Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদর্থ নামে ডাকা মারাত্মক গুনাহ

মোঃ আখতার হোসেন আজাদ | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

মানুষ মাত্রই নিজেকে অন্যের নিকটে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চায়। এটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ এটাও চায় যে অন্যে তাঁকে উপযুক্ত ও উৎকৃষ্ট ভাষায় সম্বোধন করুক। কাউকে যত প্রীতিপূর্ণ ভাষা ও আবেগময় ভঙ্গিতে সম্বোধন করা হবে এতে সম্বোধনকারীর আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের ভাব ততবেশী প্রকাশিত হবে এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হবে। মানুষকে মন্দ নামে, পশুর নামে ডাকা বা তাঁর নাম বিকৃত করে অপমানসূচক বা অশ্লীলভাবে সম্বোধন করা আমাদের সমাজে অধিক লক্ষণীয়। এটি একটি কবিরা গুনাহ এটি আমরা ভুলেই গেছি। আমাদের বর্তমান সমাজে ইসলামিক নামগুলো হাসি-তামাশার খোরাক হয়ে উঠেছে। আমরা মুসলিম হয়েও অজ্ঞতাবশতঃ এই গুনাহের কাজ করেই চলছি। কিছু উদাহরণ দিলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ঊঠবে। টিভি-রেডিওতে ‘প্্রাণ ম্যাঙ্গো ক্যান্ডি’র কল্যাণে এই নামটিকে মজা হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। যাদের নাম মোখলেস তারাও বিপাকে পড়েন। অথচ মোখলেস শব্দটি ‘এখলাস’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করা’। মফিজ একটি আরবি শব্দ যার অর্থ সফলকাম হওয়া। সাধারণত পরকাল বুঝাতেই শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ম্যাজিক টুথ পাউডারের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা এই নামটিকে নিয়ে ঠাট্টা করে থাকি। পরকালের সফলতা নিয়েই আমরা যদি ঠাট্টা করি তবে কি আমরা পরকালে সফলতা লাভ করতে পারব? সমাজে আবুল একটি অন্যতম ঠাট্টামূলক নাম। আমরা কি এই নামের মাহাত্ম্য জানি! আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর উপনাম ছিলো আবুল কাশেম যার অর্থ হলো কাশেমের পিতা। একবার ভেবে দেখা উচিত আমরা কি নিয়ে ব্যঙ্গ করছি! সর্বাধিক মজা করা হয় কুদ্দুস নামটিকে নিয়ে। অথচ এটি আল্লাহর একটি গুনবাচক নাম যার অর্থ মহাপবিত্র। কেউ যদি কেবলমাত্র কুদ্দুস বলে তাহলে তার গুনাহ হবে। কারণ এটি আল্লাহর সিফাতী নাম। বলতে হবে আব্দুল কুদ্দুস। আমরা আল্লাহর নাম নিয়েও তামাশা করছি! মমিন নাম নিয়েও যথেষ্ট ব্যঙ্গ হয় আমাদের সমাজে। কিন্তু এর শুদ্ধ উচ্চারণ হবে মুমিন। একজন পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার ব্যক্তিকেই মুমিন বলে। অথচ আমরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “কস কি মমিন” বলে নামটিকে ব্যঙ্গ করে থাকি। মহান আল্লাহতায়ালা সূরা হুজুরাতের ১১ নং আয়াতে বলেছেনঃ হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কেউ ঈমান আনার পর তাদের মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এমন কাজ করার পর তওবা না করে তারাই জালিম। 

অবশ্য সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা উপনামে সমাজে প্রসিদ্ধ এবং যা তাকে চিনতে সুবিধা করে এবং যাতে সে নিজ অন্তরে দুঃখ ও রাগ অনুভব করেনা বা তার আপত্তি থাকেনা, তাহলে উপনামে ডাকা দোষের কিছু নয়। যেমনঃ খোঁড়া নামে কেউ প্রসিদ্ধ থাকলে কোন খোঁড়াকে খোঁড়া বলে ডাকা, কেউ সমাজে কালু নামে পরিচিত থাকলে তাকে কালু নামে সম্বোধন করা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সময় এমনটি অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছে। যেমনঃ প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হোরায়রা (রাঃ) এর প্রকৃত নাম আব্দুর রহমান। অনুরূপভাবে লম্বা হাত বিশিষ্ট জনৈক সাহাবীকে যুল ইয়াদায়ন বলা হতো যার অর্থ লম্বা হাত বিশিষ্ট মানুষ । কৌতুকবশত কারো উপহাস করলে তার মনে কষ্টের আশঙ্কা থাকলে তাও নিষিদ্ধ। নির্মল এবং মনে কষ্ট না লাগে শুধু এমন কৌতুকই ইসলামে জায়েজ। জিহ্বার হিফাজত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ থেকে বর্ণিত, মহানবী সঃ বলেছেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম। আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী। (বুখারী ও মুসলিম) আবার মানুষকে পশুর সাথে সম্বোধন করে ডাকাও হারাম। কোন মানুষকে গাধা, গরু, ভেড়া, ছাগল, কুকুর, শুয়োর, পাঁঠা ইত্যাদি বলে ডাকা মারাত্মক অপরাধ। প্রথমতঃ এটি মিথ্যা কারণ সে তো মানুষই। দ্বিতীয়তঃ এতে অপরের কাছে ক্লেশ পৌঁছে থাকে (আযকার নববীঃ ৩১৯ পৃষ্ঠা)। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া প্রয়োজন মুসলমান শিশুদের কোন কোন নাম রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সঃ) বলেছেন- তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান ( রহমানের বান্দা)। এই নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হবার কারণ হলো- এতে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। যে কোনো নবীর নামে নাম রাখাও বরকতময়। যেহেতু তাঁরা ছিলেন আল্লাহর মনোনীত বান্দা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- তোমরা আমার নামে নাম রাখো। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) কুনিয়ত রেখো না। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কুনিয়ত ছিলো আবুল কাশেম। তিনি তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহীম। পবিত্র আল কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা আছে। এর থেকে পছন্দসই যে কোন একটি নাম নবজাতকের নামে রাখা যেতে পারে। কিছু কিছু নাম হারাম রাখা হারাম। যেমন- আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমনঃ আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), আব্দুস শামস ( সূর্যের উপাসক), আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস), আব্দুল কালাম (কথার দাস), আব্দুন নবী (নবীর দাস), গোলাম নবী বা গোলাম মোস্তফা ইত্যাদি
আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের পথে সঠিকভাবে চলার তাওফীক দান করেন, আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ