায্য চাই, যাকে যেখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছি তাকে সেখানেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন না থেমে যায়। আমি সারা দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই- যুদ্ধাপরাধী, খুনি, অগ্নিসন্ত্রাসীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য নৌকায় ভোট দিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরো একবার আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন।
আগামী নির্বাচনে দলের নানা প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ-সুবিধা পাবে। আমার গ্রাম আমার শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। সেইভাবে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। ব্যাপক হারে যোগাযোগব্যবস্থা করেছি, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত গ্রাম গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। এটাই হচ্ছে জাতির পিতার কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। আমি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। আগামীতেও ক্ষমতায় এলে দেশ আরো উন্নত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশের মানুষ আর না খেয়ে থাকবে না, বেকার থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না। আমরা মানুষের জন্য এসব সুবিধা এনে দিয়েছি। আজকে সবার হাতে মোবাইল ফোন। এই সরকারের কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে ২১০০ সালের পরিকল্পনা করে দিয়েছি। যেন উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর না থামে। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী পালনের জন্য নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, এ জন্য ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি আমরা। সরকারের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ঘরে বসে মানুষ টাকা উপার্জন করতে পারছে। শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সহজ হয়। আমরা শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশের মানুষও বিনিয়োগ করতে পারবে। একটি বাড়ি একটি খামার করেছি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মানুষের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মুক্তির জন্য একটি বাড়ি একটি খামার করেছি, যারা বিদেশে যাবে তাদের জমি বিক্রি করা লাগবে না, সে জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি এখান থেকে বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে যুবকরা নতুন কিছু করতে পারবে। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই কারণ লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশ আর গরিব থাকবে না। সে জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার করেছি। যেন একজন শুধু চাকরিই করতে না পারে, সে যেন আরো দশজনকে চাকরি দিতে পারে।
কোটালীপাড়ার মানুষের প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতা-মাতা-ভাই হারা আমি। আপনারা ভোট দেন বলেই আমি জনগণের সেবা করার সুযোগ পাই। আপনারাই আমার আপনজন। আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আরেকবার মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দেন।
কোটালীপাড়ার মা-বোনদের বলব, আপনাদের উন্নত জীবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। যা যা প্রয়োজন তাই করে দিচ্ছি। আপনাদের জীবন মান উন্নয়নের দায়িত্ব আমার।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নাই, শুধু আছে ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হয়ে কোটালীপাড়া আসেন চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস। তারা তরুণ প্রজন্মকে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা, দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহম্মেদ, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি আলহাজ অ্যাড. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রমবিষয়ক সসম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবির কাউসার, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ, সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, কোটালীপাড়া পৌর মেয়র হাজী কামাল হোসেন, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হুমায়ুন কবির, উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, সাবেক মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক হাজী আমীনুজ্জামান খান মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষী রানী সরকার, মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী রাফেজা বেগম, জেলা পরিষদ সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু, নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু প্রমুখ।
আজ রাজধানীতে ফেরার পথে শেখ হাসিনা ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড় (রাজবাড়ী জেলা), পাটুরিয়া ঘাট, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ (ধামরাই), সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্বাচনী পথসভা এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।