পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে গত রোববার। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দও করে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতীক বরাদ্দের পর আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। এই প্রচারণার মধ্য দিয়েই শুরু হচ্ছে নির্বাচনী মাঠের লড়াই। দেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার বড় দুই দলের নেতৃত্বে দুটি জোট মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অবতীর্ণ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপক্ষে মাঠ ও ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর এবারই প্রথম ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রায় তিনশ’ আসনেই মূল লড়াইয়ে থাকছেন এ দুই জোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে লড়ছেন ২৭২ জন। আর ধানের শীষে লড়ছেন ২৯৮ জন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে দেখা যায়, ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৮টি নিজেদের জন্য রেখে অবশিষ্ট ৪২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে শরিকদের। অন্যদিকে বিএনপি নিজেদের জন্য ২৪২টি আসন রেখে শরিকদের ছেড়েছে ৫৮টি। মহাজোটের প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৫৮টি বাদে ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের দিয়েছে ১২টি আসন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) ৩টি, জাসদ-আম্বিয়া ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) ১টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি। মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে দিয়েছে ২৯টি এবং যুক্তফ্রন্টকে ছেড়ে দিয়েছে ৩টি আসন। এ হিসেবে দুইটি আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ২৪২টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। তাদের দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি এবং ২০ দলীয় জোটকে ৩৯টি আসন দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে ৭টি, আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডিকে ৪টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে ৪টি এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৪টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি, কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ৩টি, খেলাফত মজলিসের ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি, পিপিবি ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং লেবার পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। বিএনপি জোটের প্রার্থীদের মধ্যে ২৯৮জন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ লড়বেন তার নিজের দলের প্রতীক ছাতা নিয়ে এবং কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এ হিসেবে এই দুই আসনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের কোন প্রার্থী থাকছে না। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে কেবল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন দুটি করে আসনে ভোট করছেন।
গত কয়েক দিনে আলোচনা-পর্যালোচনা করে দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে দুই জোটে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেককে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তেও কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে আছেন। এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২৯ আসনে সমঝোতার কথা বলা হলেও দলটি ১৭৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
প্রচার-প্রচারণা শুরু: প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীদের আর ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনী তফসিল অনুয়ায়ি আজ থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। যদিও এই একদিনও অনেকে অপেক্ষা করেননি। গতকালই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর নেমে পড়েন প্রচারণায়। অনেকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চালিয়েছেন গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি। কেউ কেউ আবার প্রার্থীদের হাতে আগে থেকে তৈরি করে রাখা প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছেন। নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও দেখা গেছে দলের প্রধান, প্রার্থী ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার সাটানো হয়েছে। চায়ের দোকানে, হাট-বাজার, গ্রামে-গঞ্জে, মানুষে-মানুষে, নারী-পূরুষ, কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সবার মুখে মুখে এখন নির্বাচনী আলোচনা। কোথাও প্রার্থীদের পক্ষে আলোচনা বা কোথাও বিপক্ষে। কেউ তুলে ধরছেন প্রার্থীর অতীত কার্যক্রম তো কেউ তুলে ধরণে নতুন প্রার্থী নির্বাচিত হলে কি হবে। এভাবেই চলবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত।
নতুন জোটের দিকে নজর: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করার পর এবারই সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী হাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্রদলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করে আসলেও সেই সরকার এবং তাদের ভাষায় অসমতল মাঠেই ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তবে দলটির সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা দিয়েছে সরকার বিরোধী একটি বড় জোট গঠন করা। যেখানে দেশের বরেণ্য সব রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের সেই জোট গঠনের পর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হওয়ায় এবার প্রচার মাঠে নজর থাকছে সব দলের।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে চলা আলোচনা-সমালোচনার একটি চিত্র বোঝা যাবে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে। প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মাঝে।
যদিও নির্বাচনের মাঠে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সাংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনি স্বাধীন, আপনি নিরপেক্ষ, আপনি বিচারক, বিচারকের মাইন্ড আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে। সিইসি বলেন, নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে করবেন, সেটি আপনি আপনার মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করবেন। রাগ অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আমরা আতঙ্ক নয়, আস্থার পরিবেশ চাই। একেবারে নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করতে চাই, আমাদের কাছে কোনও দল কিংবা মত নেই। সংবিধান, জাতি, রাজনৈতিক দল ও ভোটারের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনেরর জন্য কমিশন দায়বদ্ধ। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।