Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী দলগুলো মহাজোটের মনোনয়নবঞ্চিত

‘আ.লীগের আচরণ বিমাতাসুলভ’

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৫ এএম

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলো ইসলামী দলগুলো। গত ০৭ ডিসেম্বর মহাজোটের পক্ষ থেকে ২৯৬টি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। ৪টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা স্থগিত রয়েছে। ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪০টি আসন দলীয় নেতাদের দিয়ে বাকি ৫৬টি আসন মহাজোটের অন্যান্য শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে মহাজোটের প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) পেয়েছে ৩৭টি আসন। ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা পেয়েছে ১৩টি আসন। এর মধ্যে ওয়ার্কাস পার্টি ৫, জাসদ ইনু ৩, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) ২, তরিকত ফেডারেশন ২ এবং জাসদ (আম্বিয়া) ১টি আসন পেয়েছে। এছাড়া মহাজোটে সদ্য যোগ দেয়া যুক্তফ্রন্ট পেয়েছে ৩টি আসন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এবার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। ভোটের মাঠে নানান সমীকরণ এবং হিসাব-নিকাশ করে আওয়ামী লীগ ইসলামী দলগুলোর সাথে এক ধরনের সখ্য গড়ে তোলে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপকভাবে আলোচিত হেফাজতে ইসলামীর সাথে বর্তমান সরকারীদলের সুসম্পর্ক গড়ে উঠার বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে আলোচনার শুরু হয়। ১৪দলীয় জোটের শরিকদের আপত্তি সত্বেও সরকার তথা আওয়ামী লীগ হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর মহাসমাবেশে হামলার পর সরকারের সাথে তাদের বৈরী সম্পর্কের শুরু। তবে হেফাজতের সাথে এই তিক্ত সম্পর্ক বেশিদিন গড়াতে দেয়নি সরকার। হেফাজতের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের মাধ্যমে সরকার তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার সুসম্পর্কের নজির স্থাপন করে। আর এর প্রতিদান হিসেবে হেফাজতের আয়োজনে আল্লামা আহমদ শফি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করেন এবং ওই সমাবেশ থেকে থাকে কওমী জননী উপাধি দেয়া হয়। হেফাজতে ইসলামীর সাথে সরকারের এই সম্পর্কের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গণে শুরু হয় নানান আলোচনা। এরমধ্যে হেফাজতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আলোচনার মূখ্যবিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক অঙ্গণে জোর আলোচনা শুরু হয় যে হেফাজতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে ১০টি আসনে নির্বাচন করবে এ শর্তে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের সমঝোতা হয়েছে। হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও এ বিষয়ে নানা ভাবে কথা বলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে একটি আসনও জোটেনি।
অন্যদিকে সর্বশেষ ১২টি ইসলামিক দলের ৫২ জন নেতা গত ৬ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করে। দলগুলোর মধ্যে ছিল ইসলামী ঐক্যজোট (নেজামী), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (জাফরুল্লাহ খান), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, আশেকিন আওলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ইসলামী জোট, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শর্তহীন সমর্থন দিয়েও এসব ইসলামী দল একটি আসনেও মনোনয়ন পায়নি।
১৪দলীয় জোটের বাইরে মহাজোটের প্রধান শরিকদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫৮টি দল নিয়ে একটি বৃহত্তর জোটের ঘোষনা দেন। এই জোটে দুটি নিবন্ধিত দলসহ মোট ৫৮টি দল ছিল। সংখ্যার বিচারে এটাই দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোট। এই জোটে দুটি দল জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং দুটি জোট জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)। এর মধ্যে প্রথম দুটি দল নিবন্ধিত। ইসলামী মহাজোটে আছে ৩৪টি ইসলামি দল আর বিএনএতে আছে ২২টি দল। সব মিলিয়ে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত দল ছিল ৫৮টি। আর এর মধ্যে ইসলামীদল ছিল ৩৫টি। এ জোটের প্রধানদল জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ৩৭টি আসনে মনোনয়ন পেলেও এখানে ইসলামী দলের কোন নেতা মনোনয়ন পাননি।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, আমরা স্বতন্ত্রভাবে ইসলামী রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। মৌলিকভাবে আমরা ১৪দলীয় জোট বা মহাজোটে যোগ দেইনি এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য কোন আসনও দাবি করিনি। তাই মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আমাদের কোন ক্ষোভ নেই।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশের আমীর ও সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা জাফরুল্লাহ খান এ বিষয়ে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কয়েকটি আসনের বিষয়ে আলোচনা করি। ওই আলোচনায় তিনি আমাদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে ভাল আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশায় ছিলাম যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোকে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। নূন্যতম দু’একটি আসনেও ইসলামী দলগুলোকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগ বিমাতা সুলভ আচরণ করেছে। #



 

Show all comments
  • Mohammad Muhib ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫১ এএম says : 0
    এক্কেবারে ঠিক আছে, উচিত শিক্ষা পাইছে। মুফতি আমিনী (রঃ) মারা গেলেন গৃহবন্দি থাকা অবস্থায়, সেই আমিনী সাহেবের ছেলে ও তাদের দল গেছে নৌকায় চড়তে। আরে মিয়া যারা শায়খুল হাদিস (রহঃ), মুফতি আমিনী (রঃ), জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব, মুফতি ইজহার সাহেব ও মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব'দের জেল খাটালেন তাদের কাছে গেছেন এমপি হওয়ার আশায়।
    Total Reply(0) Reply
  • সান মুন ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫১ এএম says : 0
    এজন্য মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি ফখরুক আহমদের ভাষায় বলতে চাই: ‘তোরা চাসনে কিছু কারও কাছে খোদার মদদ ছাড়া তোরা পরের ওপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া’
    Total Reply(0) Reply
  • S. M. Sumon ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    সার্টিফিকেট দিছে তো।
    Total Reply(0) Reply
  • Showkat Hussain Monju ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    Valo hoise, aro tel maruk Awamilig ke.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mosharraf ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 0
    মহাজোটের মতো একটি জুলুমবাজ দলে ইসলামি দলগুলোর কখনই যাওয়া ঠিক হয়নি। আমার মনে হয় তারা দুকুলই হারাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Hasib Rahman ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধ ছিতনায় গড়ে উঠক, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ঠিক কাজই করেছেন,আলেম বা ইসলামি দলকে মনয়ন না দেয়ে,
    Total Reply(0) Reply
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:৪৬ এএম says : 0
    হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল নয়,পত্রিকায় লিখেছে হেফজতি ১০ নেতা,,আমি এর তিব্র নিন্দা জানাই। আর যারা নমিনেশন আনার চেষ্টা করেছিলো তা অন্য কোন ইসলামিক রাজনৈতিক দল থেকে আবেদন করেছিলো।হেফাজত থেকে নয়।তবে আওয়ামলীগ নমিনেশন না দিয়ে মনে হয় ভালো করেছেন,
    Total Reply(0) Reply
  • md. yasin khan sadi ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:৩১ এএম says : 0
    একদম পুরাই উচিত শিক্ষা হইছ। অতীত ভুলে গেলে এমনই হয়, ইসলামী দলগুলোর উচিত পরস্পর সমঝতা করে বিবাদ ভুলে গিয়ে এক জোট হওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:৪৯ এএম says : 0
    ইসলাম শান্তি ইসলাম মুক্তি ইসলাম শিফা, আর ইসলামই সত্যিকারের রাজনীতি। হত্যা খোন আর গুম নিপাত ..............................
    Total Reply(0) Reply
  • H.M.M.Karim ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৩৬ এএম says : 0
    আওয়ামী সরকার ভাল করে জানে যারা সার্টিফিকেটের জন্য শাফলা চত্বরকে অস্বীকার করছে তারা এমপিহলে অকৃতজ্ঞ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ