Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লড়াইয়ের অপেক্ষা মার্কা হাতে

ভোটের মাঠ সাজানোর কৌশল দু’পক্ষের বঞ্চনার ক্ষোভে আ.লীগে গৃহদাহ

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দুই প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা যার যার নির্বাচনী প্রতীক বা মার্কা হাতে নিয়ে সরাসরি লড়াইয়ের অপেক্ষায়। নির্বাচনী এলাকার ভোটার তথা জনগণও প্রার্থীদের ভোটের ক্যানভাস তথা প্রচারণার অপেক্ষা করছেন। কেননা বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিনটি আসনসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৯ আসনে মহাজোট-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থিতার টেনশন শেষ হয়েছে। এবার ভোটের মাঠ সাজানোর কৌশল দু’পক্ষের। আজ (রোববার) মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর আগামীকালই (সোমবার) প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হবে। তখন নৌকা আর ধানের শীষ হাতে নিয়ে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীগণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটবেন। সরগরম হবে দিনরাত ভোটের প্রচারণায়। এ মুহুর্তে তৃণমূল কর্মীদের কদর বেড়েছে।
জাতীয় নির্বাচন মানেই কৌশলের খেলা। কৌশলের লড়াইয়ে জিততে চায় উভয় পক্ষ। আর চাটগাঁর রাজনীতি সচেতন প্রায় অর্ধকোটি ভোটার প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভোটের কার্যক্রম নিরবে, তবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেই সঙ্গে এখানে সেখানে আপামর জনতার মাঝে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে এপিঠ ওপিঠ আলোচনা জমে উঠেছে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের সবকটি আসনেই প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পালা শেষ হয়েছে। মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্ট উভয়পক্ষই প্রার্থীতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েছে। দুদিকেই রয়েছে প্রবীণের অভিজ্ঞতার কদর আর নবীনের কেতন উড়ানোর চমক। নবীন প্রবীণ মিলে দুই জোটই মনে করছে তারা যোগ্যতর প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পেরেছেন।
তবে মনোনয়ন এবং চূড়ান্তকরণ নিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভ-অসন্তোষ ও হতাশায় গৃহদাহ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও ইতোমধ্যে নিজেদের ভেদাভেদ ও মতানৈক্য ভুলে নৌকার প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করার আহবান জানান। তবে তা সত্তে¡ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের মঞ্চে এবং মাঠে নামানো যাচ্ছে না। এনিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট চট্টগ্রামে অধিকাংশ আসনে একাধিক বিকল্প প্রার্থী দিয়ে তাদের মধ্য থেকে ভোটের মাঠে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য নেতাকে চূড়ান্ত প্রার্থিতায় নিয়ে এসেছে। এতে করে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের অভ্যন্তরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষোভ অসন্তোষ নেই। ফলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে বিএনপি। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর তিনটিসহ জেলার ১৬ আসন এবং তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বিএনপির নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত এবং তা ঘোষণাও করা হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৮(চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম মোরশেদ খান। বিল খেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিলের পর ইসিতে আপিলে তিনি তার প্রার্থিতা ফেরত পান। এ খবরে এলাকায় সর্বস্তরের তৃণমূল বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট কর্মীদের উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। এ আসনে বিকল্প প্রার্থী ছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। ধানের শীষে একাধিকবারের নির্বাচিত এমপি মোরশেদ খানের সাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মহাজোটের শরিক জাসদ একাংশের নেতা মাঈনুদ্দিন খান বাদল।
চট্টগ্রাম ১(মীরসরাই) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মুখোমুখি হচ্ছেন বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী নূরুল আমিন। তিনি মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপি জোটের চমক ধানের শীষের প্রার্থী নতুনমুখ কর্ণেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার। মহাজোটের নৌকা নিয়ে লড়ছেন তরিকতের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত পেয়ারুল ইসলাম আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে।
চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাফা কামাল পাশা। তিনি লড়ছেন মহাজোটের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে। চট্টগ্রাম-৪(সীতাকুন্ড) আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম। তার মুখোমুখি বিএনপি জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে প্রার্থিতা ফেরত পাননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পাচ্ছেন কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতিক। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লড়ছেন এ আসনে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন নতুনমুখ প্রার্থী জসিম উদ্দিন শিকদার। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) আসনেও বিএনপি প্রার্থী নতুনমুখ কুতুব উদ্দিন বাহার। তিনি মুখোমুখি হচ্ছেন মহাজোটের আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদের। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে আগেই চূড়ান্ত হয় উভয় জোটের মনোনয়ন। নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আর ধানের শীষের ডা. শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রের চট্টগ্রাম ১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এবারও মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপির হেভিওেয়ট প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান লড়ছেন আওয়ামী লীগৈর ডা. আফছারুল আমীন আর চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মুখোমুুখি আওয়ামী লীগের এম এ লতিফ। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বিএনপির নতুন চমক এনামুল হক এনাম। তিনি লড়ছেন নৌকার শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনেও হেভিওয়েটের লড়াই। আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মুখোমুখি বিএনপির সরোয়ার জামাল নিজাম।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থী এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমদ বীর বিক্রমের মোকাবেলায় মহাজোটের নজরুল ইসলাম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আ ন ম সামশুল ইসলাম মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের আবু রেজা নদভীর। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির আরেক হেভিওয়েট জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মুখোমুখি আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলায়ও উভয়জোটের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। এতে রাঙ্গামাটি আসনে মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের মুখোমুখি ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট মনি স্বপন দেওয়ান। বান্দরবানে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর লড়ছেন বিএনপি জোটের সাচিং প্রু জেরির সাথে। খাগড়াছড়িতে মহাজোটের আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মুখোমুখি এবারের নতুন মুখের চমক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপিধানের শীষ পেয়েছেন শহিদুল ইসলাম ভূইয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ