Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এএফপি’র প্রতিবেদন : ধরপাকড়ের মধ্যেই প্রচার শুরু

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১৮ পিএম

বিরোধী দলের কোনো প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নেই। শ’ শ’ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য অগ্রাহ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এত কিছুর পরও সোমবার নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধিত। তারা হয়তো ভোট দিবেন হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদলগুলোকে; নতুবা বেহালদশায় থাকা বিরোধী দলকে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনার রেকর্ড চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকাতে আশাবাদী বিএনপি প্রচারাভিযান শুরুর প্রাক্কালে বলছে, দলটির প্রায় ২ হাজার সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কয়েকজন প্রার্থী সহ যারা আটক হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। তবে বিরোধী দল বলছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমানো ও ভোটারদেরকে আতঙ্কিত করতে হাসিনা ও তার দল নির্বাচন-পূর্ব ‘নীলনকশা’ অনুসরণ করছে।
বিএনপি মুখপাত্র রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সরকার একটি একপেশে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। এসব গ্রেফতার করা হয়েছে মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য যাতে তারা ভোট দিতে না যায়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেফতারের ফলে বিরোধী দল আরো দুর্বল হয়েছে, যেই দলটির প্রবীণ নেত্রী খালেদা জিয়া ইতিমধ্যেই দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই নেত্রীর সমর্থকরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ মূলত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল। কারণ দলটির আশঙ্কা ছিল ওই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিএনপি বয়কট করায় হাসিনা বিনা চ্যালেঞ্জে পুনঃনির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের নিন্দা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

এবার অবশ্য বিরোধী দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভোটের মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকলেও তারা এখনো প্রধানমন্ত্রী পদে কারও নাম ঘোষণা করেনি। তবে ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিরোধী জোট। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে তারা জনসমর্থনের ওপরই ভরসা করছে। রিজভী আহমেদের ভাষ্য, ‘যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তাহলে আমরা জিতবো।’
তবে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শাসক দলও। অনেক নিরপেক্ষ জরিপে দেখা গেছে, হাসিনার প্রতিও অনেক সমর্থন রয়েছে। তার এক দশকের শাসনামলে দেশে রেকর্ড অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তার প্রশাসন দেশের রুগ্ন অবকাঠামো উন্নয়নেও অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছে। শাসক দলের মুখপাত্র জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে, মানুষ আমাদের পক্ষে ভোট দেবে। কারণ আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমরা সফলভাবে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রেখেছি।’
এতে বলা হয়, তবে শেখ হাসিনা (৭১) নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনার ভার অর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যা দেশটির দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক প্রথার ব্যত্যয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর ফলে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে সরকারি ক্ষমতা সীমিত রাখার যেই নিয়ম তার ইতি ঘটেছে। এর ফলে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে প্রচারের মাঠ একেবারেই সমতল নয়।’ সমালোচকরা বলেন, শেখ হাসিনা কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ধাবিত হয়েছেন। তিনি ষোল কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ভিন্নমত ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে কঠোর আইন ব্যবহার করেছেন। জুলাইয়ে বিশাল ছাত্র আন্দোলনের পর হাজার হাজার মানুষ আটক হন। এদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রখ্যাত একজন আলোকচিত্রী। যাকে আটক ও পেটানোর অভিযোগে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া অথবা শেখ হাসিনা। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা ৩০ বছর পুরনো। তবে আশির দশকে তারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মিত্র ছিলেন। তারা একযোগে তৎকালীন সামরিক শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ