পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া -৬ ও ৭ এই তিন আসনে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় দিতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও তিন কমিশনার বাতিল বহাল রাখার পক্ষে রায় দিলেও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার মনোনয়নপত্র বৈধতা দেয়ার রায় দেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে স্থাপিত এজলাসে গতকাল শনিবার সকাল ও দুপুরে দুই দফা শুনানী শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার সব আসনের মনোনয়নপত্র বাতিলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেয়া আদেশই বহাল রাখা হয়। এর ফলে কোনো আসনেই ভোট করার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে জাজামেন্ট দিয়েছেন, তা ফেয়ার জাজমেন্ট। অন্য কমিশনাররা তার মনোনয়নপত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
গত রোববার তিন আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরপরই দলীয়ভাবে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়। গতকাল শনিবার তার আপিল আবেদনের ওপর সকাল ও দুপুর দুই দফা শুনানি হয়। প্রথম দফা শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র আর্টিকেল ১২/ডি- ওয়ান অনুয়ায়ী বাতিল করেছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন বাতিল করলেও কারাগারে থাকা অবস্থায় এ আইন লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন যে গ্রাউন্ডে মনোনয়ন বাতিল করেছে সেই গ্রাউন্ডের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। এই আপিল অবশ্যই বৈধ রায়ের যোগ্য। সুতরাং মনোনয়ন বাতিলের কোনো সুযোগ নেই।
শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এরপর নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে রায় দেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। এই কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলো। অপর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীও একই যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের যুক্তি
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, আমাদের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে যা বলেছেন তা হলো, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কেউ অপরাধ করেন, যেমন- মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কেউ প্রচারণা শুরু করল বা কাউকে মারধর করল বা ভোটকেন্দ্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করল। অর্থাৎ, নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করল। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার কোনো প্রসঙ্গে কথা বলা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সেখানে থেকে তিনি কীভাবে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করবেন?
আইনজীবীরা বলেন, তারা বিষয়টি কমিশনের সামনে এনেছেন। আইনজীবীরা বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ১২/১ (ঘ) অনুসারে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এই ধারা নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত। শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা যা দেখিয়েছেন, সে অনুসারে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল সঠিক হয়নি। সে কারণে কমিশনের কাছে আপিল করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলেন, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রাখেন। যে আদেশ রিটার্নিং কর্মকর্তারা দিয়েছেন, আইনের দৃষ্টিতে তা বৈধ নয়। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে যথাযথ আদেশ দেবে। এবং রিটার্নিং কর্মকর্তারা যে আদেশ দিয়েছেন, কমিশন তা বাতিল করবে। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নেবেন। কোন কোন অপরাধের কারণে একজন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না? এখনো নির্বাচনের প্রচারণা হয়নি। তাই এ-সংক্রান্ত অপরাধের কোনো সুযোগ নেই। এখনো খালেদা জিয়া মার্কা নিয়ে রাস্তায় নামেননি। কাজেই তিনি এমন কোনো অন্যায় বা অপরাধ করেননি যেখানে নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান দিয়ে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়, যোগ করেন খালেদার আইনজীবীরা। আইনজীবীদের মতে, রিটার্নিং কর্মকর্তা যে আদেশ দিয়েছেন এখন তার ওপরই কমিশন আদেশ দিতে পারবে। এর বাইরে যাওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নাই।
এবিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনটি ৪-১ ভোটে নামঞ্জুর করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ও অপর কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার আপিলের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শনিবার নির্বাচন কমিশনে অন্য দিনের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এদিন, প্রথমবারের মতো পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও দায়িত্বপালন করে।
আপিল আবেদনের শুনানি শেষে খালেদার আবেদন নির্বাচন কমিশন নামঞ্জুর করলে ততৎখানিক এক প্রতিক্রিয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যবিস্টার খন্দাকার মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে জাজামেন্ট দিয়েছেন, তা ফেয়ার জাজমেন্ট। অন্য কমিশনাররা তার মনোনয়নপত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পদক খন্দকার মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগ ছিল-খালেদা জিয়া নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ করেন নাই। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তিনটা আপিল মঞ্জুর করেছেন। তাই খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আর কোনো আইনগত বাধা নাই।
তিনি বলেন, গত তিনদিন আমরা দেখেছি, আপিল শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কখনো সিইসি, কখনো অন্যান্য কমিশনাররা রায় ঘোষণা করেছেন। তারা কমিশনের সকলের পক্ষ থেকেই রায় ঘোষণা করেছেন। সবাই ধারণা করেছিল মাহবুব তালুকদারে রায় সবার রায়। এটা সবার রায়। সেই রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ করেছেন। তিনি বলেন, একবার রায় ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর, দ্বিতীয়বার রায় ঘোষণার কোনো সুযোগ নাই। গত তিনদিনের আপনারা দেখেছেন। দ্বিতীয়বার রায় ঘোষণা হয়েছে? নির্বাচন কমিশনের এখানে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। মাহবুব তালুকদার সাহেব যে জাজমেন্ট দিয়েছেন, মাহবুব তালুকদারের জাজমেন্ট লিগ্যাল জাজমেন্ট, ফেয়ার জাজমেন্ট। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আইনগত এক্সামিন করে উচ্চ আদালতে যাওয়া যায় কি না, এ বিষয়ে কনভিন্স হলে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা বিশ্বাস করি উচ্চ আদালত তার মনোনয়নপত্র বৈধ করবেন। বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসন থেকে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা গত ২ ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। খালেদতা জিয়া রিটার্নিং কর্মকর্তারা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে নির্বাচন কমিশন শুনানি করে চার-এক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদার আবেদন নামঞ্জুর করেন। খালেদা জিয়ার প্রার্থী হতে এখন উচ্চ আদালতে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
আজ রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ দিন। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বারাদ্দ। আর ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।