পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়লেন এম মোরশেদ খান। ‘ধানের শীষ’ প্রতীক হাতে পেলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান। মনোনয়ন ও প্রার্থিতা চ‚ড়ান্ত করা নিয়ে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দোটানার মধ্যে শেষ মুহূর্তে এসেই মনোনয়নে পরিবর্তন এলো বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে। এর ফলে এখন ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ-বায়েজিদ) আসনটি।
প্রতিবারই ভোটের মওসুম এলেই চট্টগ্রামে একটি কথায় সরস আলোচনা হয়- “ভোট অইল দে কাট্টল পাতা। যিবা ছিঁডাইলে ছয়ল অয়ল ছুডি আইয়ে খাইবার লাই। তার মানি টেঁয়া”। (ভোট হলো কাঁঠাল পাতা। যেটি ছিঁটিয়ে দেয়া হলে ছাগলরা ছুটে আসে খেতে। এর মানে হলো টাকা)। বাদ পড়া ওই হেভিওয়েটের ভোটের কৌশলকে ঘিরেই কথাটা প্রচলিত। তবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রামের নেতারা আশাবাদী, এবারের নির্বাচনে ৮ আসনের মতো জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির ঘাঁটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণজোয়ারেই বিজয়ী হবে ‘ধানের শীষ’।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবীণ নেতা এম মোরশেদ খানের বার্ধক্যের কারণে ভোটের দৌঁড়ে তার শারীরিক অসামর্থ্য এবং গত ১০ বছরে নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিতি- এই দু’টি বিষয় বিবেচনা করেই দলের হাইকমান্ড তাকে মনোনয়ন না দেয়ার ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাছাড়া দলেও তার দীর্ঘদিন যাবৎ প্রায় নিষ্ক্রীয়তা, জনবচ্ছিন্ন থাকা এবং কর্মীদের মামলা-হুলিয়া, জেল-জুলুমের কঠিন সময়েও তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বলতে গেলে নির্বিকার থাকার বিষয়টিও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। এ কারণে মোরশেদ খানের মনোনয়নের বিরুদ্ধে এলাকায় কর্মীরা মিটিং করেও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। এমনকি দলের কর্মীরা গণপদত্যাগের হুমকি দেন। এরপরই বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপি কেন্দ্র থেকে চিঠি পান আবু সুফিয়ান এবং এরশাদ উল্লাহ। তাছাড়া বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের প্রার্থী সেখানে পরাজিত হওয়ার পেছনে মোরশেদ খান সমর্থিত ‘ঘরের শত্রু’দের দায়ী করা হয়। যা আবু সুফিয়ানের মনোনয়নের পক্ষে যুক্তির একটি প্লাস পয়েন্ট।
অন্যদিকে দলের তরুণ প্রজন্মের নেতা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি (নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন কারাবন্দী থাকায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) আবু সুফিয়ানের প্রতি দলের তৃণমূল কর্মীদের মাঝে জোরালো সমর্থন রয়েছে। ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার মনোনয়নের পক্ষে অবস্থান জানান দেন। গত দশ বছরে চট্টগ্রামে দল এবং দলীয় কর্মীদের দুঃসময়ে আবু সুফিয়ান মাঠে সক্রিয় ছিলেন। কারাবরণও করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাঠ জরিপেও তিনি এগিয়ে ছিলেন। এসব দিক বিবেচনা করে দলের হাইকমান্ড গত রোববার উক্ত আসনে মোরশেদ খানের পরিবর্তে সুফিয়ানের মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করে। গতকাল তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ধানের শীষের প্রতীক পান। আর একই প্রতীকে দলের অপর দুই প্রার্থী এম মোরশেদ খান এবং এরশাদ উল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগরীর একাংশ এবং দক্ষিণ জেলার বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ-বায়েজিদ) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা-কর্মী, সমর্থক ছাড়াও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে ‘ধানের শীষে’ মোরশেদ খান আউট এবং আবু সুফিয়ানের ইন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। এ বিষয়ে গতকাল (সোমবার) এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বলছেন ধনকুবের ও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মোরশেদ খানের উক্ত এলাকায় একটি মজবুত অবস্থান রয়েছে। কিন্তু নতুন মুখ আবু সুফিয়ান সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে। তবে দলের সক্রিয় কর্মীদের সমর্থনে এগিয়ে। মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহর ঐক্যবদ্ধ সমর্থন, অবস্থান যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে আবু সুফিয়ানের বিজয়ের ব্যাপারে দল জোরালো আশাবাদী।
নির্বাচনী এলাকার কর্মীরা জানান, একসময় ‘গুরু’ মোরশেদ খানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু গত ৫ বছরে দলের আন্দোলনের মাঠে এবং কর্মীদের মামলা-হুলিয়া, জেল-জুলুম হয়রানিসহ বিপদে-আপদে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে মোরশেদ খানের সাথে আবু সুফিয়ানসহ অনেকেরই দূরত্ব তৈরি হয়। তিনি দীর্ঘ সময় বিপদগ্রস্ত কর্মীদের খোঁজ-খবর রাখেননি।
তা সত্তে¡ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি জোটের এবার প্রার্থী হবেন ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান এ বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বিল খেলাপি হওয়ার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হলে তিনি পিছিয়ে পড়েন। আর মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যান সুফিয়ান। গত শনিবার মোরশেদ খানের মনোনয়নপত্র ইসির আপিলে বৈধ হলেও দলের হাইকমান্ড তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবু মনোনয়ন নিশ্চিত করতে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বসে থাকেন। অবশেষে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে যান। মনোনয়ন ভাগ্য খুলে আবু সুফিয়ানের।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোরশেদ খানের রাজনৈতিক জীবন শুরু জাতীয় পার্টি। ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ। ১৯৮৬ সালে তিনি উক্ত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে ভিড়েন। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির এমপি হন। ‘১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও তিনি জয়ী হন। এরপর তিনি বিএনপি সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। তার পরিবর্তে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এরশাদ উল্লাহ। কিন্তু মোরশেদ খানের অসহযোগিতা শুধুই নয়; প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলানোর কারণে বিএনপিকে সেখানে হারতে হয় বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ধারণা।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মোরশেদ খানকে বাদ দিয়ে আবু সুফিয়ানকে ‘ধানের শীষে’ মনোনয়নের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন এবারের নির্বাচন হবে মার্কা নির্বাচন। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলে সেখানে ‘নৌকা’ মার্কায় জাসদ একাংশের প্রার্থী মাঈনুদ্দীন খান বাদলের পরাজয় অনিবার্য। আবু সুফিয়ান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কর্মীদের দুর্দিনে সবসময়ই পাশে ছিলাম। দলের দুঃসময়ে মাঠে সক্রিয় থেকেছি। তাই দল ও জোট আমাকে মূল্যায়ণ করে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এই নির্বাচন। দল ও জোটের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে সাথে নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনবেন।
আবু সুফিয়ানের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন
চট্টগ্রাম-৮ আসনে ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় গতকাল (সোমবার) বাদ আসর নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় খতমে কোরআন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন বোয়ালখালী শাকপুরা আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা এহসান উল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইসকান্দর মির্জা, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম (আবু), বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক মান্নান, সিনিয়র সহ-সভাপতি জানে আলম প্রমুখ। এছাড়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।