Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হয়রানি আতঙ্কে বিএনপি জোট

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫টি আসনে ভোটের প্রচার

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৩ এএম

উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ভীতিকর অবস্থা তৈরী হয়েছে। হয়রানি ও পুলিশি আতঙ্কে আছেন বিএনপির নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মীরা। এ অঞ্চলের ১৯টি আসনের ১৪টিতে নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থীরা সমানতালে ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ব্যতিক্রম ওই পাঁচটি এলাকা। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের ধরপাকড় আর সরকারি দলের হুমকি-ধমকি চলছে। এসব এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা জোরদার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তবে শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ধানের শীষের কর্মীরা মাঠে তৎপর হচ্ছেন।
আবার চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেননা ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পরিবর্তে তরিকতের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে মনোনয়ন দেয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই দলের নেতা-কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। এলাকায় ভান্ডারীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কর্মীদের জুতা-ঝাড়– মিছিল হয়েছে। প্রার্থী নিয়ে সেখানে আওয়ামী লীগ স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্ত। ফুঁসে উঠেছে বিক্ষুব্ধরা। যেকোন সময় সংঘাতের আশঙ্কায় রয়েছেন ফটিকছড়িবাসী। অন্যদিকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূইয়ার অভিযোগ বিশ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি, হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে। নির্বাচনী অফিস খুলতেও বাধা দিয়েছে পুলিশ।
উক্ত পাঁচটি আসনে নৌকার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষেই পুলিশ ভ‚মিকা রাখছে। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে আমরা তাদের প্রতিপক্ষ। এসব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না। এসব এলাকায় এখনও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশ তৈরী হয়নি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ দৌলা রেজার দাবি তারা নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালন করছেন। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখতে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী বলেন প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নিজবাড়িতে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভার শুরুতে পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে বিয়ের দাওয়াত দিতে আসা এক অতিথি ও আমার ছোটভাইসহ ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি অভিযোগ করেন তাদের কারো বিরুদ্ধে কোন পরোয়ানা ছিলনা। আটকের পর পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মিলেনি। তার অভিযোগ পুলিশ প্রতিরাতেই নেতকর্মীদের বাসায় হানা দিচ্ছে, ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বিএনপি গ্রেফতার আতঙ্কে থাকলেও সেখানে নৌকার প্রার্থী দিদারুল আলম শোডাউন করে যাচ্ছেন।
একই পরিস্থিতি চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনেও। সেখানে অনেকটা একতরফা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা আর শোডাউন করছেন নৌকার প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। বিএনপি নেতারা বলেন, সেখানে গত ১০ বছর বিএনপি প্রকাশ্যে কোন রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারেনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করলে তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রচারণার প্রথম দিনে ধানের শীষের প্রার্থী জসিম উদ্দিন শিকদার এলাকায় যান এবং তার বাড়িতে মতবিনিময় সভা করেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের এক সাবেক নেতার বাসায় ১৪ জন পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সাধারণ মানুষও আতঙ্কে আছে। রাউজানের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটারা ধানের শীষে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন।
ভয়ের পরিবেশ চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) আসনেও। মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ ব্যাপক শোডাউন করছেন। অন্যদিকে ধানের শীষের প্রার্থী এলডিপির নুরুল আলম এখনও পুরোদমে মাঠে নামতে পারেনি। বিগত ১০ বছর সেখানেও বিএনপি ছিল কোণঠাসা। এখনও নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রার্থী নুরুল আলম। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপি কর্মীরা কাজ করছে। তবে আমরা প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহবান জানাই।
ফটিকছড়িতে সর্বশেষ সোমবার রাতে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আপেল মার্কার প্রার্থীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এক্ষেত্রে পুলিশের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে একমাত্র এই আসনে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নীরব দর্শক। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ‘হত্যার উদ্দেশ্য’ তার উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পেয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী তৈয়বের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা গুলি ছোড়ে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সন্ত্রাসীরা নাজিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। তারা আমাকেও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। অভিযোগ অস্বীকার করে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, তারা নিজেরা হামলা করে এখন আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। কে কার উপর হামলা করেছে সেটা তো বাজারের মানুষ দেখেছে। পুলিশ হামলার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে।
উত্তর চট্টগ্রামের চারটি এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পরিবেশ শান্ত রয়েছে। প্রার্থীরা কোন বাধা ছাড়াই ভোটের প্রচার শুরু করেছেন। সীতাকুন্ডের ধানের শীষের প্রার্থীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে সবপ্রার্থী সমান। আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাউকেই ছাড়া দেওয়া হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ দৌলা রেজা বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষ ভ‚মিকায় আছে। সীতাকুন্ডে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই নাশকতার মামলার আসামি। প্রার্থী সভা করবেন, তবে আসামিদের নিয়ে সভা করা যাবে না। নির্বাচনের সময় সিআরপিসি স্থগিত করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলার আাসামিদের ধরতে কোন বাধা নেই। ফটিকছড়ির সহিংসতার ঘটনায় কোন অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার কিংবা অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলেও এই ঘটনায় মামলা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়িতেও ভয়ের পরিবেশ
খাগড়াছড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি, বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধা, হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের অত্যাচার, পুলিশি হামলা, বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির দলীয় অফিস খুলতে দিচ্ছে না। খুলতে গেলে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামছে। এরপরও তারা আতঙ্কে আছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিএনপি এসব মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ