Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাঠে থাকলেও ভোটে নেই চট্টগ্রামে লড়াইয়ে বিএনপির

মনোনয়ন বঞ্চিতরাও

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভোটে না থাকলেও মাঠে থাকছেন চট্টগ্রামের মনোনয়ন বঞ্চিত ও বিকল্প প্রার্থীরা। মনোনয়ন লড়াইয়ে থাকলেও আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সুযোগ দিতে গিয়েও দলীয় মনোনয়ন পাননি কেউ কেউ। দলের নির্দেশে মূল প্রার্থীর বিকল্প হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ধানের শীষের টিকিট না পেয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনেই সরে দাঁড়ান বেশ কয়েকজন।
মনোনয়ন দৌঁড়ে ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি এমন নেতাদের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে এখন সর্বত্রই জোর আলোচনা। প্রার্থী না হলেও ভোটের লড়াইয়ে তাদের সবাইকে পাশে পেতে চান ধানের শীষের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, মান অভিমানের সুযোগ নেই। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেয়ার যে চ‚ড়ান্ত লড়াই সে লড়াইয়ে কেউ ঘরে বসে থাকবেন না।
দলের চেয়ারপার্সন দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কিংবদন্তি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। আগামী নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া তার বন্দিদশা থেকে মুক্তির কোন বিকল্প নেই। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই শ্বাসরুদ্ধকর এবং সংঘাতময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। আর তাই এ লড়াইয়ে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির কাক্সিক্ষত বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে এককাতারে সামিল হতে হবে। চট্টগ্রামের ১৯টি সংসদীয় আসনে বিএনপি ও তাদের শরিক দলের সব নেতাকে একযোগে মাঠে নামার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান জোটের নেতারা।
যারা ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের প্রতিও কড়া নির্দেশনা রয়েছে। নিজ নিজ এলাকার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে বলা হয়েছে তাদের। এ নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে প্রার্থীরা ছুটছেন সাবেক এমপি ও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ঘরে-বাড়িতে। তাদের সমর্থক নেতাকর্মী এবং অনুসারীদেরও নিজ নিজ পক্ষে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এসব তৎপরতার ফলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের কেউ ভোটের লড়াই থেকে দূরে থাকবেন না বলে জানান দলের নেতারা।
শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ পাননি বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সিটি মেয়র ও প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মামলা জটিলতায় তিনি এবং তার পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়।
ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সেখান থেকে বারবার নির্বাচিত বিরোধী দলীয় হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাও। আসনটি ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীককে ছেড়ে দেয়ায় তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন জেনারেল ইবরাহীম। তিনি বিএনপির সব নেতাকে সাথে নিয়েই ভোটের মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন।
ঋণখেলাপির কারণে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় বিএনপির অপর ভাইস চেয়ারম্যান কারাবন্দী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর। একই কারণে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে প্রার্থীতা বাতিল হয় গিয়াস কাদেরের পুত্র ব্যবসায়ী সামির কাদের চৌধুরীর। পরে তিনি প্রার্থিতা ফেরত পেলেও সে আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হন বিএনপির জসিম উদ্দিন সিকদার। পিতা-পুত্রের ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফজলুল কাদের চৌধুরী পরিবারের কোন সদস্য ভোটে রইলো না। চট্টগ্রামের অন্তত তিনটি আসনে এ পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন এ পরিবারের সদস্য মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। এবার এ পরিবারের সদস্যদের ভোটের মাঠে চান বিএনপির প্রার্থীরা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও দলের মনোনয়ন পাননি। তিনি চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়াখালী) আসন থেকে একাধিকবার বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই আসনে ২০০৮ সালের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ঋণখেলাপের কারণে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। কারাবন্দি এ নেতার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন তার সহোদর ইসহাক চৌধুরী। প্রার্থীর পক্ষে আসলাম চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া। ঋণখেলাপের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। বান্দরবানে বিএনপি নেত্রী ম্যামা চিং এবং রাঙ্গামাটিতে দীপেন দেওয়ান মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তারাও ভোটের মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল এবার মনোনয়ন পাননি। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক এনামের সাথে তার দ্ব›দ্ব থাকলেও কলহ বিরোধ ভুলে ভোটের মাঠে নামার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্র থেকে।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা নূরী আরা সাফা, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, মো. সালাহউদ্দীন, চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে মোস্তফা কামাল বাবুল দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। জোটের শরিক এলডিপির নুরুল আলমের সমর্থনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী আবু আহমেদ হাসনাত ও শওকত আলী নূর। অন্যদিকে বাঁশখালী আসন থেকে বিএনপির সমর্থনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন এলডিপির অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী ও পটিয়া আসনে নাহিদা আকতার। আবদুল্লাহ আল নোমানের সমর্থনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন স্বতন্ত্র জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। নির্বাচন থেকে সরে গেলেও এসব নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান প্রার্থীরা।



 

Show all comments
  • We Love "Mohammedan Sporting Club" ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
    ৩০০ আসনেই ধানের শীষের প্রার্থী জালিমের কারাগারে বন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdulla Al Mamun ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪২ এএম says : 0
    চট্টগ্রাম ৫আসনে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মীর হেলাল উদ্দিন, এস এম ফজু, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা সহ সবাই ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী মেজর ইব্রাহীম বীরপ্রতীকের পক্ষে হয়ে প্রচারণা চালাবেন ইনশা-আল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sharif Ahmed Pintu ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    তিনশত আসনের প্রার্থী "বেগম জিয়া " আর আমাদের প্রতিক "ধানের শীষ"
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৫ এএম says : 0
    এভাবেই ঐক্যবদ্ধভাবে সারাদেশে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দেশমাতার মুক্তি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ