পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবীর করা একটি রিট আবেদনে দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন। আদালত বলেছেন, এই সংশোধনী সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার যে বিধান রয়েছে, তার পরিপন্থী। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অসদাচরণের জন্য উচ্চ আদালতের কোনো বিচারককে কীভাবে অপসারণ করা যাবে, সে প্রক্রিয়া নির্ধারণে আরেকটি আইনের খসড়ায় ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে। রায়ে আদালত বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদেরা ভোট দিতে পারেন না। তাঁরা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সাংসদদের সব সময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁরা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আছে। রায়ে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে এই রিট আবেদন হয়। প্রাথমিক শুনানির পর হাই কোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভম্বর রুল দেয়। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের উপর গত বছর ২১ মে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত মতামত দিতে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি এই শুনানিতে অ্যামিচি কিউরি হিসেবে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। ১৭ দিন শুনানির পর গত ১০ মার্চ আদালত এ বিষয়ে রায়ের দিন ঠিক করে দিয়েছিল। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে অংশ নেন। সংবিধান রুলের ওপর শুনানিতে আদালতের পরামর্শদাতা (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে দেওয়া মতামতে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। জাতীয় সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। তাই এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি গণ্য করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেছিলেন, বিচারপতিদের অপসারণের প্রক্রিয়া আগে ছিল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে। ষোড়শ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সংসদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট এই অপসারণ করবেন। আর সংসদ তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টকে সুপারিশ দেবে। আইন হওয়ার পরে আইনে যদি কোনো রকম ব্যত্যয় হয়, দেখা যায় সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক- তখনই কারণ উদ্ভব ঘটবে এটা চ্যালেঞ্জ করার। অন্যদিকে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানিতে বলেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামো। যেহেতু ‘মূল কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে সেহেতু ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থি। এই ক্ষমতাটা যদি সংসদের হাতে দেয়া হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ হতে পারে। তাই এই ক্ষমতাটা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়াটা যৌক্তিক হবে না।
রায় স্থগিত চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ
বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে যাবে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করবে। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ।... এই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে রোববারই আমরা চেম্বার আদালতে যাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।